Second-hand Book Market Kolkata: কলকাতার পুরনো বই বাজার বলতে সবার মনে প্রথমেই আসে কলেজস্ট্রীটের নাম। কিন্তু জানেন কি, এই শহরে আরও কয়েকটি পুরনো বই বাজার রয়েছে যেগুলি অনেকের কাছেই অজানা? আসুন জেনে নেওয়া যাক কলকাতার এমনই ৪টি অজানা পুরনো বই বাজার সম্পর্কে, যেখানে গেলে আপনি হারিয়ে যাবেন বইয়ের জগতে।
গড়িয়াহাট ফ্লাইওভারের নিচে থেকে শুরু হয়েছে এই বই বাজার। ফুটপাথের ওপর সাজানো রয়েছে হাজার হাজার পুরনো বই। এখানে প্রায় ২০টি স্টল রয়েছে যেখানে পাওয়া যায় নানা ধরনের বই।গড়িয়াহাট রোডের ব্যস্ত ফুটপাথে ছোট ছোট দোকানগুলি স্মৃতিবিজড়িত বইয়ে ভরা। সবচেয়ে বড় Second Hand Books এলাকা এটি, যেখানে বইয়ের একমাত্র রিয়েল এস্টেট হল নীল তারপোলিনের শীট।এখানে আপনি পাবেন:
মোহন দাস নামে একজন বইবিক্রেতা জানান, “৩০ বছর আগে যখন আমি এই স্টল খুলেছিলাম, তখন প্রতিদিন ৫০০ টাকা আয় হত শুধু বই ধার দিয়ে। এখন দৈনিক ১০০ টাকাও হয় না।”তবে এখনও এখানে কিছু দুর্লভ সংগ্রহ পাওয়া যায়। যেমন:
এখানে একটি নতুন বইয়ের দামে ৫টি পুরনো বই কেনা যায়। তাই সময়, ধৈর্য ও দরদাম করার দক্ষতা নিয়ে এলে এখান থেকে দারুণ সব বই সংগ্রহ করা যায়।
কলকাতার ঐতিহ্যবাহী এলাকা ফ্রি স্কুল স্ট্রীটে রয়েছে বেশ কয়েকটি পুরনো বইয়ের দোকান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
মডার্ন বুক হাউসের গেটে টিনটিন ও অ্যাস্টেরিক্সের সম্পূর্ণ সংকলন সাজানো থাকে, যা অর্ধেক দামে বিক্রি হয়।এখানে পাওয়া যায়:
ফ্রি স্কুল স্ট্রীটের বইয়ের দোকানগুলি ইবুক ও অনলাইন শপিংয়ের যুগেও টিকে আছে। কারণ এখানে পাওয়া যায় এমন অনেক দুর্লভ বই যা অন্য কোথাও পাওয়া যায় না।
দালহৌসি স্কোয়ারের কারেন্সি বিল্ডিংয়ের সামনের ফুটপাথে ম্যাঙ্গো লেনে রয়েছে আরেকটি পুরনো বই বাজার। এখানে কিছু সত্যিকারের রত্ন খুঁজে পাওয়া যায়।এখানকার বিক্রেতারা আপনার চাহিদা মতো বিশেষ বইও এনে দিতে পারেন। এখানে পাওয়া যেতে পারে:
এখানে শুধু নগদ টাকা গ্রহণ করা হয়। তাই ভালো সাইজের ব্যাগ ও পর্যাপ্ত টাকা নিয়ে যাওয়া উচিত, কারণ কী সম্পদ খুঁজে পাবেন তা বলা যায় না – টেগোর থেকে শুরু করে ওডহাউস, সবই পাওয়া যেতে পারে।
পার্ক স্ট্রীটের অক্সফোর্ড বুকস্টোরের ঠিক বাইরে ফুটপাথে রয়েছে একটি স্টল যা অনেকের নজর এড়িয়ে যায়। কিন্তু এখানে গেলে আপনি অনেক টাকা বাঁচাতে পারবেন এবং কিছু অসাধারণ বই খুঁজে পেতে পারেন।এখানে পাওয়া যায়:
এছাড়া এখানে অনেক জনপ্রিয় ম্যাগাজিনও প্রদর্শিত থাকে। শিশুদের জন্য বই কিনতে চাইলে বড় বুকস্টোরে যাওয়ার আগে এই ফুটপাথে একবার ঘুরে দেখা উচিত। এখানে পাওয়া যেতে পারে:
কলকাতার পুরনো বই বাজারগুলি এখন নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। প্রযুক্তির প্রসার ও পড়ার অভ্যাসের পরিবর্তনের কারণে এই বাজারগুলির গ্রাহক সংখ্যা কমে যাচ্ছে।গড়িয়াহাটের একজন প্রবীণ বইবিক্রেতা নীরমল মণ্ডল জানান, “আগে এখানে মাত্র ৭-৮টি স্টল ছিল। এখন স্টলের সংখ্যা বেড়েছে কিন্তু পড়ার অভ্যাস ও বাস্তব বইয়ের প্রতি ভালোবাসা কমে যাওয়ায় ক্রেতা সংখ্যা কমেছে।”তবে পরিবর্তন এসেছে অন্য দিক থেকেও। আগে যেখানে ক্লাসিক সাহিত্যের চাহিদা বেশি ছিল, এখন মানুষ বেশি আগ্রহী কমিক বইয়ের প্রতি, বিশেষত ভারতীয় কমিক বইয়ের প্রতি। যেমন:
