Sani Puja rituals and materials: শনি দেবতার আশীর্বাদ লাভের জন্য শনি পূজা একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান। এই পূজার মাধ্যমে শনির কুপ্রভাব থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং জীবনে সুখ-সমৃদ্ধি আসে বলে বিশ্বাস করা হয়। শনি পূজার জন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম ও উপকরণ রয়েছে যা মেনে চলা প্রয়োজন।শনি পূজার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত দিন হল শনিবার। সকালে স্নান করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে পূজা শুরু করতে হয়। পূজার জন্য একটি কাঠের বেদি বা আসন প্রস্তুত করে তার উপর কালো রঙের কাপড় বিছিয়ে নিতে হবে। এরপর শনি দেবতার মূর্তি বা ছবি স্থাপন করতে হবে। যদি মূর্তি বা ছবি না থাকে তাহলে একটি সুপারি বা শিলানোড় রাখা যেতে পারে।
পূজার প্রধান উপকরণগুলি হল – কালো তিল, সরিষার তেল, নীল ফুল, কালো বস্ত্র, লোহার পেরেক, কালো উড়ি ডাল ইত্যাদি। এছাড়া ধূপ, দীপ, নৈবেদ্য, ফল, মিষ্টি প্রভৃতি সাধারণ পূজার উপকরণও লাগবে। শনি দেবতাকে কালো রঙের জিনিস খুব প্রিয় বলে মনে করা হয়, তাই পূজায় কালো রঙের জিনিসের ব্যবহার বেশি থাকে।পূজা শুরু করার আগে সংকল্প নিতে হবে। এরপর শনি দেবতাকে আবাহন করে পঞ্চামৃত দিয়ে স্নান করাতে হবে। তারপর ফুল, চন্দন, সিঁদুর দিয়ে পূজা করতে হবে। ধূপ-দীপ জ্বালিয়ে নৈবেদ্য নিবেদন করতে হবে। শনি মন্ত্র জপ করতে হবে। সবশেষে আরতি করে পূজা শেষ করতে হবে।
Chhath Puja 2024: প্রাচীন সূর্য উপাসনার উৎসব, তাৎপর্য এবং শুভেচ্ছা বার্তা
শনি মন্ত্র হল – “ওঁ শং শনৈশ্চরায় নমঃ”। এই মন্ত্র ১০৮ বার জপ করা উত্তম। অনেকে শনি স্তোত্র পাঠও করে থাকেন। শনি পূজার সময় কালো তিল ও সরিষার তেল দিয়ে প্রদীপ জ্বালানো হয়। শনি দেবতাকে সরিষার তেল অর্পণ করা হয়। কালো উড়ি ডাল দিয়ে মালা তৈরি করে অর্পণ করা যেতে পারে।শনি পূজার সময় উপবাস করা ভালো। অন্তত পূজার দিন নিরামিষ আহার গ্রহণ করা উচিত। পূজার পর প্রসাদ হিসেবে কালো তিলের লাড্ডু বা পায়েস খাওয়া যেতে পারে। দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের খাবার দান করাও পুণ্যের কাজ বলে বিবেচিত হয়।শনি পূজার ফলে নানা উপকার পাওয়া যায় বলে বিশ্বাস করা হয়। শনির কুপ্রভাব কমে যায়, জীবনের বাধা-বিপত্তি দূর হয়। কর্মক্ষেত্রে উন্নতি হয়, ব্যবসায় লাভ হয়। রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তি মেলে। মামলা-মোকদ্দমা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যায়। শত্রু পরাজিত হয়। সর্বোপরি মনের শান্তি ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়।
