সিয়ারাম বাবা: ৯৪ বছর বয়সে প্রয়াত নর্মদা তীরের সাধু

Who is Siyaram Baba?: সিয়ারাম বাবা নামে পরিচিত এক বিখ্যাত সাধু সম্প্রতি ৯৪ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন। তিনি মধ্যপ্রদেশের খরগোন জেলার নর্মদা নদীর তীরে অবস্থিত ভাট্টিয়ান আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তাঁর…

Avatar

 

Who is Siyaram Baba?: সিয়ারাম বাবা নামে পরিচিত এক বিখ্যাত সাধু সম্প্রতি ৯৪ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন। তিনি মধ্যপ্রদেশের খরগোন জেলার নর্মদা নদীর তীরে অবস্থিত ভাট্টিয়ান আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে সারা দেশে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

সিয়ারাম বাবার জীবন ও কর্ম

সিয়ারাম বাবা ১৯৩৩ সালে গুজরাটের ভাবনগরে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি আধ্যাত্মিক জীবন শুরু করেন। গুরুর কাছে শিক্ষা গ্রহণ ও বিভিন্ন তীর্থস্থান ভ্রমণের পর ১৯৬২ সালে তিনি ভাট্টিয়ানে এসে পৌঁছান। এখানে একটি গাছের নিচে তিনি কঠোর তপস্যা শুরু করেন।সিয়ারাম বাবা হনুমান ভক্ত হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি প্রতিদিন রামায়ণ পাঠ করতেন এবং নর্মদা নদীর প্রতি গভীর ভক্তি পোষণ করতেন। তাঁর জীবন ছিল সরলতা, ভক্তি ও নিঃস্বার্থ সেবার প্রতীক।

বাবার অসাধারণ জীবনযাপন

সিয়ারাম বাবার জীবনযাপন ছিল অত্যন্ত সাধারণ ও কঠোর। তিনি সারা বছর শুধুমাত্র একটি লঙ্গোট পরে থাকতেন। কঠিন শীত বা গ্রীষ্মেও তিনি অতিরিক্ত কোনো পোশাক পরতেন না। তাঁর দৈনন্দিন জীবনযাপন ছিল অত্যন্ত সাদাসিধে – নিজের খাবার নিজেই রান্না করতেন এবং সমস্ত কাজ নিজে হাতে করতেন।বাবার জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল, তিনি ১২ বছর ধরে একটি পায়ে দাঁড়িয়ে তপস্যা করেছিলেন। এই কঠোর সাধনার মাধ্যমে তিনি তাঁর আধ্যাত্মিক শক্তি বৃদ্ধি করেছিলেন।

ভোলে বাবার ‘চরণধূলি’তে রক্তের দাগ! হাথরাসে ১২৩ জনের মৃত্যুর পর কী হবে স্বঘোষিত ধর্মগুরুর?

দান গ্রহণের অভিনব পদ্ধতি

সিয়ারাম বাবার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল তাঁর দান গ্রহণের পদ্ধতি। তিনি শুধুমাত্র ১০ টাকা দান হিসেবে গ্রহণ করতেন। যদি কেউ ১০ টাকার বেশি দিতে চাইতেন, তিনি অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দিতেন। এই অর্থ তিনি নর্মদা ঘাটের সংস্কার ও বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে ব্যয় করতেন।একবার আর্জেন্টিনা ও অস্ট্রিয়া থেকে আগত কিছু ভক্ত তাঁকে ৫০০ টাকা দান করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাবা শুধু ১০ টাকা নিয়ে বাকি টাকা ফেরত দিয়েছিলেন। এই ঘটনা তাঁর নীতিনিষ্ঠা ও সততার প্রমাণ দেয়।

আশ্রম নির্মাণ ও সামাজিক কর্মকাণ্ড

সিয়ারাম বাবা শুধু আধ্যাত্মিক সাধনায় নিমগ্ন থাকতেন না, তিনি সমাজসেবায়ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তিনি নর্মদা নদীর তীরে একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা ক্রমে একটি গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল।বাবা একবার আশ্রমের জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ বাবদ ২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা পেয়েছিলেন। তিনি সেই সমস্ত অর্থ দান করে দিয়েছিলেন। এছাড়াও একটি নির্মাণাধীন মন্দিরের শিখর নির্মাণের জন্য তিনি ৫ লাখ টাকা দান করেছিলেন।

