সম্প্রতি ভারতীয় মিডিয়ায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে নয়াদিল্লির অত্যন্ত নিরাপদ ও বিলাসবহুল এলাকা লুটিয়েন্স বাংলো জোনে (এলবিজেড) অবস্থান করছেন। গত ৫ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে তিনি এখানে রয়েছেন।
লুটিয়েন্স বাংলো জোন হল দিল্লির সবচেয়ে মূল্যবান ও নিরাপদ এলাকা, যেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, শীর্ষ রাজনীতিবিদ ও অতি ধনী ব্যক্তিরা বসবাস করেন। এই এলাকায় প্রায় ৩,০০০টি সরকারি ও ৬০০টি বেসরকারি বাংলো রয়েছে।
শেখ হাসিনা এখন এই এলাকার একটি পূর্ণাঙ্গ লুটিয়েন্স বাংলোতে অবস্থান করছেন, যা সাধারণত মন্ত্রী, বরিষ্ঠ সাংসদ ও শীর্ষ কর্মকর্তাদের জন্য সংরক্ষিত থাকে। ভারত সরকার তার নিরাপত্তার জন্য এই ব্যবস্থা করেছে।
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে অনিশ্চয়তা।
সূত্র অনুযায়ী, শেখ হাসিনার নিরাপত্তার জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চব্বিশ ঘণ্টা সাদা পোশাকে নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে পাহারা দিচ্ছেন। একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “তিনি একজন সম্মানিত অতিথি হিসেবে এই পর্যায়ের নিরাপত্তা পাচ্ছেন।”
শেখ হাসিনা মাঝে মাঝে লোধি গার্ডেনে হাঁটাহাঁটি করেন, তবে সেখানেও কড়া নিরাপত্তা প্রোটোকল অনুসরণ করা হয়। তার গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে তার সঠিক ঠিকানা প্রকাশ করা হয়নি।
প্রসঙ্গত, এটি প্রথম নয় যে শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। ১৯৭৫ সালে তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের সদস্যদের হত্যাকাণ্ডের পর তিনি ছদ্মনামে দিল্লির লাজপত নগরে ৬ বছর বসবাস করেছিলেন।
লুটিয়েন্স বাংলো জোন সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য:
• এই এলাকা প্রায় ২৮ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত।
• এখানে ঐতিহাসিক ভবন ও সেন্ট্রাল ভিস্তা অবস্থিত।
• এলবিজেডে মোট ১৭ ধরনের আবাসন রয়েছে, যার মধ্যে ৩,৯৫৯টি সম্পত্তি আছে।
• টাইপ ৭ ও ৮ বাংলোগুলো সবচেয়ে বেশি চাহিদাসম্পন্ন, যা সরাসরি আবাসন ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রী বরাদ্দ করেন।
• বর্তমানে সরকারের কাছে এই দুই ধরনের ৫২০টি ফ্ল্যাট রয়েছে, যা মন্ত্রী, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও বিচারকদের বরাদ্দ করা হয়।
• এলবিজেডের বাংলোগুলোতে থাকার জন্য নির্দিষ্ট যোগ্যতা প্রয়োজন। সাংসদ, মন্ত্রী, বিচারপতি ও উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তারা এখানে থাকার যোগ্য।
• সাংসদদের জন্য বিনা লাইসেন্স ফিতে ফ্ল্যাট বা হোস্টেল সুবিধা দেওয়া হয়। তবে বাংলো চাইলে পূর্ণ লাইসেন্স ফি দিতে হয়।
• এলবিজেডের বাসিন্দারা বিদ্যুৎ, পানি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পান।
• ২০১৭ সালের এক তথ্য অনুযায়ী, এলবিজেডের ৭০৮টি পুরনো বাংলো ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে।
লুটিয়েন্স বাংলো জোনে বসবাসকারী কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তি:
• এয়ারটেলের সুনীল মিত্তল
• ডাবুর গ্রুপের বুরমান পরিবার
• ইস্পাত শিল্পপতি লক্ষ্মী মিত্তল
• ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
• প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং
• কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী
শেখ হাসিনার লুটিয়েন্স বাংলোতে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিক্রিয়া এসেছে। বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলো এটিকে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি হিসেবে দেখছে। অন্যদিকে সরকার সমর্থকরা বলছেন, নিরাপত্তার স্বার্থে তিনি সাময়িকভাবে ভারতে অবস্থান করছেন।
তবে এখনও পর্যন্ত শেখ হাসিনা বা তার দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো সরাসরি বক্তব্য দেওয়া হয়নি। ভারত সরকারও এ ব্যাপারে নীরবতা অবলম্বন করেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত শেখ হাসিনা লুটিয়েন্স বাংলোতেই থাকবেন। তবে দীর্ঘমেয়াদে এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।
সামগ্রিকভাবে, শেখ হাসিনার লুটিয়েন্স বাংলোতে অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এটি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। আগামী দিনগুলোতে এ বিষয়ে আরও তথ্য ও প্রতিক্রিয়া সামনে আসতে পারে।