বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দ্বিতীয়বারের মতো ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের সভাপতি হতে চলেছেন প্রাক্তন ভারতীয় অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি। গত রবিবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর তার বিরুদ্ধে কোনো প্রার্থী না হওয়ায় বঙ্গ ক্রিকেটের শীর্ষ পদে ফিরতে চলেছেন মহারাজ। আগামী ২২ সেপ্টেম্বর সিএবির বার্ষিক সাধারণ সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নেবেন তিনি।
ছয় বছর পর ক্রিকেট প্রশাসনে ফিরছেন সৌরভ, যিনি এর আগে ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সিএবির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন। পরবর্তীতে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের সভাপতি হওয়ার জন্য তিনি সিএবির পদ ছেড়ে দিয়েছিলেন। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বিসিসিআই সভাপতির দায়িত্ব পালনের পর এবার আবার স্থানীয় ক্রিকেট প্রশাসনে ফিরে আসছেন প্রাক্তন তারকা ব্যাটসম্যান।
লোধা কমিটির নিয়মানুসারে বর্তমান সভাপতি স্নেহাশিস গাঙ্গুলি প্রায় ছয় বছর দায়িত্ব পালনের পর কুলিং পিরিয়ডে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এই সুযোগেই তার ছোট ভাই সৌরভ আবার সিএবির নেতৃত্বে ফিরে আসছেন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার বিষয়ে সৌরভ বলেছেন, “সমর্থনের জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানাই। সিএবিতে কোনো বিপক্ষ নেই। সকলেই এই সংস্থার সদস্য।”
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সৌরভ উল্লেখ করেছেন যে, ইডেন গার্ডেনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ভারতের টেস্ট ম্যাচ, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচ এবং বেঙ্গল প্রো টি২০ লিগের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টগুলো আসছে। তিনি জানিয়েছেন, বাংলা দলের পুরনো গৌরব ফেরানোই তাদের মূল লক্ষ্য।
সৌরভের প্যানেলে নিশ্চিত হয়েছেন নীতীশ রঞ্জন দত্ত সহ-সভাপতি পদে, বাবলু কোলে সচিব পদে, মদন মোহন ঘোষ যুগ্ম সচিব পদে এবং সঞ্জয় দাস কোষাধ্যক্ষ পদে। এই প্যানেল নিয়ে সৌরভ বলেছেন, “বাবলু কোলে খুবই অভিজ্ঞ। ওর মতো অভিজ্ঞ এবং জ্ঞানী লোককে পাশে পাওয়া সম্মানের ব্যাপার। নীতীশ রঞ্জন দত্ত, মদন মোহন ঘোষ এবং সঞ্জয় দাস প্রত্যেকেই বাংলার ক্রিকেটকে দীর্ঘ দিন চেনে।”
সচিব পদ নিয়ে প্রাথমিকভাবে দুটি নাম নিয়ে জল্পনা ছিল – বাবলু কোলে এবং সঞ্জয় দাস। বাবলু কোলে এর আগেও সিএবির সচিব ছিলেন এবং তার অভিজ্ঞতার কারণে অনেকেই তাকেই সচিব পদের জন্য উপযুক্ত মনে করেছিলেন। অন্যদিকে, সঞ্জয় দাস সিএবিতে দীর্ঘদিন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন এবং জুনিয়র ক্রিকেটের চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেছেন।
নীতীশ রঞ্জন দত্ত সহ-সভাপতির পদ পেয়েছেন, যিনি সিএবির কাজকর্মে দীর্ঘদিন যুক্ত রয়েছেন। মদন মোহন ঘোষ, যিনি প্রাক্তন ক্রিকেটার এবং হোয়াইট বর্ডার ক্লাবের প্রতিনিধি, তিনি যুগ্ম সচিব পদে নিয়োগ পেয়েছেন। সঞ্জয় দাস, যিনি পূর্ব রেলওয়ের প্রতিনিধি এবং সৌরভের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, তিনি কোষাধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব নিয়েছেন।
এই নির্বাচনে বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে কারণ জাতীয় ক্রীড়া আইন এখনও সিএবিতে পুরোপুরি কার্যকর হয়নি, তাই লোধা কমিটির নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালিত হয়েছে। এই নিয়ম অনুযায়ী সৌরভ আরও প্রায় এক বছর সিএবির পদে থাকতে পারবেন।
আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর বিসিসিআইয়ের বার্ষিক সাধারণ সভায় সিএবির প্রতিনিধিত্ব করবেন সৌরভ। বোর্ডকে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে এই সভায় বাংলার হয়ে উপস্থিত থাকবেন তিনি। এটি তার ক্রিকেট প্রশাসনে পুনরায় সক্রিয় হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, সৌরভ বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকার ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ এসএ টোয়েন্টির দল প্রিটোরিয়া ক্যাপিটালসের প্রধান কোচের দায়িত্বও পালন করছেন। এছাড়াও তিনি আইসিসি পুরুষ ক্রিকেট কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
সিএবিতে হওয়া আর্থিক দুর্নীতির প্রসঙ্গে সৌরভ জানিয়েছেন, “কোনো সংস্থায় এ রকম হয় না। সব সামলেই এগিয়ে যেতে হবে।” তিনি ভবিষ্যতে কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্ল এবং ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা বলে পারফরম্যান্সের উন্নতির জন্য কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এভাবে ক্রিকেট প্রশাসনে ফিরে আসা সৌরভের জন্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। তার অভিজ্ঞতা এবং নেতৃত্বের গুণাবলী বাংলার ক্রিকেটের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।