Srijita Chattopadhay
২০ মার্চ ২০২৫, ৮:৫৩ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন সংস্করণ

সাত মাসের অপেক্ষার অবসান: আরজি করের নির্যাতিতার পরিবারের হাতে এল ডেথ সার্টিফিকেট

Protest Rally for RG Kar Incident at Taki

কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যু হওয়া এক তরুণীর পরিবার অবশেষে সাত মাস পর তাঁর মৃত্যু শংসাপত্র পেয়েছে। দীর্ঘ আইনি ও প্রশাসনিক জটিলতার পর এই শংসাপত্র হাতে পাওয়ায় পরিবারের সদস্যরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও তাঁদের মনে ক্ষোভ ও বেদনা এখনও অমলিন। এই ঘটনা শুধু পরিবারের জন্যই নয়, সমাজের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলে ধরেছে—চিকিৎসা ব্যবস্থায় দায়বদ্ধতা ও ন্যায়বিচার কতটা নিশ্চিত করা হচ্ছে?

ঘটনাটি ঘটেছিল গত বছরের আগস্ট মাসে। আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এক তরুণী, যিনি একজন জুনিয়র ডাক্তার হিসেবে কর্মরত ছিলেন, নৃশংসভাবে নির্যাতনের শিকার হন। তাঁর মৃতদেহ হাসপাতালেরই একটি প্রত্যন্ত এলাকায় পাওয়া যায়। পুলিশ তদন্ত শুরু করে এবং প্রাথমিকভাবে এটিকে ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড হিসেবে চিহ্নিত করে। এই ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। কলকাতার রাজপথে হাজার হাজার মানুষ প্রতিবাদে নেমে আসেন, চিকিৎসকদের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচারের দাবিতে। পরিবারের পক্ষ থেকে বারবার দাবি করা হয়েছিল দ্রুত তদন্ত ও অভিযুক্তদের শাস্তির। কিন্তু মৃত্যু শংসাপত্র পেতে এত দীর্ঘ সময় লাগায় তাঁদের হতাশা আরও বেড়ে যায়।

তদন্তের শুরুতে পুলিশ একজন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করে। জানা যায়, অভিযুক্ত ব্যক্তি হাসপাতালেরই একজন কর্মী ছিলেন। তবে তদন্তে একাধিক জটিলতা দেখা দেয়। প্রমাণ সংগ্রহ থেকে শুরু করে আদালতে মামলার শুনানি—সবকিছুতেই বিলম্ব হতে থাকে। পরিবারের অভিযোগ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই ঘটনায় পর্যাপ্ত সহযোগিতা করেনি। এমনকী মৃত্যু শংসাপত্র জারি করার ক্ষেত্রেও অযথা দেরি করা হয়েছে বলে তাঁরা দাবি করেন। সাত মাস ধরে অপেক্ষার পর অবশেষে মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে এই গুরুত্বপূর্ণ নথি তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

এই ঘটনা শুধু একটি পরিবারের দুঃখের গল্প নয়, এটি ভারতের চিকিৎসা ব্যবস্থার একটি গভীর সমস্যার প্রতিফলন। সরকারি হাসপাতালগুলোতে কর্মরত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বারবার। ২০২৩ সালে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে প্রতি বছর গড়ে ১৫০টিরও বেশি হাসপাতালে সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই নারী চিকিৎসকরা লক্ষ্যবস্তু হয়ে থাকেন। আরজি করের এই ঘটনা তারই একটি মর্মান্তিক উদাহরণ। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, হাসপাতালে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও কঠোর আইনি পদক্ষেপের অভাব এই ধরনের ঘটনাকে উৎসাহিত করে।

পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, মৃত্যু শংসাপত্র পাওয়া তাঁদের জন্য একটি আইনি প্রক্রিয়ার অংশ মাত্র। তাঁদের আসল লড়াই হল ন্যায়বিচার পাওয়া। তরুণীর বাবা বলেন, “আমার মেয়ে আর ফিরে আসবে না, কিন্তু যারা এই কাজ করেছে, তাদের শাস্তি হওয়া উচিত। আমরা শুধু কাগজের জন্য অপেক্ষা করিনি, অপেক্ষা করেছি একটা ন্যায্য সমাজের জন্য।” তাঁদের এই কথায় ফুটে উঠেছে গভীর ক্ষোভ ও অসহায়ত্ব। সমাজের বিভিন্ন মহল থেকেও এই ঘটনায় ন্যায়বিচারের দাবি উঠেছে। চিকিৎসক সম্প্রদায় দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে যে, হাসপাতালে নিরাপত্তা জোরদার করা হোক এবং অপরাধীদের দ্রুত শাস্তি দেওয়া হোক।

অন্যদিকে, এই ঘটনায় রাজনৈতিক তরজাও শুরু হয়েছিল। বিরোধী দলগুলো রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিল যে, তদন্তে ইচ্ছাকৃতভাবে গড়িমসি করা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তদন্ত নিরপেক্ষভাবে চলছে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু সাত মাস ধরে মৃত্যু শংসাপত্র না পাওয়ার ঘটনা সরকারের দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এই বিলম্বের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের মধ্যে পারস্পরিক দোষারোপও চলেছে। পরিবারের দাবি, এই দেরি ইচ্ছাকৃত ছিল যাতে জনরোষ কিছুটা কমে যায়।

