Saima Wazed News: শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ বর্তমানে দিল্লিতে বসবাস করছেন। তিনি সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। এই উচ্চ পদে নিযুক্ত হওয়ার কারণেই তিনি দিল্লিতে অবস্থান করছেন।
সায়মা ওয়াজেদ ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে WHO দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি এই পদে নিযুক্ত হওয়া প্রথম বাংলাদেশি এবং দ্বিতীয় নারী। WHO দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সদর দপ্তর দিল্লিতে অবস্থিত, যেখান থেকে ১১টি দেশের ২ বিলিয়নেরও বেশি মানুষের স্বাস্থ্য বিষয়ক আন্তর্জাতিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
সায়মা ওয়াজেদের এই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয় ১ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে, যখন WHO দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সদস্য দেশগুলি তাকে এই পদের জন্য মনোনীত করে। পরবর্তীতে ২৩ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত WHO এক্সিকিউটিভ বোর্ডের সভায় তার নিয়োগ নিশ্চিত করা হয়।
সায়মা ওয়াজেদ পেশায় একজন মনোবিজ্ঞানী। তিনি দীর্ঘদিন ধরে অটিজম ও অন্যান্য স্নায়বিক বিকাশজনিত ব্যাধির ক্ষেত্রে কাজ করে আসছেন। ২০১২ সাল থেকে তিনি বাংলাদেশের জাতীয় স্নায়বিক বিকাশজনিত ব্যাধি বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপার্সন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও তিনি ২০২২ সাল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে অটিজম ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কারিগরি বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত আছেন।
IND vs PAK Highlights: ঐতিহাসিক জয়ের পর এশিয়া কাপে নতুন রেকর্ড গড়লেন হরমনপ্রীতরা
সায়মা ওয়াজেদ WHO-এর মহাপরিচালকের মানসিক স্বাস্থ্য ও অটিজম বিষয়ক উপদেষ্টা এবং WHO-এর মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা প্যানেলের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য কৌশলগত পরিকল্পনার প্রধান উপদেষ্টা, জাতীয় অটিজম ও স্নায়বিক বিকাশজনিত ব্যাধি বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপার্সন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক ফোকাল পার্সন হিসেবেও কাজ করেছেন।
সায়মা ওয়াজেদ যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিতে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগঠনিক নেতৃত্বে ডক্টরেট ডিগ্রির প্রার্থী।
তিনি মানসিক স্বাস্থ্যকে একটি দীর্ঘদিন অবহেলিত ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করে এর উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চান।
তিনি একটি কাঠামোগত জীবনব্যাপী পদ্ধতির মাধ্যমে নারী ও শিশুদের জন্য সুনির্দিষ্ট হস্তক্ষেপ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করেছেন।
তিনি জনস্বাস্থ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উদ্ভাবনের জন্য প্রযুক্তির ব্যবহারকে উৎসাহিত করতে চান।
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রচার করা।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবতা নাকি অলীক কল্পনা?
দেশগুলিকে কার্যকর মহামারী প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়ার জন্য সমগ্র সমাজকে সম্পৃক্ত করতে উৎসাহিত করা।
স্বাস্থ্যের সকল নির্ধারক মোকাবেলায় আঞ্চলিক ও বহু-খাতভিত্তিক সহযোগিতা ও অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি করা।
জলবায়ু ও পরিবেশগত পরিবর্তনের প্রতি স্বাস্থ্য খাতের সহনশীলতা বৃদ্ধি করা।
স্বাস্থ্য অবকাঠামো পরিকল্পনায় প্রান্তিক ও দুর্বল গোষ্ঠীর অনন্য চাহিদাগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া।
সায়মা ওয়াজেদ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা। তার পিতা এম.এ. ওয়াজেদ মিয়া একজন বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী ছিলেন এবং বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন এবং ভারতীয় পরমাণু শক্তি কমিশনে কর্মরত ছিলেন। ওয়াজেদ মিয়া ৬৭ বছর বয়সে দীর্ঘ রোগভোগের পর মৃত্যুবরণ করেন এবং বাংলাদেশের রংপুর জেলার পীরগঞ্জে তার পৈতৃক গ্রামে সমাহিত হন।
সায়মা ওয়াজেদের স্বামী খন্দকার মাসুর হোসেন মিতু বাংলাদেশের একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য। তবে তার সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য জনসম্মুখে প্রকাশিত হয়নি।
সায়মা ওয়াজেদের ভাই সজীব ওয়াজেদ জয় বাংলাদেশের একজন ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সদস্য এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
Loksabha 2024: কেন একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল না বিজেপি? [রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ]
সায়মা ওয়াজেদের WHO দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে নিয়োগ বাংলাদেশ ও সমগ্র অঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে:
সায়মা ওয়াজেদের বিশেষজ্ঞতা ও অভিজ্ঞতা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে মানসিক স্বাস্থ্য সেবার মান ও প্রাপ্যতা উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
তার বিশেষ দক্ষতার কারণে এই অঞ্চলে অটিজম ও অন্যান্য স্নায়বিক বিকাশজনিত ব্যাধি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সেবার মান উন্নয়ন হতে পারে।
তার নিয়োগ বাংলাদেশ ও অন্যান্য দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলির মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে।
একজন নারী হিসেবে এই গুরুত্বপূর্ণ পদে তার নিয়োগ অঞ্চলের অন্যান্য নারীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একজন বাংলাদেশি নারীর এই উচ্চ পদে নিয়োগ দেশের ভাবমূর্তি উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে।
তার প্রযুক্তি ব্যবহারের উপর জোর দেওয়ার ফলে অঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবায় ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পেতে পারে।
তার নেতৃত্বে অঞ্চলের দেশগুলিতে সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা কার্যক্রম জোরদার হতে পারে।
ভবিষ্যৎ মহামারী মোকাবেলায় অঞ্চলের দেশগুলির প্রস্তুতি উন্নত হতে পারে।
1. WHO দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে ১১টি দেশ রয়েছে: বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, উত্তর কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড এবং তিমোর-লেস্তে।
2. এই অঞ্চলে প্রায় ২ বিলিয়ন মানুষ বাস করে, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৫%।
3. WHO দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সদর দপ্তর ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অবস্থিত।
4. সায়মা ওয়াজেদ এই পদে নিযুক্ত হওয়া দ্বিতীয় নারী এবং প্রথম বাংলাদেশি।
5. তিনি ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ থেকে ৫ বছরের জন্য এই পদে নিযুক্ত হয়েছেন।
WHO-এর মহাপরিচালক ডা. টেড্রস আধানম গেব্রেয়েসাস সায়মা ওয়াজেদের নিয়োগ প্রসঙ্গে বলেন, “ডা. সায়মা ওয়াজেদ তার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও বিশেষজ্ঞতা নিয়ে WHO দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে যোগদান করছেন। তার নেতৃত্বে আমরা এই অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন ও সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করি।”
সায়মা ওয়াজেদ নিজে তার নিয়োগ প্রসঙ্গে বলেন, “আমি এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেয়ে অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করছি। আমি আশা করি, আমার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা ব্যবহার করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্য ও সুস্থতা উন্নয়নে অবদান রাখতে পারব।”
সায়মা ওয়াজেদের WHO দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে নিয়োগ বাংলাদেশ ও সমগ্র অঞ্চলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। তার বিশেষজ্ঞতা ও অভিজ্ঞতা এই অঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বিশেষ করে মানসিক স্বাস্থ্য, অটিজম ও স্নায়বিক বিকাশজনিত ব্যাধির ক্ষেত্রে তার অবদান উল্লেখযোগ্য হতে পারে। তবে, তার সামনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে, যেমন অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবার মানের বৈষম্য দূর করা, সীমিত সম্পদের মধ্যে কার্যকর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা এবং ভবিষ্যৎ মহামারী মোকাবেলায় প্রস্তুতি গড়ে তোলা।
সায়মা ওয়াজেদের এই নিয়োগ শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, সমগ্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের জন্য একটি সুযোগ। তার নেতৃত্বে এই অঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা আরও উন্নত ও শক্তিশালী হবে বলে আশা করা যায়। তবে, এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য সকল দেশের সরকার, স্বাস্থ্য পেশাজীবী ও জনগণের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। আগামী দিনগুলিতে সায়মা ওয়াজেদের নেতৃত্বে WHO দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের কার্যক্রম কীভাবে এগিয়ে যায় তা লক্ষ্য করার বিষয়।
মন্তব্য করুন