শনি পূজার সময় কিছু বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন। পূজার সময় মন একাগ্র রাখতে হবে। বিশুদ্ধ মন নিয়ে পূজা করতে হবে। লোভ-লালসা ত্যাগ করে শুধু শনি দেবতার আশীর্বাদ কামনা করতে হবে। নিয়মিত শনি পূজা করলে ধীরে ধীরে ফল পাওয়া যায়। একবার পূজা করেই চমৎকার ফল আশা করা উচিত নয়।শনি পূজার সময় কিছু নিষেধাজ্ঞা মেনে চলা উচিত। যেমন – পূজার সময় লোহার জিনিস ব্যবহার করা যাবে না। কারণ শনি দেবতা লোহাকে অপছন্দ করেন বলে মনে করা হয়। পূজার সময় তেল মাখা যাবে না। মদ্যপান ও মাংস ভক্ষণ নিষিদ্ধ। অশুচি অবস্থায় পূজা করা যাবে না। মহিলারা মাসিক চলাকালীন পূজা করবেন না।শনি পূজার জন্য বিশেষ কোনো দিন-ক্ষণ নির্ধারণ করা থাকলে সেই সময়ে পূজা করা উত্তম। তবে প্রতি শনিবার সকালে বা সন্ধ্যায় শনি পূজা করা যেতে পারে।
অমাবস্যার দিন শনি পূজা করা বিশেষ ফলপ্রসূ বলে মনে করা হয়। কৃষ্ণপক্ষের শনিবার শনি পূজার জন্য উত্তম সময়।শনি জয়ন্তীর দিন শনি পূজা করলে বিশেষ ফল পাওয়া যায় বলে বিশ্বাস করা হয়। এছাড়া শনি দশা, সাড়ে সাতি বা ঢাইয়া চলাকালীন নিয়মিত শনি পূজা করা উচিত। জ্যোতিষীর পরামর্শ অনুযায়ী শনি গ্রহ শান্তির জন্যও এই পূজা করা যেতে পারে।শনি পূজার সময় শনি মন্দিরে যাওয়া উত্তম। কিন্তু বাড়িতেও শনি পূজা করা যায়। বাড়িতে পূজা করার সময় পূর্ব বা পশ্চিম দিকে মুখ করে বসতে হবে। উত্তর দিকে মুখ করে শনি পূজা করা যাবে না। পূজার স্থান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।শনি পূজার সময় শনি যন্ত্র স্থাপন করা যেতে পারে। এটি একটি বিশেষ যন্ত্র যা শনির কুপ্রভাব দূর করতে সাহায্য করে বলে মনে করা হয়।
শনি যন্ত্র পূজা করলে শনির আশীর্বাদ পাওয়া যায়। এছাড়া শনি কবচ ধারণ করাও উপকারী।শনি পূজার পর প্রসাদ বিতরণ করা উচিত। প্রসাদ হিসেবে কালো তিলের লাড্ডু, চিনি মিশ্রিত কালো তিল, কালো উড়ির ডাল ইত্যাদি দেওয়া যেতে পারে। গরিব ও অসহায় মানুষদের খাবার দান করাও পুণ্যের কাজ। এতে শনি দেবতা সন্তুষ্ট হন বলে মনে করা হয়।শনি পূজার সঙ্গে দান-ধ্যানও করা উচিত। কালো গরু, মহিষ, ছাগল ইত্যাদি প্রাণীকে খাবার দেওয়া যেতে পারে। কালো কম্বল, কালো ছাতা, কালো জুতা ইত্যাদি দান করা যায়। তেল, লবণ, সরিষা দান করাও ভালো। শনিবার দান-ধর্ম করলে বিশেষ পুণ্য অর্জন হয় বলে বিশ্বাস করা হয়।শনি পূজার সময় শনি স্তোত্র পাঠ করা যেতে পারে। এতে শনি দেবতা সন্তুষ্ট হন বলে মনে করা হয়। শনি স্তোত্র পাঠে মানসিক শান্তি পাওয়া যায়।
শনি দেবের প্রণাম মন্ত্র: জেনে নিন কীভাবে বড়ঠাকুরকে খুশি করবেন
শনি গায়ত্রী মন্ত্র জপ করাও উপকারী। নিয়মিত শনি চালিশা পাঠ করলেও শনির কৃপা লাভ করা যায় বলে বিশ্বাস করা হয়।শনি পূজার পর শনি দেবতার কাছে প্রার্থনা করতে হয়। নিজের মনোবাসনা জানাতে হয়। কিন্তু অন্যের অমঙ্গল কামনা করা উচিত নয়। শুধু নিজের ও পরিবারের মঙ্গল কামনা করতে হয়। শনি দেবতার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হয়। তাঁর আশীর্বাদ কামনা করতে হয়।শনি পূজার মাধ্যমে শনির কুপ্রভাব দূর হয় বলে বিশ্বাস করা হলেও এর সঙ্গে সৎকর্মও করতে হয়। শুধু পূজা করলেই হবে না, জীবনে সততা ও ন্যায়নিষ্ঠা বজায় রাখতে হবে। পরোপকার করতে হবে। তাহলেই শনি দেবতার আশীর্বাদ পাওয়া যাবে। শনি পূজার মাধ্যমে জীবনে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসবে।