Youngest mountaineer records Sherpa: নেপালের ১৮ বছর বয়সী পর্বতারোহী নিমা রিনজি শেরপা বিশ্বের সর্বোচ্চ ১৪টি পর্বতশৃঙ্গ জয় করে নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন। বুধবার সকালে তিবেতের শিশাপাংমা (৮,০২৭ মিটার) শৃঙ্গে আরোহণ করে তিনি এই অসাধারণ কৃতিত্ব অর্জন করেন।নিমা রিনজি শেরপা ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে মানাসলু (৮,১৬৩ মিটার) আরোহণের মাধ্যমে তাঁর এই অভিযান শুরু করেন। মাত্র দুই বছর ১০ দিনের মধ্যে তিনি বিশ্বের সমস্ত ৮,০০০ মিটারের উপরের পর্বতশৃঙ্গ জয় করে ফেলেন।
এর মধ্যে রয়েছে মাউন্ট এভারেস্ট, কে২ এবং অন্নপূর্ণা প্রথম।নিমা রিনজি শেরপা শেরপা জাতিগোষ্ঠীর সদস্য, যারা তাদের পর্বতারোহণ দক্ষতার জন্য বিখ্যাত। তাঁর পরিবারের অনেকেই সফল পর্বতারোহী। তাঁর বাবা তাশি লাকপা শেরপা একজন অভিজ্ঞ পর্বতারোহী এবং ১৪ পিকস এক্সপেডিশন পরিচালনা করেন। নিমার কাকারা, চ্যাং দাওয়া শেরপা এবং মিংমা শেরপাও ১৪টি শৃঙ্গ জয় করেছেন।নিমা রিনজি শেরপা প্রথমে ফুটবল এবং ছবি তোলায় আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু মাত্র দুই বছর আগে তিনি পর্বতারোহণে মনোনিবেশ করেন এবং অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেন। ২০২২ সালের আগস্টে মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি মাউন্ট মানাসলু (৮,১৬৩ মিটার) জয় করে সর্বকনিষ্ঠ আরোহীর রেকর্ড গড়েন।নিমা রিনজি শেরপা বলেন, “পর্বত আমাকে প্রকৃতি, মানব শরীর এবং মানব মনস্তত্ত্ব সম্পর্কে অমূল্য শিক্ষা দিয়েছে। পৃথিবী সম্পর্কে আমি যা কিছু জানি, তা আরোহণের মাধ্যমে শিখেছি।”
Paris Paralympics 2024: মীরাটের প্রীতি প্যারালিম্পিক্সে ১০০ মিটারে ব্রোঞ্জ জিতে ইতিহাস গড়লেন
Paris Paralympics 2024: মীরাটের প্রীতি প্যারালিম্পিক্সে ১০০ মিটারে ব্রোঞ্জ জিতে ইতিহাস গড়লেন
নিমা রিনজি শেরপা যখন পর্বতারোহণ করেন না, তখন তিনি প্রতিদিন ট্রেডমিলে ব্যায়াম করেন এবং জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলেন। তাঁর বাবা বলেন, “একটি বড় শৃঙ্গ আরোহণের জন্য আপনাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে।”নেপাল পর্বতারোহণ সংস্থার সভাপতি নিমা নুরু শেরপা বলেন, “এটি আমাদের দেশের জন্য গর্বের মুহূর্ত। নিমা সমস্ত রূঢ়বাদী ধারণা ভেঙে দিয়েছেন এবং তাঁর সাফল্য একটি বার্তা দিয়েছে যে দৃঢ় সংকল্প থাকলে কিছুই অসম্ভব নয়।”নিমা রিনজি শেরপা তাঁর সাফল্যকে #SherpaPower প্রকল্পের প্রতি উৎসর্গ করেছেন। তিনি বলেন, “এই শৃঙ্গ জয় শুধু আমার ব্যক্তিগত যাত্রার পরিণতি নয়, বরং প্রতিটি শেরপার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন যারা আমাদের জন্য নির্ধারিত প্রথাগত সীমানা অতিক্রম করে স্বপ্ন দেখতে সাহস করেছেন।”
নিমা রিনজি শেরপার ১৪টি শৃঙ্গ জয়ের তালিকা:
১. মাউন্ট মানাসলু (৮,১৬৩ মিটার) – ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২
২. মাউন্ট এভারেস্ট (৮,৮৪৮.৮৬ মিটার) – ২৪ মে, ২০২৩
৩. মাউন্ট লোৎসে (৮,৫১৬ মিটার) – ২৪ মে, ২০২৩
৪. মাউন্ট নাঙ্গা পারবাত (৮,১২৬ মিটার) – ২৬ জুন, ২০২৩
৫. মাউন্ট গাশারব্রুম ১ (৮,০৬৮ মিটার) – ১৮ জুলাই, ২০২৩
৬. মাউন্ট গাশারব্রুম ২ (৮,০৩৫ মিটার) – ১৯ জুলাই, ২০২৩
৭. মাউন্ট ব্রড পিক (৮,০৪৭ মিটার) – ২৩ জুলাই, ২০২৩
৮. মাউন্ট কে২ (৮,৬১১ মিটার) – ২৭ জুলাই, ২০২৩
৯. মাউন্ট চো-ওয়ু (৮,১৮৮ মিটার) – ৬ অক্টোবর, ২০২৩
১০. মাউন্ট ধাউলাগিরি (৮,১৬৭ মিটার) – ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
১১. মাউন্ট অন্নপূর্ণা ১ (৮,০৯১ মিটার) – ১২ এপ্রিল, ২০২৪ (অক্সিজেন ছাড়া)
১২. মাউন্ট মাকালু (৮,৪৮৫ মিটার) – ৪ মে, ২০২৪
১৩. মাউন্ট কাঞ্চনজঙ্ঘা (৮,৫৮৬ মিটার) – ৮ জুন, ২০২৪
১৪. মাউন্ট শিশাপাংমা (৮,০২৭ মিটার) – ৯ অক্টোবর, ২০২৪
২. মাউন্ট এভারেস্ট (৮,৮৪৮.৮৬ মিটার) – ২৪ মে, ২০২৩
৩. মাউন্ট লোৎসে (৮,৫১৬ মিটার) – ২৪ মে, ২০২৩
৪. মাউন্ট নাঙ্গা পারবাত (৮,১২৬ মিটার) – ২৬ জুন, ২০২৩
৫. মাউন্ট গাশারব্রুম ১ (৮,০৬৮ মিটার) – ১৮ জুলাই, ২০২৩
৬. মাউন্ট গাশারব্রুম ২ (৮,০৩৫ মিটার) – ১৯ জুলাই, ২০২৩
৭. মাউন্ট ব্রড পিক (৮,০৪৭ মিটার) – ২৩ জুলাই, ২০২৩
৮. মাউন্ট কে২ (৮,৬১১ মিটার) – ২৭ জুলাই, ২০২৩
৯. মাউন্ট চো-ওয়ু (৮,১৮৮ মিটার) – ৬ অক্টোবর, ২০২৩
১০. মাউন্ট ধাউলাগিরি (৮,১৬৭ মিটার) – ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
১১. মাউন্ট অন্নপূর্ণা ১ (৮,০৯১ মিটার) – ১২ এপ্রিল, ২০২৪ (অক্সিজেন ছাড়া)
১২. মাউন্ট মাকালু (৮,৪৮৫ মিটার) – ৪ মে, ২০২৪
১৩. মাউন্ট কাঞ্চনজঙ্ঘা (৮,৫৮৬ মিটার) – ৮ জুন, ২০২৪
১৪. মাউন্ট শিশাপাংমা (৮,০২৭ মিটার) – ৯ অক্টোবর, ২০২৪
নিমা রিনজি শেরপার এই অসাধারণ কৃতিত্ব পর্বতারোহণ জগতে একটি নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছে। মাত্র ১৮ বছর ৫ মাস বয়সে তিনি বিশ্বের সমস্ত ৮,০০০ মিটারের উপরের পর্বতশৃঙ্গ জয় করে ফেলেছেন। এর আগে এই রেকর্ডটি ছিল আরেক নেপালি পর্বতারোহী মিংমা গ্যাবু “ডেভিড” শেরপার দখলে, যিনি ২০১৯ সালে ৩০ বছর বয়সে এই কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন।বিশ্বের ১৪টি সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ জয় করা পর্বতারোহণ জগতের সর্বোচ্চ চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হয়। ইতালির রেইনহোল্ড মেসনার ১৯৮৬ সালে প্রথম এই কৃতিত্ব অর্জন করেন এবং তারপর থেকে মাত্র ৪০ জন পর্বতারোহী এই ফিট অর্জন করতে পেরেছেন।
এই পর্বতশৃঙ্গগুলি হিমালয় ও কারাকোরাম পর্বতমালায় অবস্থিত, যা নেপাল, চীন, ভারত ও পাকিস্তান জুড়ে বিস্তৃত। এই শৃঙ্গগুলিতে আরোহণ করতে পর্বতারোহীদের “মৃত্যু অঞ্চল” অতিক্রম করতে হয়, যেখানে বাতাসে অক্সিজেনের মাত্রা মানুষের জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণের চেয়ে অনেক কম থাকে। নিমা রিনজি শেরপা বলেন, “যখন আমি আরোহণ করি, তখন সবসময় মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে। আপনাকে আপনার জীবনের মূল্য সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন থাকতে হবে।”নিমা রিনজি শেরপা তাঁর পর্বতারোহণ অভিজ্ঞতা থেকে শেখা পাঠের কারণে শান্ত ও সংযত থাকতে পারেন বলে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “মানসিকভাবে, আমি নিজেকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি… তুষারধস, প্রচণ্ড খারাপ আবহাওয়া বা দুর্ঘটনার মুখোমুখি হলে আমি শান্ত থাকি এবং আতঙ্কিত হই না।”নেপালি পর্বতারোহীরা – যারা সাধারণত এভারেস্টের আশেপাশের উপত্যকার শেরপা জাতিগোষ্ঠীর সদস্য – হিমালয়ে পর্বতারোহণ শিল্পের মেরুদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হন। তারা সরঞ্জাম ও খাবারের বেশিরভাগ অংশ বহন করেন এবং দড়ি ও মই মেরামত করেন। দীর্ঘদিন বিদেশি পর্বতারোহীদের সহায়ক হিসেবে অজ্ঞাত থাকলেও, ধীরে ধীরে তারা নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করছেন।
২০২১ সালে নেপালি পর্বতারোহীদের একটি দল পাকিস্তানের কে২ পর্বতে শীতকালীন আরোহণের প্রথম সফল অভিযান চালায়। এই ঘটনা পর্বতারোহণ জগতে নেপালি শেরপাদের দক্ষতা ও সাহসিকতার প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হয়।নিমা রিনজি শেরপার এই অসাধারণ কৃতিত্ব নেপালি পর্বতারোহীদের জন্য একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে। তাঁর সাফল্য প্রমাণ করেছে যে নেপালি শেরপারা শুধু সহায়ক হিসেবে নয়, বরং বিশ্বমানের পর্বতারোহী হিসেবেও নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন।নিমা রিনজি শেরপার এই অর্জন নেপালের পর্যটন শিল্পের জন্যও একটি বড় উৎসাহ। নেপাল পর্যটন বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ধনঞ্জয় রেগমি বলেন, “নিমার সাফল্য নেপালের পর্বতারোহণ ও পর্যটন শিল্পকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। এটি বিশ্বব্যাপী নেপালের ভাবমূর্তি উন্নত করবে এবং আরও বেশি পর্যটক আকর্ষণ করবে।”
