Kidney damage symptoms: কিডনি আমাদের শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটি রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ অপসারণ করে এবং শরীরের ভিতরে রাসায়নিক ভারসাম্য বজায় রাখে। কিন্তু আধুনিক জীবনযাত্রা, খারাপ খাদ্যাভ্যাস এবং বিভিন্ন রোগের কারণে কিডনির ক্ষতি হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাথমিক পর্যায়ে কিডনি রোগের লক্ষণগুলি চিনতে পারলে এই মারাত্মক রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। তাই আসুন জেনে নেওয়া যাক কিডনি ড্যামেজের ১০টি প্রারম্ভিক লক্ষণ যা আপনাকে সতর্ক করবে।
কিডনি যখন সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, তখন শরীরে টক্সিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। এর ফলে আপনি সারাক্ষণ ক্লান্ত ও দুর্বল বোধ করতে পারেন। এমনকি দৈনন্দিন কাজেও মনোযোগ দিতে সমস্যা হতে পারে। ডাঃ সুদীপ্ত চক্রবর্তী, নেফ্রোলজিস্ট, বলেন, “হঠাৎ করে অস্বাভাবিক ক্লান্তি অনুভব করলে তা কিডনি সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। এক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।”
Kidney: গরমকালে কিভাবে সুস্থ রাখবেন কিডনি? [বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ]
কিডনি ড্যামেজের আরেকটি প্রাথমিক লক্ষণ হল ঘুমের সমস্যা। রাতে ঘুম না আসা বা ঘন ঘন ঘুম ভেঙে যাওয়া এর অন্তর্ভুক্ত। এর কারণ হল, কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে শরীরে টক্সিন জমা হয় যা ঘুমের প্যাটার্নকে প্রভাবিত করে।
কিডনির কাজ হল শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি ও বর্জ্য পদার্থ অপসারণ করা। কিন্তু কিডনি ড্যামেজের ফলে এই কাজ ব্যাহত হয়। ফলে ত্বক শুষ্ক ও চুলকানিযুক্ত হয়ে ওঠে। ডাঃ অনির্বাণ মুখার্জি, ডার্মাটোলজিস্ট, জানান, “অস্বাভাবিক ত্বকের শুষ্কতা ও চুলকানি কিডনি সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে।”
কিডনি যখন সঠিকভাবে কাজ করে না, তখন শরীরে ইউরিয়ার মাত্রা বেড়ে যায়। এর ফলে মুখে একটি খারাপ স্বাদ অনুভূত হয়। এই স্বাদকে প্রায়ই “uremic breath” বলা হয়। এছাড়া খাবারের স্বাদেও পরিবর্তন আসতে পারে।
কিডনি ড্যামেজের কারণে শরীরে সোডিয়াম জমা হতে থাকে। এর ফলে পা ফুলে যেতে পারে। বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে উঠে পায়ে ফোলাভাব দেখা দিতে পারে। ডাঃ দেবাশিস মুখোপাধ্যায়, কার্ডিওলজিস্ট, বলেন, “পায়ে হঠাৎ করে ফোলাভাব দেখা দিলে তা কিডনি সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।”
কিডনি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিডনি ড্যামেজের ফলে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ আবার কিডনিকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করা উচিত।
কিডনি ড্যামেজের একটি প্রধান লক্ষণ হল প্রস্রাবের পরিবর্তন। এর মধ্যে রয়েছে:
ডাঃ সৌমিত্র ঘোষ, ইউরোলজিস্ট, বলেন, “প্রস্রাবের যেকোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন লক্ষ্য করলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।”
অনেক সময় কিডনি ড্যামেজের কারণে পিঠের নিচের দিকে ব্যথা অনুভূত হয়। এই ব্যথা সাধারণত পিঠের উভয় পাশে হয়। তবে এই ব্যথা অন্য কারণেও হতে পারে, তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
কিডনি ড্যামেজের ফলে শরীরে টক্সিন জমা হতে থাকে। এর ফলে বমি বমি ভাব, বমি এবং ক্ষুধামন্দা দেখা দিতে পারে। ডাঃ অর্ণব সেন, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট, জানান, “দীর্ঘদিন ধরে বমি বমি ভাব ও ক্ষুধামন্দা থাকলে তা কিডনি সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।”
রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বৃদ্ধি কিডনি ড্যামেজের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করে এটি জানা যায়। সাধারণত পুরুষদের ক্ষেত্রে ০.৭ থেকে ১.৩ mg/dL এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ০.৬ থেকে ১.১ mg/dL এর মধ্যে থাকা স্বাভাবিক।
ক্রিয়েটিনিন স্তর বাড়ছে? জানুন এর কারণ ও প্রতিকার
কিডনি ড্যামেজ প্রতিরোধ করতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নেওয়া যেতে পারে:
ডাঃ সুমন চক্রবর্তী, নেফ্রোলজিস্ট, বলেন, “কিডনি ড্যামেজের প্রাথমিক লক্ষণগুলি চিনতে পারলে এবং সময়মত চিকিৎসা নিলে এই রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। তাই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা অত্যন্ত জরুরি।”সর্বশেষে বলা যায়, কিডনি আমাদের শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এর যত্ন নেওয়া আমাদের দায়িত্ব। উপরোক্ত লক্ষণগুলি লক্ষ্য করলে এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করলে আমরা কিডনি ড্যামেজ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারব। মনে রাখবেন, সুস্থ কিডনি মানেই সুস্থ জীবন।
মন্তব্য করুন