এই বাজারগুলিতে বিক্রেতারা তাদের বই সংগ্রহ করেন মূলত দুভাবে:
নীরমল মণ্ডল জানান যে তিনি বিখ্যাত চিত্রশিল্পী যামিনী রায়ের নাতি দেবব্রত রায়ের সঙ্গে কাজ করেন।
কলকাতার এই পুরনো বই বাজারগুলি শুধু বই কেনাবেচার জায়গা নয়, এগুলি শহরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যেরও অংশ। এই বাজারগুলির মাধ্যমে:
তবে এই বাজারগুলির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। ডিজিটাল যুগে পুরনো বইয়ের চাহিদা কমে যাওয়া, শহরের আধুনিকীকরণের ফলে এই বাজারগুলির অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়া, নতুন প্রজন্মের মধ্যে পড়ার অভ্যাস কমে যাওয়া – এসব কারণে এই ঐতিহ্যবাহী বাজারগুলি ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে পারে।তবে আশার কথা হল, এখনও অনেক বইপ্রেমী রয়েছেন যারা এই বাজারগুলিকে বাঁচিয়ে রাখতে চান। তাদের মতে, এই বাজারগুলি শুধু বই কেনাবেচার জায়গা নয়, এগুলি কলকাতার সাংস্কৃতিক পরিচয়েরও অংশ।
মস্তিষ্কের মহাকাব্য: আপনার সন্তানের প্রতিভা বিকাশের ১০টি অমোঘ কৌশল
কলকাতার পুরনো বই বাজারগুলি বাঁচানোর জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে:
কলকাতার পুরনো বই বাজারগুলি শুধু সাংস্কৃতিক গুরুত্বই বহন করে না, এগুলির একটি উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রভাবও রয়েছে:
কলকাতার পুরনো বই বাজারগুলি শহরের সাংস্কৃতিক জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এগুলির সাংস্কৃতিক তাৎপর্য অনেক:
কলকাতার পুরনো বই বাজারগুলির ভবিষ্যৎ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন এগুলি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাবে, আবার অনেকে আশাবাদী যে এগুলি টিকে থাকবে।ভবিষ্যতে এই বাজারগুলি টিকিয়ে রাখার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:
কলকাতার পুরনো বই বাজারগুলি শহরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি অমূল্য সম্পদ। এগুলি শুধু বই কেনাবেচার জায়গা নয়, বরং জ্ঞান, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের ধারক ও বাহক। যদিও বর্তমানে এগুলি নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, তবুও আশা করা যায় যে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া হলে এগুলি ভবিষ্যতেও টিকে থাকবে এবং কলকাতার সাংস্কৃতিক জীবনকে সমৃদ্ধ করতে থাকবে।কলকাতার এই চারটি অজানা পুরনো বই বাজার – গড়িয়াহাট, ফ্রি স্কুল স্ট্রীট, দালহৌসি পেভমেন্ট ও পার্ক স্ট্রীট পেভমেন্ট – প্রত্যেকটি তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও ঐতিহ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এগুলি শুধু বইপ্রেমীদের কাছেই নয়, যে কোনো সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষের কাছে একটি অনন্য অভিজ্ঞতা উপহার দিতে পারে। তাই আসুন, আমরা সবাই মিলে এই অমূল্য ঐতিহ্যকে রক্ষা করি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করি।
মন্তব্য করুন