Sarfira Movie Review: সিনেমা জগতে অক্ষয় কুমার এমন এক নাম, যার নাম শুনলেই দর্শকদের মনে ভরসা জাগে। তবে পরপর ছয়টি সিনেমা ফ্লপ হওয়ার পর, ‘সারফিরা’ নিয়ে দর্শকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। ‘সারফিরা’ সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছে ১২ জুলাই, ২০২৪ সালে, এবং এটি মূলত তামিল সিনেমা ‘সুরারাই পোট্রু’র হিন্দি রিমেক। সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন সুদা কঙ্গারা এবং এতে অভিনয় করেছেন অক্ষয় কুমার, রাধিকা মদন, এবং পাresh রাওয়াল।
সিনেমার গল্প:
‘সারফিরা’ সিনেমার গল্প আবর্তিত হয়েছে বীরেন্দ্র ‘বীর’ মাট্রে (অক্ষয় কুমার) নামক এক ব্যক্তির চারপাশে, যিনি একটি কম খরচের এয়ারলাইন চালু করার স্বপ্ন দেখেন। তার এই স্বপ্ন পূরণের পথে নানা বাধা-বিপত্তি আসে, যার মধ্যে অন্যতম হল এভিয়েশন খাতের বড় বড় প্রতিযোগীদের বিরোধিতা। সিনেমাটি মূলত ক্যাপ্টেন জি আর গোপীনাথের জীবনী ‘সিম্পলি ফ্লাই: এ ডেকান ওডিসি’ থেকে অনুপ্রাণিত।
ইতিবাচক পর্যালোচনা:
‘সারফিরা’ সিনেমাটি অনেক সমালোচকের কাছ থেকে প্রশংসা পেয়েছে। বিশেষ করে, অক্ষয় কুমারের অভিনয়কে অনেকেই তার সাম্প্রতিক সময়ের সেরা কাজ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সিনেমাটি সাধারণ মানুষের শক্তি এবং দৃঢ়তার গল্প বলে, যা দর্শকদের প্রেরণা জোগায়। এছাড়াও, সিনেমার পারিবারিক দৃশ্যগুলি অত্যন্ত আবেগপূর্ণ এবং আকর্ষণীয়। সমালোচকরা বলছেন, সিনেমাটি একটি পরিষ্কার এবং পরিবারের সাথে দেখার উপযোগী।
নেতিবাচক পর্যালোচনা:
তবে, ‘সারফিরা’ সিনেমাটি অনেক সমালোচকের কাছ থেকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াও পেয়েছে। অনেকেই বলছেন, সিনেমাটি মূল তামিল সিনেমার প্রায় শট-টু-শট রিমেক, যা একঘেয়ে এবং পূর্বানুমেয়। অক্ষয় কুমারের অভিনয়ও কিছু ক্ষেত্রে সমালোচিত হয়েছে, বিশেষ করে আবেগপূর্ণ দৃশ্যগুলিতে। এছাড়াও, সিনেমার দৈর্ঘ্য এবং কিছু গান অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হয়েছে।
মুভির তথ্য:
পরিচালক: সুদা কঙ্গারা
অভিনয়: অক্ষয় কুমার, রাধিকা মদন, পরেশ রাওয়াল, সীমা বিসওয়াস
মুক্তির তারিখ: ১২ জুলাই, ২০২৪
Tollywood: উত্তম-যুগের পর বাংলা চলচ্চিত্রের নবজাগরণের রূপকার রঞ্জিত মল্লিক
চরিত্রের গভীরতার অভাব
সিনেমার চরিত্রগুলির গভীরতার অভাবও সমালোচনার মুখে পড়েছে। অক্ষয় কুমারের অভিনয় কিছু ক্ষেত্রে সমালোচিত হয়েছে, বিশেষ করে আবেগপূর্ণ দৃশ্যগুলিতে। রাধিকা মদনের অভিনয়ও মূল চরিত্রের তুলনায় কম প্রভাবশালী বলে মনে হয়েছে। এছাড়াও, প্রধান চরিত্রগুলির মধ্যে রসায়নও তেমন ভালোভাবে ফুটে ওঠেনি[1][8]।
সঙ্গীতের প্রভাবহীনতা
সিনেমার সঙ্গীতও সমালোচনার মুখে পড়েছে। সমালোচকরা বলছেন, সিনেমার সঙ্গীত মনে রাখার মতো নয় এবং এটি সিনেমার আবেগপূর্ণ দৃশ্যগুলিকে সমর্থন করতে ব্যর্থ হয়েছে।
অতিরিক্ত নাটকীয়তা
সিনেমাটি অতিরিক্ত নাটকীয় এবং মেলোড্রামাটিক বলে সমালোচিত হয়েছে। মূল তামিল সিনেমার তুলনায় ‘সারফিরা’তে নাটকীয়তার মাত্রা অনেক বেশি, যা অনেক সময় বিরক্তিকর হয়ে উঠেছে।
সংলাপের পুনরাবৃত্তি
সিনেমার সংলাপগুলি অনেক সময় পুনরাবৃত্তি হয়েছে, যা দর্শকদের জন্য একঘেয়ে হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে একই বার্তা বারবার দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, যা সিনেমার গতি কমিয়ে দিয়েছে।
