শিয়ালদহ-বনগাঁও এবং কৃষ্ণনগর, হাসনাবাদ রুটে এসি EMU লোকালের নতুন যুগ

পশ্চিমবঙ্গের যাত্রীদের জন্য এক যুগান্তকারী মুহূর্ত শুরু হয়েছে। পূর্ব রেলওয়ের শিয়ালদহ ডিভিশন আজ ৫ সেপ্টেম্বর থেকে শিয়ালদহ-বনগাঁও এবং শিয়ালদহ-কৃষ্ণনগর রুটে নতুন এসি ইএমইউ লোকাল ট্রেনের পরিষেবা চালু করেছে। এই দুটি…

Avatar

 

পশ্চিমবঙ্গের যাত্রীদের জন্য এক যুগান্তকারী মুহূর্ত শুরু হয়েছে। পূর্ব রেলওয়ের শিয়ালদহ ডিভিশন আজ ৫ সেপ্টেম্বর থেকে শিয়ালদহ-বনগাঁও এবং শিয়ালদহ-কৃষ্ণনগর রুটে নতুন এসি ইএমইউ লোকাল ট্রেনের পরিষেবা চালু করেছে। এই দুটি নতুন রুটে সপ্তাহে ছয় দিন আরামদায়ক ও আধুনিক ভ্রমণের সুবিধা পাবেন যাত্রীরা। রবিবার ছাড়া বাকি দিনগুলিতে এই পরিষেবা উপলব্ধ থাকবে।

বাংলার রেল ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো এই এসি লোকাল চালুর মধ্য দিয়ে। আগস্টে শিয়ালদহ-রানাঘাট রুটে প্রথম এসি ইএমইউ লোকাল চালু হওয়ার পর এবার আরও দুটি রুটে এই আধুনিক পরিষেবা পৌঁছে গেল। এতে শহরতলি এলাকার লক্ষ লক্ষ যাত্রীর জন্য এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

রানাঘাট-বনগাঁও-শিয়ালদহ এসি লোকাল ট্রেন সকাল সাতটা এগারো মিনিটে রানাঘাট থেকে ছেড়ে সকাল সাতটা বাহান্ন মিনিটে বনগাঁও পৌঁছাবে। তারপর বনগাঁও থেকে সকাল নয়টা সাঁইত্রিশ মিনিটে শিয়ালদহ পৌঁছে যাবে। ফেরার পথে সন্ধ্যা ছয়টা চৌদ্দ মিনিটে শিয়ালদহ থেকে ছেড়ে রাত আটটা চার মিনিটে বনগাঁও এবং রাত আটটা একচল্লিশ মিনিটে রানাঘাটে পৌঁছাবে।

শিয়ালদহ-কৃষ্ণনগর এসি ইএমইউ লোকাল শিয়ালদহ থেকে সকাল নয়টা আটচল্লিশ মিনিটে ছেড়ে দুপুর বারটা সাত মিনিটে কৃষ্ণনগর পৌঁছাবে। ফেরার পথে কৃষ্ণনগর থেকে দুপুর দেড়টায় ছেড়ে বিকেল তিনটে চল্লিশ মিনিটে শিয়ালদহ পৌঁছে যাবে।

এই নতুন এসি লোকাল ট্রেনগুলির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে বিমানযাত্রীদের জন্য। রানাঘাট-বনগাঁও-শিয়ালদহ এসি লোকাল দমদম ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে থেমে বিমানযাত্রীদের সুবিধা দেবে, কারণ এই স্টেশনটি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের খুব কাছে অবস্থিত। এতে বিমানযাত্রীরা সহজেই বিমানবন্দরে পৌঁছতে পারবেন।

মায়াপুরের ইসকন মন্দির দর্শনার্থীদের জন্য শিয়ালদহ-কৃষ্ণনগর এসি লোকাল বিশেষ সুবিধাজনক হবে। এই পরিষেবা পূর্ববাংলার ধর্মপ্রাণ মানুষের তীর্থযাত্রাকে আরও আরামদায়ক করে তুলবে।

চেন্নাইয়ের ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরিতে তৈরি এই অত্যাধুনিক ট্রেনগুলি নানা আধুনিক বৈশিষ্ট্যে ভরপুর। বারো কোচ বিশিষ্ট প্রতিটি ট্রেনে একসঙ্গে ১১শ’ জন যাত্রী বসতে পারবেন। স্টেইনলেস স্টিলের বডি দিয়ে তৈরি এই ট্রেনগুলি সর্বোচ্চ ১১০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা গতিতে চলাচল করতে পারবে।

প্রতিটি কোচে চারটি বৈদ্যুতিকভাবে নিয়ন্ত্রিত স্লাইডিং দরজা রয়েছে। সমস্ত কোচে সিসিটিভি নজরদারি, জিপিএস-ভিত্তিক এলইডি ডিসপ্লে এবং ভয়েস অ্যানাউন্সমেন্ট ব্যবস্থা থাকবে। তিন আসনের স্টেইনলেস স্টিলের আসন এবং উন্নত বায়ু সঞ্চালন ব্যবস্থার মাধ্যমে যাত্রীরা অভূতপূর্ব আরাম পাবেন।

