SBI Fraud: ছত্তিশগড়ের শক্তি জেলার ছাপোরা গ্রামে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার (SBI) একটি নকল শাখা খুলে স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রতারণা করার এক অভিনব ঘটনা ঘটেছে। প্রতারকরা চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে বেকার যুবকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এই ঘটনায় গ্রামবাসীরা হতবাক হয়ে গেছেন।
রায়পুর থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ছাপোরা গ্রামে গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে এই নকল ব্যাঙ্ক শাখা চালু হয়েছিল। প্রতারকরা একটি ভাড়া করা দোকানে SBI-এর ব্যানার লাগিয়ে, নতুন আসবাবপত্র সাজিয়ে এবং অফিসিয়াল নথিপত্র ও কাউন্টার তৈরি করে একটি আসল ব্যাঙ্কের মতো পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল।
গ্রামবাসীরা এই নকল শাখায় অ্যাকাউন্ট খোলা শুরু করেছিলেন এবং আর্থিক লেনদেন করতে শুরু করেছিলেন। এমনকি ৬ জন বেকার যুবককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল যারা মনে করেছিলেন তারা দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাঙ্কে চাকরি পেয়েছেন।
NDTV-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতারকরা ম্যানেজার, মার্কেটিং অফিসার, ক্যাশিয়ার এবং কম্পিউটার অপারেটর সহ বিভিন্ন পদে নিয়োগপত্র দিয়েছিল। তারা কর্মীদের প্রশিক্ষণও দিয়েছিল। তবে এই চাকরি পাওয়ার জন্য প্রার্থীদের ২ লাখ থেকে ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত দিতে হয়েছিল।
Fake App Fraud: ডিজিটাল জঙ্গলে সাবধান, ভুয়া অ্যাপের ফাঁদ এড়ানোর গোপন কৌশল
এই প্রতারণা ফাঁস হয়ে যায় যখন কাছাকাছি দাবরা শাখার ম্যানেজার সন্দেহ প্রকাশ করেন। ২৭ সেপ্টেম্বর পুলিশ ও SBI কর্মকর্তারা তদন্তে আসেন এবং জানতে পারেন যে ছাপোরার এই শাখাটি সম্পূর্ণ জাল।
বরিষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা রাজেশ পাটেল NDTV-কে জানিয়েছেন, “দাবরা শাখার ম্যানেজার আমাদের জানান যে ছাপোরায় একটি নকল ব্যাঙ্ক চলছে বলে তিনি সন্দেহ করছেন। তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে ব্যাঙ্কটি নকল এবং বেশ কয়েকজন কর্মচারীকে জাল দলিল দিয়ে নিয়োগ করা হয়েছিল।”
পুলিশ এই প্রতারণার সাথে জড়িত তিনজনকে চিহ্নিত করেছে – রেখা সাহু, মন্দির দাস এবং পঙ্কজ। এই প্রতারকরা শুধু জাল দলিল ও চাকরির পদ দেয়নি, সমস্ত নিয়োগপ্রাপ্তদের প্রশিক্ষণও দিয়েছিল।
এই প্রতারণা ফাঁস হওয়ার পিছনে একজন গ্রামবাসীর ভূমিকা ছিল। অজয় কুমার আগরওয়াল নামে একজন গ্রামবাসী ছাপোরায় একটি SBI কিয়স্কের জন্য আবেদন করেছিলেন। তিনি হঠাৎ করে এই নতুন SBI শাখা খোলা দেখে সন্দেহ করেন। তিনি এই বিষয়ে দাবরার নিকটবর্তী শাখায় জানান।
ম্যানেজাররা যখন কোনো তথ্য বা শাখা কোড খুঁজে পাননি, তখন তারা পুলিশে খবর দেন। এরপর তদন্তে নামে পুলিশ ও ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ।
এই প্রতারণার প্রধান লক্ষ্য ছিল করবা, বালোদ, কবীরধাম এবং শক্তি সহ বিভিন্ন জেলার বেকার ব্যক্তিরা। একজন কর্মচারী জ্যোতি যাদব NDTV-কে জানিয়েছেন যে তাকে সমস্ত দলিল ও বায়োমেট্রিক ডেটা জমা দেওয়ার পর ৩০,০০০ টাকা বেতন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।
আরেক কর্মচারী সঙ্গীতা কানওয়ার NDTV-কে বলেছেন, “আমার কাছে ৫ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছিল, কিন্তু আমি বলেছিলাম যে আমি এত টাকা দিতে পারব না। শেষ পর্যন্ত আমরা ২.৫ লাখ টাকায় রাজি হই। আমাকে ৩০-৩৫,০০০ টাকা বেতনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।”
এই ঘটনায় পুলিশ কম্পিউটার ও অন্যান্য সামগ্রী জব্দ করেছে। ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (BNS) ধারায় তিনজন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তদন্তকারীরা এখন খতিয়ে দেখছেন কতজন লোক এই প্রতারণার শিকার হয়েছেন এবং প্রতারকরা কত টাকা হাতিয়েছে।
এই ধরনের প্রতারণা ভারতে নতুন নয়। ২০২০ সালে তামিলনাড়ুর কুদ্দালোর জেলার পানরুতিতেও একটি নকল SBI শাখা পাওয়া গিয়েছিল। সেখানে একজন প্রাক্তন SBI কর্মচারীর ছেলে কম্পিউটার, লকার ও জাল দলিল সহ একটি নকল শাখা খুলেছিল।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের প্রতারণা প্রতিরোধে গ্রামীণ এলাকায় আরও বেশি সচেতনতা প্রয়োজন। ব্যাঙ্কগুলোকেও তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে হবে।
“৪০০ দিনে ৭.৬% সুদ! SBI Amrit Kalash FD-তে বিনিয়োগ করলে কী লাভ?”
এই ঘটনা থেকে দেখা যাচ্ছে যে প্রতারকরা কতটা সুচতুরভাবে মানুষকে ঠকাতে পারে। তাই গ্রাহকদের সতর্ক থাকতে হবে এবং কোনো সন্দেহজনক ব্যাঙ্কিং কার্যক্রম দেখলে তা অবিলম্বে কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।
ছত্তিশগড় পুলিশ এই ঘটনার পর থেকে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। তারা আশা করছে শীঘ্রই প্রধান আসামীদের গ্রেপ্তার করতে পারবে।
এদিকে SBI কর্তৃপক্ষ একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা এই ধরনের প্রতারণা রোধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। তারা গ্রাহকদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে এবং কোনো সন্দেহজনক কার্যক্রম দেখলে তা অবিলম্বে জানাতে বলেছে।
এই ঘটনা প্রমাণ করে যে আর্থিক প্রতারণার ক্ষেত্রে প্রতারকরা কতটা সৃজনশীল হতে পারে। একটি সম্পূর্ণ ব্যাঙ্ক শাখা তৈরি করে তারা মানুষের বিশ্বাস অর্জন করেছে। এটি দেখিয়ে দেয় যে আমাদের আরও সতর্ক থাকতে হবে এবং কোনো আর্থিক লেনদেন করার আগে সব কিছু যাচাই করে নিতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের প্রতারণা প্রতিরোধে সরকার ও ব্যাঙ্কগুলোকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। গ্রামীণ এলাকায় আর্থিক সাক্ষরতা বৃদ্ধি করা, ব্যাঙ্কিং পরিষেবা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা জরুরি।
এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে এই ধরনের প্রতারণা প্রতিরোধ করা যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। তবে এর জন্য সরকার, ব্যাঙ্ক ও জনগণ সবাইকে সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে।