Saudi Arabia visa ban 2025: আরব উপকূলে কাজের স্বপ্ন নিয়ে অপেক্ষায় থাকা লাখো মানুষের জন্য হতাশার খবর এসেছে। সৌদি আরব তাদের ঐতিহ্যবাহী শ্রমিক নিয়োগ পদ্ধতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে। আগামী হজ মৌসুমের প্রস্তুতি হিসেবে বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের নাগরিকদের জন্য ব্লক ওয়ার্ক ভিসা প্রদান সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের এই শক্তিশালী রাষ্ট্র। এই সিদ্ধান্ত যেমন হাজারো পরিবারের অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় বিরূপ প্রভাব ফেলবে, তেমনি সৌদি নিয়োগকর্তাদের জন্যও তৈরি করবে নতুন চ্যালেঞ্জ।
ব্লক ওয়ার্ক ভিসা কী এবং কেন এত গুরুত্বপূর্ণ
সৌদি আরবের শ্রম বাজারে ব্লক ওয়ার্ক ভিসা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা। এই পদ্ধতিতে সৌদি কোম্পানিগুলো আগে থেকেই একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক বিদেশি শ্রমিক নিয়োগের জন্য অনুমোদন পেয়ে থাকে। একবার কোটা অনুমোদিত হলে, নিয়োগকর্তারা তাদের পছন্দের প্রার্থীদের জন্য কাজের ভিসার আবেদন করতে পারেন।
এই ব্যবস্থা মূলত নির্মাণ, আতিথেয়তা এবং গৃহস্থালী সেবা খাতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। উপসাগরীয় দেশগুলোর কোম্পানিগুলো এই পদ্ধতির উপর বিশেষভাবে নির্ভর করে তাদের শ্রমিকের চাহিদা মেটানোর জন্য। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মতো দেশ থেকে আসা শ্রমিকরা এই ভিসার মাধ্যমেই সৌদি আরবে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়ে থাকেন।
যেসব দেশ Saudi Arabia visa restrictions এর আওতায় পড়েছে
সৌদি আরবের মানব সম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তে মোট ১৪টি দেশের নাগরিকরা প্রভাবিত হয়েছেন। এই তালিকায় রয়েছে:
- বাংলাদেশ
- ভারত
- পাকিস্তান
- মিশর
- ইন্দোনেশিয়া
- ইরাক
- নাইজেরিয়া
- জর্ডান
- আলজেরিয়া
- সুদান
- ইথিওপিয়া
- তিউনিশিয়া
- ইয়েমেন
- মরক্কো
এই দেশগুলো থেকে ঐতিহ্যগতভাবে সৌদি আরবে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক পাঠানো হয়। বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান থেকে প্রতি বছর লাখো মানুষ সৌদি আরবে কাজের সুযোগ পেয়ে থাকেন।
সময়সীমা এবং কার্যকর হওয়ার তারিখ
এই নিষেধাজ্ঞা ইতিমধ্যে মে ২০২৫ থেকে কার্যকর হয়েছে এবং জুন ২০২৫ এর শেষ পর্যন্ত বহাল থাকবে। এই সময়সীমা হজ মৌসুমের সাথে মিলিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে। হজের ব্যস্ততম সময়ে অভিবাসন ব্যবস্থাপনা সহজ করার জন্যই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সৌদি কর্তৃপক্ষ।
বর্তমান সাসপেনশনের অর্থ হলো:
- নতুন ব্লক ভিসা কোটা অনুমোদন করা হবে না
- আগে থেকে অনুমোদিত কোটার ক্ষেত্রেও বিলম্ব হতে পারে
- পেন্ডিং ওয়ার্ক এন্ট্রি ভিসার আবেদনকারীরা অনিশ্চয়তার মুখে পড়বেন
- বৈধ কাজের ভিসা থাকলেও যারা এখনও সৌদি আরবে প্রবেশ করেননি, তারা প্রবেশে বাধার সম্মুখীন হতে পারেন
Saudi Arabia visa restrictions এর পেছনে কারণসমূহ
সৌদি আরবের এই সিদ্ধান্তের পেছনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। প্রধান কারণ হলো হজ মৌসুমে নিরাপত্তা ও ভিড় নিয়ন্ত্রণ। অতীতে দেখা গেছে, অনেকে কাজের ভিসায় এসে অবৈধভাবে হজ পালনের চেষ্টা করেছেন, যা নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ২০২ সালে হজের সময় অতিরিক্ত ভিড় ও প্রচণ্ড গরমে ১২০০ এর বেশি তীর্থযাত্রীর মৃত্যু হওয়ার ঘটনা এই সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছে। সৌদি কর্তৃপক্ষ এখন আরও কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে চাইছে।