ট্রেনের দুটি কোচ সম্পূর্ণভাবে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। এতে মহিলা যাত্রীদের নিরাপত্তা ও আরামের বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিটি কোচে ইমার্জেন্সি টক-ব্যাক ইউনিট রয়েছে, যার মাধ্যমে জরুরি অবস্থায় পাইলটের সাঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে।

যাত্রীদের সামর্থ্যের কথা মাথায় রেখে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। দশ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বের জন্য এসি ইএমইউ ট্রেনের ভাড়া মাত্র ২৯ টাকা। এগার কিলোমিটার থেকে পনেরো কিলোমিটার দূরত্বের জন্য ভাড়া ৩৭ টাকা। মাসিক সিজন টিকিটের ক্ষেত্রে দশ কিলোমিটারের জন্য খরচ ৫৯০ টাকা এবং এগার থেকে পনেরো কিলোমিটার দূরত্বের জন্য ৭৮০ টাকা।

পূর্ব রেলের শিয়ালদহ ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার রাজীব সাক্সেনা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত ২২ আগস্ট মেট্রোর তিনটি নতুন সেকশনে পরিষেবা উদ্বোধনের পর শহরতলির যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। শিয়ালদহ, দমদম জংশন এবং দমদম ক্যান্টনমেন্টের মতো প্রধান ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্টগুলিতে যাত্রী সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

দুর্গাপুজার আগে এই এসি লোকাল চালুর পেছনে বিশেষ কারণ রয়েছে। বাংলার সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপুজার সময় হাজার হাজার মানুষ কলকাতায় পান্ডেল হপিং করতে আসেন। সাধারণ লোকাল ট্রেনে তখন প্রচণ্ড ভিড় হয়। এই এসি লোকাল পরিষেবা সেই ভিড় কমাতে এবং যাত্রীদের আরাম দিতে চালু করা হয়েছে।

গত আগস্টে চালু হওয়া শিয়ালদহ-রানাঘাট এসি লোকালে প্রতিদিন গড়ে প্রায় দুই হাজার আট জন যাত্রী ভ্রমণ করছেন। প্রতিদিন গড়ে আয় হচ্ছে প্রায় এক লক্ষ ষাট হাজার টাকা। এই চমৎকার সাড়া দেখে রেল কর্তৃপক্ষ আরও দুটি রুটে এসি লোকাল চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এছাড়াও বারাসাত-হাসনাবাদ শাখায় একজোড়া লোকাল ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বারাসাত থেকে দুপুর বারটা পনেরো মিনিটে হাসনাবাদের উদ্দেশ্যে এবং হাসনাবাদ থেকে দুপুর দুটো তেত্রিশ মিনিটে বারাসাতের উদ্দেশ্যে এমইউ লোকাল ছাড়বে। এই পরিষেবাও যাত্রীদের সুবিধার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

বিধাননগর থেকে কল্যাণীর মধ্যেও নতুন ইএমইউ ট্রেনের ব্যবস্থা হয়েছে। বিধাননগর থেকে সন্ধ্যা সাতটা আটাশ মিনিটে কল্যাণীর উদ্দেশ্যে এবং কল্যাণী থেকে রাত আটটা বাহান্ন মিনিটে শিয়ালদহর উদ্দেশ্যে ইএমইউ লোকাল ছাড়বে।

রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ধীরে ধীরে এসি রেকের সংখ্যা বাড়ানো হবে। যাত্রীদের চাহিদা এবং সাড়া দেখে আরও রুটে এসি লোকাল চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

এই এসি লোকাল পরিষেবার ফলে কেবল যাত্রা সুবিধাজনক হবে তা নয়, পরিবেশের ওপরও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। হাজার হাজার ব্যক্তিগত গাড়ির বদলে মানুষ এসি লোকাল ব্যবহার করলে কার্বন নিঃসরণ কমবে এবং শহরের যানজট কমতে সাহায্য করবে।

পূর্ব ভারতে প্রথম এবং সারাদেশে দ্বিতীয় এই এসি লোকাল পরিষেবা কলকাতার গণপরিবহণ ব্যবস্থায় এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। মুম্বাই এবং চেন্নাইয়ের পর এবার কলকাতাও এসি লোকাল ট্রেনের সুবিধা পেল।

শিয়ালদহ ডিভিশনের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে বাংলার রেলযাত্রীদের জন্য এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। আধুনিক সুবিধা এবং সাশ্রয়ী ভাড়ার এই সমন্বয় নগরজীবনে এক ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। প্রতিদিনের যাতায়াত এখন হবে আরও আরামদায়ক, নিরাপদ ও দ্রুত।

About Author
Avatar

আমাদের স্টাফ রিপোর্টারগণ সর্বদা নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন যাতে আপনি বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের সর্বশেষ ও গুরুত্বপূর্ণ খবর পেতে পারেন। তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রতিশ্রুতি আমাদের ওয়েবসাইটকে একটি বিশ্বস্ত তথ্যের উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।তারা নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ রিপোর্টিংয়ে বিশ্বাসী, দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক প্রতিবেদন তৈরিতে সক্ষম