সিয়ারাম নামের উৎপত্তি

সিয়ারাম বাবার নামের পিছনে একটি আকর্ষণীয় কাহিনী রয়েছে। বলা হয়, তিনি ১২ বছর ধরে মৌনব্রত পালন করেছিলেন। যখন তিনি সেই ব্রত ভঙ্গ করেন, তখন তাঁর মুখ থেকে প্রথম যে শব্দটি বের হয় তা হল ‘সিয়ারাম’। এরপর থেকেই স্থানীয় লোকেরা তাঁকে সিয়ারাম বাবা নামে ডাকতে শুরু করেন।

শেষ দিনগুলি ও মৃত্যু

সিয়ারাম বাবা ২০২৪ সালের ১১ ডিসেম্বর সকাল ৬:১০ মিনিটে তাঁর আশ্রমে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর কয়েকদিন আগে তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। প্রথমে তাঁকে সানাওয়াদের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁর ইচ্ছানুসারে তাঁকে আশ্রমে ফিরিয়ে আনা হয়, যেখানে জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাঁর চিকিৎসা করছিলেন।

শেষকৃত্য ও শ্রদ্ধাঞ্জলি

সিয়ারাম বাবার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে হাজার হাজার ভক্ত তাঁর শেষ দর্শনের জন্য আশ্রমে ভিড় করেন। মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব সহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানান।বাবার শেষকৃত্য ১১ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় আশ্রম প্রাঙ্গণে সম্পন্ন হয়। এই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব উপস্থিত ছিলেন। তিনি বাবার মৃত্যুকে সমাজ ও সন্ত সমাজের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি বলে অভিহিত করেন।

কেন লোক চক্ষুর অন্তরালে থাকেন সৌমিত্র চ্যাটার্জীর পুত্র সৌগত চ্যাটার্জী? এই চমকপ্রদ সত্য জানলে চমকে উঠবে

সিয়ারাম বাবার প্রভাব ও উত্তরাধিকার

সিয়ারাম বাবার জীবন ও শিক্ষা অসংখ্য মানুষকে প্রভাবিত করেছে। তাঁর সরল জীবনযাপন, নিঃস্বার্থ সেবা ও গভীর আধ্যাত্মিকতা অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে থেকে যাবে। তাঁর প্রতিষ্ঠিত আশ্রম আজও হাজার হাজার ভক্তের কাছে একটি পবিত্র তীর্থস্থান।বাবার মৃত্যুর পর তাঁর অনুগামীরা তাঁর আদর্শ ও শিক্ষা প্রচার করে যাচ্ছেন। তাঁর জীবনের উদাহরণ আজও বহু মানুষকে আধ্যাত্মিক পথে অনুপ্রাণিত করছে। নর্মদা নদীর তীরে তাঁর আশ্রম একটি গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক কেন্দ্র হিসেবে অব্যাহত রয়েছে।

সিয়ারাম বাবার জীবন ছিল সরলতা, ত্যাগ ও সেবার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাঁর মৃত্যুতে ভারতের আধ্যাত্মিক জগতে একটি যুগের অবসান ঘটল। কিন্তু তাঁর শিক্ষা ও আদর্শ আজও লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনে আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করছে। সিয়ারাম বাবার জীবন থেকে আমরা শিখতে পারি যে, জীবনের প্রকৃত অর্থ রয়েছে সরলতা, সেবা ও আত্মত্যাগে। তাঁর জীবন ও কর্ম চিরকাল মানুষের স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করবে।
About Author
Avatar

আমাদের স্টাফ রিপোর্টারগণ সর্বদা নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন যাতে আপনি বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের সর্বশেষ ও গুরুত্বপূর্ণ খবর পেতে পারেন। তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রতিশ্রুতি আমাদের ওয়েবসাইটকে একটি বিশ্বস্ত তথ্যের উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।তারা নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ রিপোর্টিংয়ে বিশ্বাসী, দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক প্রতিবেদন তৈরিতে সক্ষম