নিমা রিনজি শেরপার এই অর্জন তরুণ প্রজন্মকেও অনুপ্রাণিত করছে। নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর একটি স্কুলের ১৫ বছর বয়সী ছাত্র সুরজ তামাং বলেন, “নিমা ভাই আমাদের দেখিয়েছেন যে আমরাও বড় স্বপ্ন দেখতে পারি। আমি একদিন তাঁর মতো হতে চাই।”নিমা রিনজি শেরপার এই সাফল্য শুধু ব্যক্তিগত অর্জন নয়, এটি সমগ্র নেপালি জাতির জন্য গর্বের বিষয়। এটি প্রমাণ করেছে যে প্রতিকূল পরিস্থিতি সত্ত্বেও কঠোর পরিশ্রম ও দৃঢ় সংকল্পের মাধ্যমে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করা সম্ভব।নিমা রিনজি শেরপার পরবর্তী লক্ষ্য হলো অক্সিজেন ছাড়া সমস্ত ১৪টি শৃঙ্গ জয় করা। তিনি বলেন, “আমি এখনও অনেক কিছু শিখছি। আমার লক্ষ্য হলো অক্সিজেন ছাড়া সমস্ত শৃঙ্গ জয় করা। এটি আরও বড় চ্যালেঞ্জ হবে, কিন্তু আমি এটি করতে চাই।”নিমা রিনজি শেরপার এই অর্জন পর্বতারোহণ জগতে নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছে।
এটি প্রমাণ করেছে যে বয়স শুধুই একটি সংখ্যা এবং দৃঢ় সংকল্প থাকলে অসম্ভব বলে কিছু নেই। তাঁর সাফল্য আগামী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে এবং পর্বতারোহণ জগতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে।নিমা রিনজি শেরপার এই অর্জন শুধু নেপালের জন্য নয়, সমগ্র বিশ্বের জন্য একটি অনুপ্রেরণার উৎস। এটি প্রমাণ করেছে যে মানুষের সাহস ও দৃঢ়তা প্রকৃতির সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জকেও জয় করতে পারে। তাঁর গল্প আগামী দিনে আরও অনেক মানুষকে তাদের স্বপ্ন অনুসরণ করতে উৎসাহিত করবে।নিমা রিনজি শেরপার এই সাফল্য পর্বতারোহণ জগতে নেপালি শেরপাদের অবদানকে নতুন করে আলোকপাত করেছে। এটি প্রমাণ করেছে যে তারা শুধু সহায়ক নয়, বরং বিশ্বমানের পর্বতারোহী হিসেবেও নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন।
বিশ্বের সর্বোচ্চ রেল সেতু যে ভাবে বদলে দেবে ভারতের যোগাযোগ ব্যবস্থা
এই অর্জন নেপালি পর্বতারোহীদের জন্য নতুন সুযোগের দ্বার উন্মোচন করবে এবং তাদের প্রাপ্য স্বীকৃতি পেতে সাহায্য করবে।নিমা রিনজি শেরপার এই অসাধারণ কৃতিত্ব পর্বতারোহণের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় যোগ করেছে। এটি প্রমাণ করেছে যে বয়স কোনো বাধা নয় এবং দৃঢ় সংকল্প থাকলে যে কোনো লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব। নিমা রিনজি শেরপার গল্প আগামী দিনে আরও অনেক তরুণকে তাদের স্বপ্ন অনুসরণ করতে অনুপ্রাণিত করবে।শেষ পর্যন্ত, নিমা রিনজি শেরপার এই অর্জন শুধু একটি ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, এটি সমগ্র মানবজাতির জন্য একটি প্রেরণার উৎস। এটি প্রমাণ করেছে যে মানুষের সাহস, দৃঢ়তা ও অধ্যবসায় প্রকৃতির সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জকেও জয় করতে পারে। নিমা রিনজি শেরপার গল্প আগামী দিনে আরও অনেক মানুষকে তাদের স্বপ্ন অনুসরণ করতে এবং অসাধারণ কৃতিত্ব অর্জন করতে উৎসাহিত করবে।