সমাজে এই ঘটনার প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত অনেকেই এখন নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। বিশেষ করে নারী চিকিৎসকরা মনে করেন, তাঁদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার পরিবেশ তৈরি না হলে এই ধরনের ঘটনা আবারও ঘটতে পারে। এই পরিস্থিতিতে সরকারের কাছে দাবি উঠেছে, হাসপাতালগুলোতে সিসিটিভি, নিরাপত্তারক্ষী ও জরুরি সাহায্য ব্যবস্থা জোরদার করা হোক। একই সঙ্গে, আইনি প্রক্রিয়া দ্রুততর করার জন্যও চাপ বাড়ছে।

শেষ পর্যন্ত, আরজি করের এই ঘটনা একটি বড় শিক্ষা হয়ে থাকতে পারে। পরিবারের হাতে মৃত্যু শংসাপত্র এসেছে ঠিকই, কিন্তু তাঁদের ন্যায়বিচারের লড়াই এখনও শেষ হয়নি। সমাজ হিসেবে আমাদেরও ভাবতে হবে, এই ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে। চিকিৎসকদের নিরাপত্তা, হাসপাতালের দায়বদ্ধতা ও প্রশাসনের তৎপরতা—এই তিনটি বিষয়ে ঐকমত্য না হলে পরিবর্তন আসবে না। তরুণীর পরিবারের সাত মাসের অপেক্ষা শুধু একটি কাগজের জন্য নয়, একটি ন্যায্য সমাজের প্রত্যাশায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

হোয়াটসঅ্যাপ স্ট্যাটাসে Spotify মিউজিক শেয়ার করুন: পূর্ণাঙ্গ গাইড

ঈদ উল-ফিতর ২০২৫: সৌদি আরবে চাঁদ দেখার তারিখ, সময় এবং ঈদ উদযাপনের পূর্ণাঙ্গ তথ্য

Axis Bank Olympus Credit Card: আপনার প্রিমিয়াম ট্র্যাভেল এবং লাইফস্টাইলের আল্টিমেট সাথী

বিনামূল্যে থাকা-খাওয়ার আদর্শ গন্তব্য: পকেট ফ্রেন্ডলি ট্যুরিজমের সম্পূর্ণ গাইড

২০২৫ সালে সাশ্রয়ী বাজেটে ঘুরে আসুন বিশ্বের সেরা ৫টি International Destinations

মা লক্ষ্মীর প্রণাম মন্ত্র: ধন-সম্পদ ও সৌভাগ্যের দ্বার উন্মোচন

উল্টোডাঙা: কলকাতার একটি প্রাচীন গ্রামের নামকরণের পিছনে লুকিয়ে থাকা নৌকা নির্মাণের ইতিহাস

ডি কক-এর ব্যাটে অগ্নিঝরা, স্পিনারদের জাদুতে গুয়াহাটিতে রাজস্থানকে পরাজিত করল কলকাতা

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভারতের ‘র’-এর তীব্র প্রতাপ, নিষিদ্ধ করার সুপারিশ যুক্তরাষ্ট্রের

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উজ্জ্বল করুন: সেরা ৯টি অর্গানিক লিপস্টিক যা পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ

১০

বিশ্বের সাগর-সীমান্তে সেরা ১০: দীর্ঘতম উপকূলরেখা যে দেশগুলির

১১

মাসিক হলে কি সিঁদুর পরা যায়? প্রাচীন ঐতিহ্য ও আধুনিক দৃষ্টিকোণ

১২

মন্দির থেকে ফিরে ভুলেও এই ৫টি কাজ করবেন না – শাস্ত্র কী বলে?

১৩

বাংলাদেশে সেনা-সরকার সংঘাত: শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের জল্পনা

১৪

বিলিয়নেয়ার বৃদ্ধিতে এশিয়ার নতুন পাওয়ার হাউস: চীনের থেমে যাওয়া গতি, ভারতের দৌড়

১৫

নীলষষ্ঠী ২০২৫: সন্তানের মঙ্গলকামনায় এই দিন পালন করুন এই পবিত্র ব্রত

১৬

ইদের উৎসবে কলকাতার রাস্তায় চলবে নিয়মের বাঁধন: কোন কোন পথ বন্ধ, কোথায় বিধিনিষেধ? জানুন বিস্তারিত

১৭

চীন কি ভারতীয় সেনার ড্রোন হ্যাক করেছে? সত্যতা প্রকাশ করল ভারতীয় সেনা

১৮

গৌরবময় ঐতিহ্যের ৫৪ বছর: আজ বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবস

১৯

আপনার কব্জিতে থাকা ছোট্ট যন্ত্রটি কীভাবে আপনার হৃদয়ের গতি জানে?

২০
close