এই চলচ্চিত্রটির কোন দিকগুলি সমালোচকদের কাছে সবচেয়ে বেশি পছন্দ হয়েছে
সমালোচকদের কাছে ‘সারফিরা’ সিনেমার প্রশংসিত দিকগুলি
অক্ষয় কুমারের অভিনয়
‘সারফিরা’ সিনেমার সবচেয়ে প্রশংসিত দিক হল অক্ষয় কুমারের অভিনয়। সমালোচকরা বলছেন, অক্ষয় কুমার তার চরিত্রে প্রাণ ঢেলে দিয়েছেন এবং তার অভিনয় অত্যন্ত প্রভাবশালী হয়েছে। বিশেষ করে, আবেগপূর্ণ দৃশ্যগুলিতে তার অভিনয় দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। উদাহরণস্বরূপ, বিমানবন্দরে ঋণের জন্য আবেদন করার দৃশ্য এবং তার স্ত্রীর কাছ থেকে টাকা ধার করার সময় তার অস্বস্তি বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে।
প্রেরণাদায়ক গল্প
‘সারফিরা’ সিনেমার গল্পটি অত্যন্ত প্রেরণাদায়ক এবং দৃঢ় সংকল্পের উদাহরণ। বীর মাট্রে (অক্ষয় কুমার) নামক এক ব্যক্তির কম খরচের এয়ারলাইন চালু করার স্বপ্ন এবং তার পথে আসা নানা বাধা-বিপত্তি নিয়ে সিনেমাটি আবর্তিত হয়েছে। সমালোচকরা বলছেন, সিনেমাটি সাধারণ মানুষের শক্তি এবং দৃঢ়তার গল্প বলে, যা দর্শকদের প্রেরণা জোগায়।
সুদা কঙ্গারার পরিচালনা
সুদা কঙ্গারার পরিচালনাও সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। তার পরিচালনায় সিনেমাটি একটি সামাজিক বিনোদনমূলক চলচ্চিত্রে পরিণত হয়েছে, যা দর্শকদের আবেগপূর্ণভাবে যুক্ত রাখতে সক্ষম হয়েছে। সুদা কঙ্গারা তার গল্প বলার কৌশলের মাধ্যমে সিনেমাটিকে একটি সামাজিক বিনোদনমূলক চলচ্চিত্রে পরিণত করেছেন, যা দর্শকদের আবেগপূর্ণভাবে যুক্ত রাখতে সক্ষম হয়েছে।
রাধিকা মদনের অভিনয়
রাধিকা মদনের অভিনয়ও সমালোচকদের প্রশংসা পেয়েছে। তিনি বীরের স্ত্রী রানি চরিত্রে অভিনয় করেছেন এবং তার চরিত্রটি দৃঢ় এবং আত্মবিশ্বাসী। রাধিকা মদনের অভিনয় তার চরিত্রকে জীবন্ত করে তুলেছে এবং দর্শকদের মুগ্ধ করেছে।
সামাজিক বার্তা
‘সারফিরা’ সিনেমাটি শুধু একটি রাগস-টু-রিচেস গল্প নয়, এটি পিতৃতন্ত্র, শ্রেণী বিভাজন এবং বর্ণবাদের উপরও মন্তব্য করে। সিনেমাটি সাধারণ মানুষের স্বপ্ন এবং তাদের সংগ্রামের গল্প বলে, যা দর্শকদের মধ্যে একটি শক্তিশালী বার্তা পৌঁছে দেয়।
সাপোর্টিং কাস্টের অভিনয়
পাresh রাওয়াল এবং সীমা বিসওয়াসের অভিনয়ও সমালোচকদের প্রশংসা পেয়েছে। পাresh রাওয়াল তার চরিত্রে অত্যন্ত প্রভাবশালী এবং সীমা বিসওয়াস তার ছোট চরিত্রেও দর্শকদের মুগ্ধ করেছেন।
সবমিলিয়ে, ‘সারফিরা’ সিনেমাটি সমালোচকদের কাছ থেকে বেশ কিছু প্রশংসা পেয়েছে। অক্ষয় কুমারের অভিনয়, প্রেরণাদায়ক গল্প, সুদা কঙ্গারার পরিচালনা, রাধিকা মদনের অভিনয়, সামাজিক বার্তা এবং সাপোর্টিং কাস্টের অভিনয় সিনেমাটিকে একটি সফল চলচ্চিত্রে পরিণত করেছে।
সবমিলিয়ে, ‘সারফিরা’ সিনেমাটি একটি মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছে। এটি একদিকে প্রেরণাদায়ক এবং আবেগপূর্ণ, অন্যদিকে পূর্বানুমেয় এবং একঘেয়ে। যারা অক্ষয় কুমারের ভক্ত, তাদের জন্য এটি একটি দেখার মতো সিনেমা হতে পারে, তবে যারা মূল তামিল সিনেমাটি দেখেছেন, তাদের জন্য এটি একটি পুনরাবৃত্তি হতে পারে। ‘সারফিরা’ সিনেমাটি দেখার পর, দর্শকরা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন এটি প্রতারিত নাকি প্রেরণাদায়ক।