কিং’স কলেজ লন্ডনের গবেষকরা সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা প্রকাশ করেছেন যা দেখিয়েছে যে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ১৬-১৮ বছর বয়সী প্রায় ২০% কিশোর-কিশোরী স্মার্টফোন ব্যবহারে সমস্যাজনক আচরণ প্রদর্শন করছে, যা তাদের বিষণ্নতা, উদ্বেগ এবং অনিদ্রার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।গবেষণার প্রধান লেখক প্রফেসর বেন কার্টার বলেছেন, “কিশোর-কিশোরীদের স্মার্টফোন ব্যবহার পিতামাতা ও অভিভাবকদের জন্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয়। আমরা দেখেছি যে সমস্যাজনক স্মার্টফোন ব্যবহার উদ্বেগ, বিষণ্নতা এবং অনিদ্রার সাথে সম্পর্কিত।”
গবেষকরা দুটি আলাদা গবেষণা পরিচালনা করেছেন – একটি ১৬-১৮ বছর বয়সী ৬৫৭ জন কিশোর-কিশোরীর উপর এবং অন্যটি ১৩-১৬ বছর বয়সী ৬৯ জনের উপর। উভয় গবেষণাতেই স্মার্টফোনের সমস্যাজনক ব্যবহার এবং মানসিক স্বাস্থ্যের মধ্যে একটি স্পষ্ট সম্পর্ক পাওয়া গেছে।
১৬-১৮ বছর বয়সী গ্রুপে ১৮.৭% অংশগ্রহণকারী সমস্যাজনক স্মার্টফোন ব্যবহারের (প্রবলেমেটিক স্মার্টফোন ইউজ বা PSU) লক্ষণ দেখিয়েছে। এই গ্রুপের মধ্যে যারা PSU রিপোর্ট করেছে তারা অন্যদের তুলনায় দ্বিগুণ বেশি উদ্বেগ এবং প্রায় তিনগুণ বেশি বিষণ্নতায় ভুগছে।১৩-১৬ বছর বয়সী গ্রুপে ১৪.৫% PSU রিপোর্ট করেছে। এই গ্রুপে PSU-এর লক্ষণ দেখানো কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ৪৪% উদ্বেগের লক্ষণ দেখিয়েছে, যেখানে PSU না থাকা গ্রুপে এই হার ছিল ২৬%। একইভাবে, PSU গ্রুপে ৫৬% বিষণ্নতার লক্ষণ দেখিয়েছে, অন্য গ্রুপে যা ছিল ৩৬%।
গবেষণায় দেখা গেছে যে PSU-এর লক্ষণ দেখানো কিশোর-কিশোরীরা TikTok এবং Instagram-এ অন্যদের তুলনায় বেশি সময় ব্যয় করে। তবে WhatsApp, গেমিং বা সাধারণ ইন্টারনেট ব্যবহারে তেমন পার্থক্য নেই। উল্লেখযোগ্যভাবে, গবেষকরা স্ক্রিন টাইম এবং PSU-এর মধ্যে পার্থক্য করেছেন। স্ক্রিন টাইম শুধুমাত্র স্মার্টফোনে ব্যয় করা সময়কে বোঝায়, যেখানে PSU হল স্মার্টফোন ব্যবহার সংক্রান্ত সমস্যাজনক আচরণ। গবেষণায় দেখা গেছে যে স্ক্রিন টাইমের সাথে উদ্বেগ বা বিষণ্নতার কোনো সম্পর্ক নেই, তবে অনিদ্রার সাথে একটি সম্পর্ক রয়েছে ।PSU-এর লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:
স্মার্টফোন না থাকলে উদ্বিগ্ন বোধ করা।
স্মার্টফোনে ব্যয় করা সময় নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা।
ক্রমাগত বেশি সময় ব্যবহার করা কিন্তু সন্তুষ্টি না পাওয়া।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজের পরিবর্তে স্মার্টফোন ব্যবহার করা।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে কিশোর-কিশোরীরা নিজেরাই তাদের স্মার্টফোন ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন:
১৬-১৮ বছর বয়সী গ্রুপের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ জানিয়েছে যে তারা স্মার্টফোন ব্যবহার কমানোর চেষ্টা করেছে।
PSU লক্ষণ দেখানো ১৬-১৮ বছর বয়সীদের মধ্যে পাঁচগুণ বেশি সংখ্যক জানিয়েছে যে তারা স্মার্টফোন ব্যবহার কমাতে সাহায্য চায়।
১৩-১৬ বছর বয়সী গ্রুপের ৯০% স্মার্টফোন ব্যবহার সীমিত করার চেষ্টা করেছে।
গবেষকরা স্মার্টফোন ব্যবহার কমানোর কিছু কৌশলের কার্যকারিতা পরীক্ষা করেছেন। সবচেয়ে কার্যকর কৌশলগুলির মধ্যে রয়েছে:
স্মার্টফোন ”Do Not Disturb” মোডে রাখা।
নোটিফিকেশন বন্ধ করা।
ঘুমানোর সময় স্মার্টফোন অন্য ঘরে রাখা।