এছাড়াও ভিসার অপব্যবহার রোধ করাও একটি বড় কারণ। অনেকে বহুবার প্রবেশের ভিসা নিয়ে দেশে এসে অবৈধভাবে কাজ করা বা হজ পালনের চেষ্টা করায় সৌদি কর্তৃপক্ষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।
শ্রমিক ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের উপর প্রভাব
এই Saudi Arabia visa restrictions এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন যারা ইতিমধ্যে চাকরির জন্য আবেদন করেছেন বা প্রক্রিয়াধীন আছেন। হাজারো বাংলাদেশি শ্রমিক যারা সৌদি আরবে কাজের জন্য অপেক্ষায় আছেন, তারা এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন।
নিয়োগকারী এজেন্সিগুলোও বড় ধাক্কা খেয়েছে। তারা ইতিমধ্যে অনেক প্রার্থীর কাগজপত্র জমা দিয়েছিলেন এবং বিনিয়োগ করেছিলেন। এখন তাদের বিকল্প পরিকল্পনা নিতে হচ্ছে।
সৌদি নিয়োগকর্তারাও সমস্যায় পড়েছেন। নির্মাণ, আতিথেয়তা এবং গৃহস্থালী সেবা খাতে তাদের শ্রমিকের তীব্র প্রয়োজন রয়েছে। তারা এখন অন্য দেশের শ্রমিকদের দিকে নজর দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
অন্যান্য ভিসা বিধিনিষেধ
ব্লক ওয়ার্ক ভিসার পাশাপাশি সৌদি আরব আরও কয়েকটি ভিসা ক্যাটাগরিতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। উমরাহ ভিসার ক্ষেত্রেও একই ১৪টি দেশের নাগরিকদের জন্য সাময়িক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যদিও ইলেকট্রনিক সিস্টেম আবেদন গ্রহণ করছে, কিন্তু অনুমোদন পাওয়া খুবই কঠিন হয়ে গেছে।
পারিবারিক সাক্ষাৎ ভিসার ক্ষেত্রেও প্রক্রিয়া স্থগিত বা উল্লেখযোগ্যভাবে বিলম্বিত হচ্ছে। অনেক পরিবার তাদের আবেদনের অবস্থা সম্পর্কে কোনো তথ্য পাচ্ছেন না।
ব্যবসায়িক ভিসার ক্ষেত্রেও কঠোর যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। স্বল্পমেয়াদী ব্যবসায়িক সফরের জন্য আসা পেশাদারদের অনেক আবেদন নীরবে বিলম্বিত বা প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং প্রত্যাশা
সৌদি কর্তৃপক্ষ এই নিষেধাজ্ঞাকে সাময়িক বলে উল্লেখ করলেও, কবে এটি প্রত্যাহার করা হবে তার কোনো নির্দিষ্ট তারিখ দেওয়া হয়নি। হজ মৌসুম শেষ হওয়ার পর পরিস্থিতি পুনর্মূল্যায়ন করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই Saudi Arabia visa restrictions শুধু সাময়িক নয়, বরং সৌদি আরব তাদের শ্রম নীতিতে দীর্ঘমেয়াদী পরিবর্তন আনছে। ভিশন ২০৩০ এর অংশ হিসেবে তারা স্থানীয় কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং বিদেশি শ্রমের উপর নির্ভরতা কমানোর চেষ্টা করছে।
যারা ইতিমধ্যে সৌদি আরবে আছেন, তাদের জন্য এই নিষেধাজ্ঞার কোনো প্রভাব নেই। তবে নতুন আগমনকারীদের জন্য পরিস্থিতি অনিশ্চিত। ভ্রমণকারীদের তাদের এয়ারলাইন বা নিকটতম সৌদি কূটনৈতিক মিশনের সাথে যোগাযোগ করে তাদের ভিসা ও প্রবেশের অবস্থা নিশ্চিত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সৌদি আরবের এই Saudi Arabia visa restrictions সিদ্ধান্ত বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের লাখো কর্মপ্রত্যাশীর জন্য হতাশার কারণ হয়েছে। তবে এটি হজ মৌসুমের নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনার জন্য নেওয়া একটি সাময়িক পদক্ষেপ। আশা করা যায়, হজ শেষ হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। তবে ভবিষ্যতে সৌদি আরবে কাজের সুযোগ পেতে হলে আরও কঠোর নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হতে পারে। এই সময়ে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করা এবং বিকল্প পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।