২০২৪ সালের দুর্গা পুজোয় মহাষ্টমীর সন্ধিপুজো হবে সকালে। ১১ অক্টোবর শুক্রবার সকাল ৪:১৪ থেকে ৫:০২ টার মধ্যে সন্ধিপুজো অনুষ্ঠিত হবে। এই বছর মহাষ্টমীর পুষ্পাঞ্জলির শুভ সময়কাল হবে সকাল ৬:৩১ থেকে দুপুর ১২:০৭ পর্যন্ত।
দুর্গা পুজোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন হল মহাষ্টমী। এই দিনে মা দুর্গার আরাধনা সবচেয়ে বেশি করা হয়। মহাষ্টমীর দিনে সন্ধিপুজো ও কুমারী পুজো অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধিপুজো হল অষ্টমী তিথি শেষ হওয়া এবং নবমী তিথি শুরু হওয়ার সন্ধিক্ষণে করা পুজো। এই সময় মা দুর্গা চামুণ্ডা রূপে অসুর চণ্ড ও মুণ্ডকে বধ করেছিলেন বলে বিশ্বাস করা হয়।
মহাষ্টমীর দিন সকাল থেকেই ভক্তরা পুষ্পাঞ্জলি দিতে শুরু করেন। পুষ্পাঞ্জলি হল ফুল দিয়ে মা দুর্গার পূজা করা। এর জন্য বেলপাতা, পদ্মফুল, জবা ফুল ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। পুরোহিত মন্ত্র পাঠ করেন এবং ভক্তরা মাথা নত করে মায়ের আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন।
২০২৪ সালের দুর্গা পুজোর তারিখগুলি এইরকম:
মহাষষ্ঠী – ৯ অক্টোবর, বুধবার
মহাসপ্তমী – ১০ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার
মহাষ্টমী – ১১ অক্টোবর, শুক্রবার
মহানবমী – ১২ অক্টোবর, শনিবার
বিজয়া দশমী – ১৩ অক্টোবর, রবিবার
মহাষ্টমীর দিন সকাল থেকেই পুজো মণ্ডপগুলিতে ভক্তদের ভিড় জমতে শুরু করে। অনেকে উপবাস করে থাকেন এবং পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার পর প্রসাদ গ্রহণ করেন। সন্ধিপুজোর সময় ১০৮টি প্রদীপ জ্বালানো হয় এবং বিশেষ আরতি করা হয়। এরপর কুমারী পুজো অনুষ্ঠিত হয় যেখানে ৯ বছরের কম বয়সী মেয়েদের মা দুর্গার প্রতিরূপ হিসেবে পুজো করা হয়।
কলকাতার বিখ্যাত দুর্গা পুজোগুলিতে মহাষ্টমীর দিন লক্ষ লক্ষ দর্শনার্থী ভিড় করেন। বাঘা যতীন, মুহাম্মদ আলি পার্ক, কুমারটুলি সরবজনীন, বাগবাজার সরবজনীন প্রভৃতি পুজোগুলিতে দর্শনার্থীদের ঢল নামে। অনেকে রাত জেগে পুজো দেখতে বের হন।
পশ্চিমবঙ্গের বাইরেও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দুর্গা পুজো উৎসবের মতো পালিত হয়। মুম্বাই, দিল্লি, বেঙ্গালুরু প্রভৃতি শহরে বাঙালি সম্প্রদায় বড় আকারে পুজোর আয়োজন করে থাকেন। বিদেশেও লন্ডন, নিউইয়র্ক, সিডনি প্রভৃতি শহরে প্রবাসী বাঙালিরা দুর্গা পুজো পালন করেন।
দুর্গা পুজো শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি বাঙালি সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই সময় শিল্প, সাহিত্য, সংগীত সবকিছুর সমন্বয়ে একটি সাংস্কৃতিক মহোৎসবের রূপ নেয়। পুজো মণ্ডপগুলিতে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। গান, নাচ, নাটক, আবৃত্তি প্রভৃতি পরিবেশন করা হয়।
দুর্গা পুজোর সময় পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়ে। লক্ষ লক্ষ পর্যটক কলকাতা ও অন্যান্য শহরে ভিড় করেন। হোটেল, রেস্তোরাঁ, পরিবহন খাতে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। শিল্পী, কারিগর, ব্যবসায়ীরা এই সময় ভাল আয় করতে পারেন। ২০২৩ সালে দুর্গা পুজোর সময় পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ৪৫,০০০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছিল বলে অনুমান করা হয়।
দুর্গা পুজোর সময় পরিবেশ দূষণের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। বিসর্জনের সময় নদী দূষণ রোধে সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। পুজো কমিটিগুলিকে পরিবেশবান্ধব উপাদান ব্যবহার করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। প্লাস্টিক ব্যবহার কমানোর জন্যও সচেতনতা বাড়ানো হচ্ছে।
২০২৪ সালের দুর্গা পুজোও নিঃসন্দেহে আনন্দ ও উৎসবের মধ্য দিয়ে পালিত হবে। মহাষ্টমীর দিন সকাল থেকেই ভক্তরা পুষ্পাঞ্জলি দিতে ভিড় করবেন। সন্ধিপুজোর সময় মণ্ডপগুলিতে উৎসবের মেজাজ থাকবে। সারা বাংলা জুড়ে মা দুর্গার আরাধনায় মেতে উঠবে মানুষ। শারদীয়ার এই আনন্দ উৎসব সকলের জীবনে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনুক – এই প্রার্থনা রইল।