Shots Fired At Trump Rally: মৃত্যুর মুখোমুখি ট্রাম্প: নির্বাচনী প্রচারে হামলা, রক্তাক্ত মাটিতে আমেরিকার গণতন্ত্র”আমেরিকার রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটে গেল। গত শনিবার (১৩ জুলাই, ২০২৪) পেনসিলভেনিয়ার বাটলার শহরে নির্বাচনী প্রচারের সময় প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর গুলি চালানো হয়। এই ঘটনায় ট্রাম্প সামান্য আহত হয়েছেন, কিন্তু তাঁর জীবন রক্ষা পেয়েছে। এই হামলায় অন্তত দুজন নিহত হয়েছেন এবং দুজন গুরুতর আহত হয়েছেন।
শনিবার সন্ধ্যায় বাটলারে একটি নির্বাচনী সমাবেশে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন ৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প। হঠাৎ করেই চারটি গুলির শব্দ শোনা যায়। একটি গুলি ট্রাম্পের ডান কানের উপরের অংশ ঘেঁষে চলে যায়। গুলি লাগার পর তাঁর মুখমণ্ডলে রক্ত দেখা যায়। সিক্রেট সার্ভিসের কর্মীরা তৎক্ষণাৎ তাঁকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেন।ট্রাম্প নিজেই সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছেন, “আমার ডান কানের উপরের অংশে গুলি বিদ্ধ হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “আমি সিক্রেট সার্ভিস এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে ধন্যবাদ জানাতে চাই তাদের দ্রুত সাড়া দেওয়ার জন্য।”
এফবিআই জানিয়েছে, হামলাকারীর নাম টমাস ম্যাথিউ ক্রুকস। তার বয়স ২০ বছর এবং তিনি পেনসিলভেনিয়ার বেথেল পার্কের বাসিন্দা। রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ক্রুকস একজন নিবন্ধিত রিপাবলিকান ভোটার ছিলেন।সিবিএস নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামলাকারী প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ ফুট দূর থেকে একটি উঁচু শেডের উপর থেকে এআর-স্টাইল রাইফেল দিয়ে গুলি চালিয়েছিল। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বিবিসিকে জানিয়েছেন, তিনি একজন লোককে রাইফেল নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলের কাছে একটি ছাদে উঠতে দেখেছিলেন।
পিটসবার্গ এফবিআই অফিসের বিশেষ এজেন্ট কেভিন রোজেক জানিয়েছেন, হামলাকারী কীভাবে একাধিক গুলি চালাতে সক্ষম হয়েছিল তা “আশ্চর্যজনক”। তিনি বলেন, “কীভাবে ব্যক্তিটি সেখানে প্রবেশ করতে পেরেছিল, কী ধরনের অস্ত্র তার ছিল, এসব বিষয়ে দীর্ঘ তদন্ত চলবে।”পুলিশ জনগণের কাছে এই হামলার যেকোনো ভিডিও ফুটেজ বা তথ্য জানানোর আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়াও, হামলাকারীর কাছে একটি সন্দেহজনক প্যাকেজ পাওয়া গেছে, যা নিরাপদে পরীক্ষা করা হচ্ছে।
এই ঘটনায় মার্কিন রাজনীতিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই হামলাকে “অসুস্থ” বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমরা এই ধরনের হিংসা কখনোই বরদাস্ত করব না।” বাইডেন জানিয়েছেন, তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন।ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও এই হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন। অন্যান্য দেশের নেতারাও এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
এই হামলা ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নানা প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ঘটনা আমেরিকার রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। তবে ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি নির্বাচনী প্রচার অব্যাহত রাখবেন।
ট্রাম্প গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর নিম্নলিখিত মন্তব্য করেছিলেন:
১. সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, “আমার ডান কানের উপরের অংশে গুলি বিদ্ধ হয়েছে।”
২. তিনি আরও বলেন, “আমি জানতাম যে কিছু একটা ভুল হয়েছে কারণ আমি একটি শোঁ শোঁ শব্দ শুনেছিলাম, গুলির শব্দ শুনেছিলাম এবং সঙ্গে সঙ্গে অনুভব করেছিলাম যে গুলিটি আমার ত্বক ছিঁড়ে যাচ্ছে।”
৩. ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের সিক্রেট সার্ভিস এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তাদের দ্রুত সাড়া দেওয়ার জন্য।
৪. তিনি বলেন, “এটা অবিশ্বাস্য যে আমাদের দেশে এমন একটি ঘটনা ঘটতে পারে।”
৫. ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নেওয়ার সময় ট্রাম্পকে “লড়াই, লড়াই” বলতে শোনা গিয়েছিল এবং তিনি জনতার উদ্দেশ্যে মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলেছিলেন।
৬. ট্রাম্প জনতার উদ্দেশ্যে একটি দৃঢ় চাহনি দিয়েছিলেন এবং মার্কিন পতাকার পটভূমিতে তাঁর মুষ্টিবদ্ধ হাত আকাশের দিকে তুলেছিলেন।
এই মন্তব্যগুলি থেকে বোঝা যায় যে ট্রাম্প গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরও সাহসী ভঙ্গি দেখিয়েছেন এবং তাঁর সমর্থকদের উদ্দেশ্যে লড়াইয়ের আহ্বান জানিয়েছেন।
১. নিরাপত্তা জোরদার:
– ট্রাম্পের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কঠোর করা হয়েছে। সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরা তাঁকে আরও ঘনিষ্ঠভাবে পাহারা দিচ্ছেন।
– সমাবেশস্থলে প্রবেশের নিয়ম আরও কড়াকড়ি করা হয়েছে।
২. ‘মার্টির’ ইমেজ:
– ট্রাম্প নিজেকে একজন ‘শহীদ’ হিসেবে তুলে ধরছেন, যিনি দেশের জন্য প্রাণ দিতে প্রস্তুত।
– তাঁর সমর্থকরা এই ঘটনাকে ট্রাম্পের ‘আমেরিকা বাঁচানোর যুদ্ধের’ অংশ হিসেবে প্রচার করছেন।
৩. বক্তব্যের তীব্রতা বৃদ্ধি:
– ট্রাম্প আরও আক্রমণাত্মক ভাষায় বক্তৃতা দিচ্ছেন।
– তিনি বলছেন, “আমেরিকা ভেঙে পড়েছে” এবং তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি এটা ঠিক করতে পারেন।
৪. সমর্থকদের উদ্দীপনা:
– ট্রাম্প তাঁর সমর্থকদের আরও বেশি করে সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন।
– তিনি বলছেন, “আমরা একসাথে লড়াই করে আমেরিকাকে আবার মহান করব।”
৫. প্রতিপক্ষের সমালোচনা:
– ট্রাম্প তাঁর প্রতিপক্ষদের আরও তীব্রভাবে সমালোচনা করছেন, বিশেষ করে বাইডেন প্রশাসনকে।
– তিনি অভিযোগ করছেন যে তাঁর প্রতিপক্ষরা এই হামলার জন্য দায়ী।
৬. জনসমর্থন বৃদ্ধি:
– এই ঘটনার পর ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা বেড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
– তিনি এই সমর্থনকে কাজে লাগিয়ে আরও বেশি সমাবেশ করছেন।
৭. ডিজিটাল প্রচার:
– সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রাম্পের প্রচার আরও জোরদার হয়েছে।
– হামলার ভিডিও ও ছবি ব্যবহার করে তাঁর ‘বীরত্বের’ কথা প্রচার করা হচ্ছে।
সামগ্রিকভাবে, এই হামলার ঘটনা ট্রাম্পের প্রচারকে আরও তীব্র ও আবেগপ্রবণ করে তুলেছে। তিনি নিজেকে একজন ‘শহীদ নেতা’ হিসেবে তুলে ধরছেন, যা তাঁর সমর্থকদের মধ্যে উদ্দীপনা সৃষ্টি করছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই ধরনের হামলা বিরল নয়। কিন্তু একজন প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের উপর এমন হামলা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। এই ঘটনা আমেরিকার গণতন্ত্রের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। আগামী দিনগুলোতে এই হামলার প্রভাব কতটা গভীর হবে, তা নিয়ে সবার মধ্যে উৎকণ্ঠা রয়েছে। তবে এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা এবং রাজনৈতিক সহিংসতা রোধ করা। আমেরিকার গণতন্ত্র যেন আবারও রক্তাক্ত না হয়, সেদিকে নজর দেওয়া এখন সময়ের দাবি।