কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন মহিলা ডাক্তারের ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার প্রতিবাদে চলমান জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন দমন করতে কলকাতা পুলিশের ১৬৩ ধারা জারির বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরেই এই মামলার শুনানি শুরু হয়েছে।
গত ৯ অগাস্ট থেকে শুরু হওয়া এই আন্দোলন এখন দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছে। জুনিয়র ডাক্তাররা তাদের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচারের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছেন। এর ফলে রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে।
আন্দোলনকারী ডাক্তারদের দাবি অনুযায়ী, আর জি কর হাসপাতালের ঘটনায় যারা জড়িত তাদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি, হাসপাতালে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা, এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। কিন্তু রাজ্য সরকার এখনও পর্যন্ত তাদের দাবিগুলি পূরণ করেনি বলে অভিযোগ।
ভারতে ডাক্তারদের আন্দোলন: চরম অবহেলা ও নিরাপত্তাহীনতার বিরুদ্ধে ফেটে পড়া ক্ষোভ
মঙ্গলবার কলকাতায় দুটি পৃথক কার্নিভালের আয়োজন হতে চলেছে। একদিকে সরকারি উদ্যোগে রেড রোডে পুজোর কার্নিভাল, অন্যদিকে আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে ‘দ্রোহের কার্নিভাল’ নামে একটি বিরোধী কর্মসূচি রানি রাসমণি রোডে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
পুলিশ আশঙ্কা করছে যে ‘দ্রোহের কার্নিভাল’ থেকে অশান্তি ছড়াতে পারে। এই কারণে, কলকাতা পুলিশ রানি রাসমণি রোড এবং আশপাশের এলাকায় জমায়েত রোধ করতে ১৬৩ ধারা জারি করেছে।এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে জয়েন্ট প্লাটফর্ম অফ ডক্টর্স কলকাতা হাই কোর্টে আবেদন করেছে।
তারা প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের কাছে দ্রুত শুনানির আবেদন জানিয়েছে। প্রধান বিচারপতি সেই আবেদন মঞ্জুর করেছেন এবং একটি বিশেষ বেঞ্চ গঠন করা হয়েছে।মঙ্গলবার দুপুর ২টা নাগাদ বিচারপতি রবিকিশন কপূরের বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।উল্লেখ্য, পুজোর কার্নিভাল বিকেল সাড়ে চারটায় শুরু হওয়ার কথা, আর ‘দ্রোহের কার্নিভালে’র জন্য বিকেল চারটা থেকে জমায়েত শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
সিনিয়র ডাক্তারদের এই পদক্ষেপ আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করেছে। তারা বলছেন, জুনিয়রদের দাবিগুলি ন্যায্য এবং সেগুলি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। তবে রোগীদের সেবা যাতে ব্যাহত না হয় সেদিকেও তারা নজর রাখছেন।
Junior Doctors Hunger Strike: সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে আমরণ অনশনে ৬ জুনিয়র ডাক্তার
অন্যদিকে, ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (IMA) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলেছে, পরিস্থিতি আরও জটিল হওয়ার আগেই মুখ্যমন্ত্রীর উচিত ডাক্তারদের সঙ্গে আলোচনায় বসা।
বেসরকারি হাসপাতালের ডাক্তাররাও জুনিয়র ডাক্তারদের সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন। তারা আগামী ১৪ অক্টোবর থেকে ৪৮ ঘণ্টার আংশিক কর্মবিরতির ঘোষণা করেছেন। তবে জরুরি পরিষেবা চালু থাকবে বলে জানিয়েছেন।
এই আন্দোলন এখন জাতীয় পর্যায়েও নজর কেড়েছে। ফেডারেশন অফ অল ইন্ডিয়া মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনস (FAIMA) হুঁশিয়ারি দিয়েছে, আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের কোনো ক্ষতি হলে সারা দেশে চিকিৎসা পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে হাইকোর্টের রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আদালত যদি ১৬৩ ধারা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন, তাহলে আন্দোলনকারীরা আবার জোরদারভাবে প্রতিবাদ জানাতে পারবেন। অন্যদিকে, আদালত যদি পুলিশের সিদ্ধান্তকে বৈধতা দেন, তাহলে আন্দোলন নতুন মোড় নিতে পারে।