Sheikh Hasina return to Bangladesh: বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসবেন বলে জানিয়েছেন তাঁর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। গত সোমবার (৫ আগস্ট, ২০২৪) হিংসাত্মক বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যাওয়ার পর এই প্রথম শেখ হাসিনার পরিবারের পক্ষ থেকে এমন মন্তব্য করা হলো।
সজীব ওয়াজেদ জয় বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট, ২০২৪) পিটিআই সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “হ্যাঁ, এটা সত্যি যে আমি আগে বলেছিলাম তিনি বাংলাদেশে ফিরবেন না। কিন্তু গত দুদিনে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের নেতা ও কর্মীদের ওপর দেশজুড়ে অব্যাহত হামলার পর এখন আমরা আমাদের লোকজনকে নিরাপদ রাখতে যা প্রয়োজন তা-ই করব; আমরা তাদের একা ছেড়ে যাব না।”
তিনি আরও বলেন, “আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও পুরনো রাজনৈতিক দল, তাই আমরা আমাদের মানুষকে ছেড়ে যেতে পারি না। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হলেই তিনি অবশ্যই বাংলাদেশে ফিরে আসবেন।”
ঘটনার বিবরণ
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশে চাকরির কোটা নিয়ে বিক্ষোভ চলছিল। এই বিক্ষোভ ক্রমশ হিংসাত্মক রূপ নেয় এবং সরকার বিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়। ৫ আগস্ট রাতে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান তাঁর জেনারেলদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় যে, সামরিক বাহিনী সাধারণ মানুষের ওপর গুলি চালাবে না।
এরপর জেনারেল জামান শেখ হাসিনার অফিসকে জানান যে, তাঁর সৈন্যরা কারফিউ জারি করতে পারবে না। একজন ভারতীয় কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, এই বার্তা ছিল স্পষ্ট: হাসিনা সেনাবাহিনীর সমর্থন হারিয়েছেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কর্তৃপক্ষ রোববার সন্ধ্যা ৬টা (১২:০০ জিএমটি) থেকে ‘গুলি করে হত্যা করা হবে’ এমন কারফিউ জারি করে এবং রাস্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করে। কিন্তু সোমবার হাজার হাজার মানুষ কারফিউ অমান্য করে রাস্তায় নামে।
দুপুরের দিকে পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টে যায়। বিক্ষোভকারীরা সেনাবাহিনীকে ফুল দিতে শুরু করে। অফিসার ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হয়। আল জাজিরার সাংবাদিক তানভীর চৌধুরীর মতে, এটি ছিল দ্রুত রূপান্তরের মুহূর্ত।
বিশ্বস্ত সূত্র থেকে উদ্ধৃতি
সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, “তিনি (শেখ হাসিনা) গত দুদিন ধরে আমাদের সব দলীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। আমার মা যেকোনো সময় অবসর নিতে যাচ্ছিলেন, তাই আমরা ভেবেছিলাম যেহেতু তিনি চলে গেছেন, তারা (দাঙ্গাকারীরা) আমাদের দলের লোকদের একা ছেড়ে দেবে, কিন্তু তা হয়নি। বরং তারা আক্রমণ শুরু করেছে।”
তিনি আরও বলেন, “আওয়ামী লীগ বা বিএনপি – যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, মুজিব পরিবার ও শেখ হাসিনা থাকবেন।”
বাংলাদেশের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সোমবার ঘোষণা করেন, “আমি সবাইকে ধৈর্য ধরতে, আমাদের কিছু সময় দিতে এবং সব চ্যালেঞ্জ একসঙ্গে মোকাবেলা করতে অনুরোধ করছি। অনুগ্রহ করে সহিংসতায় ফিরে যাবেন না, বরং শান্তিপূর্ণ, অহিংস পদ্ধতি গ্রহণ করুন।”
সংশ্লিষ্ট পরিসংখ্যান
– জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভে প্রায় ৩০০ জন নিহত হয়েছে।
– ১১,০০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
– শেখ হাসিনা ১৫ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন (২০০৯-২০২৪)।
– তিনি মোট ২০ বছর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
– বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি, যার ২০% বেকার।
সম্ভাব্য প্রভাব
শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের ঘোষণা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এর ফলে নিম্নলিখিত প্রভাব পড়তে পারে:
১. আওয়ামী লীগের মনোবল বৃদ্ধি: দলের নেতাকর্মীরা নতুন করে উদ্দীপিত হতে পারে।
২. বিরোধী দলগুলোর কৌশল পরিবর্তন: বিএনপিসহ অন্যান্য দল তাদের রণনীতি পুনর্বিবেচনা করতে পারে।
৩. অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনে জটিলতা: নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া জটিল হতে পারে।
শেখ হাসিনার পতন: গণবিক্ষোভের মুখে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ
৪. আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: ভারত, চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিক্রিয়া পরিবর্তিত হতে পারে।
৫. অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা: বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে।
শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের ঘোষণা বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মোড় এনেছে। তবে দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা এখনও বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। আগামী দিনগুলোতে কীভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা হয় তার ওপর নির্ভর করবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ।
বাংলাদেশের জনগণ এখন অপেক্ষায় রয়েছে একটি শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের। তবে সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে সব পক্ষকে সংযম ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে হবে। আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিদৃশ্য কীভাবে বিকশিত হয় তা লক্ষ্য করার বিষয়।
মন্তব্য করুন