Men’s silent depression symptoms: পুরুষদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে চলছে এক নীরব সংকট। প্রতি বছর প্রায় ৬০ লক্ষ পুরুষ হতাশায় ভুগছেন, কিন্তু অনেকেই তা বুঝতে পারেন না বা স্বীকার করতে চান না। এই নীরব হতাশা পুরুষদের জীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। আসুন জেনে নেই পুরুষদের নীরব হতাশার ৭টি প্রধান সঙ্কেত এবং এর পিছনের কারণগুলি।
অনেক পুরুষ হতাশায় ভুগলে নিজেদের কাজে ডুবিয়ে রাখেন। তারা অতিরিক্ত কাজ করেন, বাড়িতেও কাজ নিয়ে আসেন এবং কাজকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করেন নিজেদের মেজাজ খারাপ থাকার জন্য। এটি তাদের অন্যান্য সমস্যা থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে।
হতাশায় ভুগছেন এমন পুরুষরা প্রায়ই ঝুঁকিপূর্ণ আচরণে লিপ্ত হন। যেমন – দ্রুত গাড়ি চালানো, অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক, মাদক সেবন বা জুয়া খেলা। এই ধরনের আচরণ তাদের মানসিক যন্ত্রণা থেকে সাময়িক মুক্তি দেয়।
“নীরব মহামারী”: ছত্রাক সংক্রমণ পরবর্তী স্বাস্থ্য সংকট হতে পারে, বিজ্ঞানীরা সতর্ক করছেন
নীরব হতাশায় ভুগছেন এমন পুরুষরা ধীরে ধীরে নিজেদের সামাজিক কার্যক্রম থেকে সরিয়ে নেন। তারা বন্ধুদের সাথে দেখা করা বা পারিবারিক অনুষ্ঠানে যাওয়া এড়িয়ে চলেন। এটি তাদের একাকীত্ব আরও বাড়িয়ে তোলে।
অনেক পুরুষ হতাশার কারণে শারীরিক ব্যথায় ভুগতে পারেন। পিঠব্যথা, মাথাব্যথা বা ঘুমের সমস্যা যা সাধারণ চিকিৎসায় ভালো হয় না, তা হতাশার লক্ষণ হতে পারে।
হতাশায় ভুগছেন এমন পুরুষরা প্রায়ই অস্বাভাবিক রাগান্বিত ও চিড়চিড়ে হয়ে ওঠেন। তারা সহজেই মেজাজ হারান, রাস্তায় গাড়ি চালানোর সময় রেগে যান বা পরিবারের সদস্যদের সাথে অপ্রয়োজনীয় ঝগড়া করেন।
অনেক পুরুষ হতাশা কাটাতে অতিরিক্ত মদ্যপান করেন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পুরুষরা মদ্যপানজনিত কারণে মৃত্যুর ঝুঁকিতে থাকেন মহিলাদের তুলনায় দ্বিগুণ বেশি।
নীরব হতাশায় ভুগছেন এমন পুরুষদের আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মান কমে যায়। তারা নিজেদের অযোগ্য ও অকর্মণ্য মনে করেন এবং জীবনের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন।
সমাজ পুরুষদের কাছ থেকে শক্তিশালী ও আবেগহীন থাকার প্রত্যাশা করে। এর ফলে অনেক পুরুষ নিজেদের আবেগ প্রকাশ করতে পারেন না এবং মানসিক সমস্যা নিয়ে কথা বলতে লজ্জাবোধ করেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, ২৬% পুরুষ গত এক বছরে কোনো স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর কাছে যাননি। এর ফলে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা ধরা পড়ে না এবং চিকিৎসা হয় না।
অনেক পুরুষ হতাশার লক্ষণগুলি চেপে রাখেন বা অস্বীকার করেন। তারা মনে করেন এটি দুর্বলতার লক্ষণ এবং নিজেরাই এটি কাটিয়ে উঠতে পারবেন।
অনেকে মনে করেন হতাশা শুধুমাত্র দুঃখ বোধ করা। কিন্তু পুরুষদের ক্ষেত্রে এটি ভিন্নভাবে প্রকাশ পেতে পারে, যেমন – ক্লান্তি, খিটখিটে মেজাজ বা শারীরিক ব্যথা।
পুরুষদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। তাদের বুঝতে হবে যে মানসিক সমস্যা নিয়ে কথা বলা কোনো দুর্বলতা নয়।
হতাশার লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত পেশাদার সাহায্য নিতে হবে। মনোবিজ্ঞানী বা মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিলে অনেক ক্ষেত্রেই হতাশা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম খাবার ও পর্যাপ্ত ঘুম মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ বজায় রাখা ও আনন্দদায়ক কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখা উচিত।
কেনাকাটায় পুরুষ বিরক্ত হয় ২৬ মিনিটে, নারীরা ২ ঘণ্টাও অবিচল!
পরিবার ও বন্ধুরা যদি পুরুষদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন, তাহলে অনেকেই নিজেদের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন।
পুরুষদের নীরব হতাশা একটি গুরুতর সমস্যা যা সমাজের সবার মিলে মোকাবেলা করা প্রয়োজন। এর লক্ষণগুলি চিনতে পারলে এবং সঠিক পদক্ষেপ নিলে অনেক পুরুষকে এই সমস্যা থেকে মুক্তি দেওয়া সম্ভব। মনে রাখতে হবে, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলা কোনো দুর্বলতা নয়, বরং এটি একটি শক্তির পরিচয়। আসুন আমরা সবাই মিলে একটি সুস্থ ও সচেতন সমাজ গড়ে তুলি যেখানে পুরুষরা নিঃসঙ্কোচে নিজেদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলতে পারবেন।
মন্তব্য করুন