Saraswati Puja 2025 auspicious time: ২০২৫ সালের সরস্বতী পুজো আসছে ৩রা ফেব্রুয়ারি, রবিবার। এই দিনটি বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২০ মাঘ। বিদ্যার দেবী মা সরস্বতীর আরাধনার এই পবিত্র দিনটি শিক্ষার্থী, শিল্পী ও জ্ঞানপিপাসুদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আসুন জেনে নেওয়া যাক ২০২৫ সালের সরস্বতী পুজোর বিস্তারিত তথ্য।
পুজোর দিনক্ষণ ও তিথি
২০২৫ সালের সরস্বতী পুজোর প্রধান তথ্যগুলি নিম্নরূপ:
বিষয় | বিবরণ |
---|---|
তারিখ | ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (রবিবার) |
বাংলা তারিখ | ২০ মাঘ, ১৪৩১ |
তিথি | বসন্ত পঞ্চমী |
তিথি আরম্ভ | ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১২:২০ |
তিথি শেষ | ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৫ |
পুজোর শুভ সময়
সরস্বতী পুজোর জন্য নির্ধারিত শুভ মুহূর্ত:
- পুজা মুহূর্ত: সকাল ৭:১২ থেকে দুপুর ১২:২৫
- বসন্ত পঞ্চমী মধ্যাহ্ন ক্ষণ: দুপুর ১২:৪০
সরস্বতী পুজোর তাৎপর্য
সরস্বতী পুজো হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। এই দিনে বিদ্যার অধিষ্ঠাত্রী দেবী সরস্বতীর আরাধনা করা হয়। মা সরস্বতী জ্ঞান, শিক্ষা, কলা ও সংগীতের প্রতীক। তাই এই দিনে শিক্ষার্থীরা বিশেষভাবে মায়ের আশীর্বাদ কামনা করে।সরস্বতী পুজোর তাৎপর্য শুধু ধর্মীয় নয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই উৎসব বসন্তের আগমনী বার্তা বহন করে। প্রকৃতিতে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়, যা নতুন শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জনের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।
পুজো পালনের রীতি-নীতি
সরস্বতী পুজো পালনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ রীতি-নীতি:
- প্রস্তুতি: পুজোর আগের দিন সন্ধ্যায় দেবীর মূর্তি বা ছবি স্থাপন করা হয়।
- পোশাক: পুজোর দিন হলুদ রঙের পোশাক পরা হয়। হলুদ রঙ বসন্তের প্রতীক।
- পুজো সামগ্রী: হলুদ ফুল (যেমন গাঁদা), মিষ্টি, ফল, ধূপ-ধুনো, চন্দন ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।
- বিশেষ উপকরণ: বই, খাতা, কলম, বাদ্যযন্ত্র ইত্যাদি দেবীর সামনে রাখা হয় আশীর্বাদের জন্য।
- অঞ্জলি: সকাল থেকেই ভক্তরা উপবাস থেকে দেবীর উদ্দেশ্যে অঞ্জলি প্রদান করেন।
- হাতে-খড়ি: এই দিনে ছোট শিশুদের প্রথম অক্ষর লেখার অনুষ্ঠান করা হয়।
বিভিন্ন অঞ্চলে উদযাপন
সরস্বতী পুজো ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্নভাবে উদযাপিত হয়:
- পশ্চিমবঙ্গ: সবচেয়ে বড় আকারে উদযাপিত হয়। স্কুল-কলেজে বিশেষ আয়োজন করা হয়।
- বিহার ও ঝাড়খণ্ড: “বসন্ত পঞ্চমী” নামে পালিত হয়। হলুদ রঙের প্রাধান্য থাকে।
- উত্তর ভারত: “শ্রী পঞ্চমী” নামে পরিচিত। এই দিনে বসন্তের আগমন উদযাপন করা হয়।
- দক্ষিণ ভারত: “আয়ুধ পুজা” নামে পালিত হয়। শিল্পীরা তাদের যন্ত্রপাতি পুজো করেন।
সরস্বতী পুজোর মন্ত্র
সরস্বতী পুজোর সময় ব্যবহৃত কিছু গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্র:
- মূল মন্ত্র:
ॐ ऐं सरस्वत्यै नमः
(ওঁ অইং সরস্বত্যৈ নমঃ) - পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র:
या कुन्देन्दुतुषारहारधवला या शुभ्रवस्त्रावृता
या वीणावरदण्डमण्डितकरा या श्वेतपद्मासना।
या ब्रह्माच्युतशंकरप्रभृतिभिर्देवैः सदा वन्दिता
सा मां पातु सरस्वती भगवती निःशेषजाड्यापहा॥(যা কুন্দেন্দুতুষারহারধবলা যা শুভ্রবস্ত্রাবৃতা
যা বীণাবরদণ্ডমণ্ডিতকরা যা শ্বেতপদ্মাসনা।
যা ব্রহ্মাচ্যুতশংকরপ্রভৃতিভির্দেবৈঃ সদা বন্দিতা
সা মাং পাতু সরস্বতী ভগবতী নিঃশেষজাড্যাপহা॥)
সরস্বতী পুজোর ঐতিহাসিক গুরুত্ব
সরস্বতী পুজোর ঐতিহ্য অত্যন্ত প্রাচীন। হিন্দু পুরাণে উল্লেখ আছে যে এই দিনে ব্রহ্মা সৃষ্টির কাজ শুরু করেছিলেন। তাই এই দিনটি নতুন শুরুর প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।প্রাচীন ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় গুরুকুলে শিক্ষার্থীদের প্রবেশের দিন হিসেবেও এই দিনটি নির্বাচন করা হত। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা জ্ঞান অর্জনের পথে মা সরস্বতীর আশীর্বাদ লাভ করত।
আধুনিক সমাজে সরস্বতী পুজোর প্রাসঙ্গিকতা
বর্তমান যুগে সরস্বতী পুজোর গুরুত্ব আরও বেড়েছে। শিক্ষা ও প্রযুক্তির এই যুগে জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই সরস্বতী পুজো শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি জ্ঞান ও শিক্ষার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর একটি মাধ্যম।আধুনিক সমাজে সরস্বতী পুজোর প্রাসঙ্গিকতা:
- শিক্ষার গুরুত্ব: এই উৎসব শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে।
- সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য: প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতির সাথে যুব প্রজন্মের যোগসূত্র স্থাপন করে।
- সামাজিক সংহতি: বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষ একত্রিত হয়ে উৎসব উদযাপন করে।
- কলা ও সংস্কৃতির উন্নয়ন: শিল্পীরা তাদের কলাকৌশলের প্রদর্শনী করে।
- পরিবেশ সচেতনতা: বসন্তের আগমনের মাধ্যমে প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জাগ্রত করে।
২০২৫ সালের সরস্বতী পুজো আগামী ৩রা ফেব্রুয়ারি। এই দিনটি শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি জ্ঞান, শিক্ষা ও সংস্কৃতির উৎসব। আসুন আমরা সবাই মিলে এই দিনটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করি এবং মা সরস্বতীর আশীর্বাদ প্রার্থনা করি। জ্ঞান ও বিদ্যার আলোকে আলোকিত হোক আমাদের জীবন, সমৃদ্ধ হোক আমাদের সমাজ ও দেশ।