ক্যালেন্ডারে এখনও বসন্তকাল হলেও দক্ষিণবঙ্গে আগাম গ্রীষ্মের দাপট শুরু হয়েছে। শুক্রবার দক্ষিণবঙ্গের অন্তত আটটি জায়গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি বা তার বেশি ছিল। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, দমদমে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়েছে, যা পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রামের চেয়েও বেশি। আলিপুর আবহাওয়া দফতর শনিবার দক্ষিণবঙ্গের সাতটি জেলায় তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করেছে।
চৈত্র মাসের ১৫ তারিখ মাত্র পেরিয়েছে, কিন্তু আবহাওয়া ইতিমধ্যেই গ্রীষ্মের আগমন ঘোষণা করেছে। তাপমাত্রার পারদ ছাড়িয়ে গেছে ৪০ ডিগ্রির গণ্ডি। শুক্রবার দমদমে যেখানে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি, সেখানে পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রামে তাপমাত্রা ছিল যথাক্রমে ৩৯.৩ ডিগ্রি এবং ৩৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস1। এক কথায় শহরতলির এলাকায় গরম বেশি অনুভূত হচ্ছে মফস্বলের তুলনায়।
তাপমাত্রার এই চড়াই নামার খেলায় সবচেয়ে বেশি উত্তাপ রেকর্ড করা হয়েছে পানাগড়ে, যেখানে পারদ উঠেছে ৪১.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। এছাড়াও সিউড়িতে ৪১ ডিগ্রি, মেদিনীপুরে ৪০.৫ ডিগ্রি, কলাইকুন্ডায় ৪০.৪ ডিগ্রি, বাঁকুড়া ও আসানসোলে ৪০.২ ডিগ্রি এবং মগড়ায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে1। এই তথ্যগুলি স্পষ্ট করে দেখাচ্ছে যে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় অস্বাভাবিক উত্তাপ বাড়ছে।
আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, শনিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমান এবং বীরভূম – এই সাতটি জেলায় তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি তৈরি হবে। এছাড়া কলকাতাসহ দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য জেলাগুলিতেও গরমের অস্বস্তি বজায় থাকবে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় গাঙ্গেয় বঙ্গের জেলাগুলিতে তাপমাত্রা আরও দুই থেকে তিন ডিগ্রি বৃদ্ধি পাবে।
কলকাতার আবহাওয়া ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। শুক্রবার শহরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ২.৯ ডিগ্রি বেশি। বৃহস্পতিবার এর চেয়ে প্রায় দু’ডিগ্রি কম ছিল। শনিবার সকালে শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৬.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ১.৮ ডিগ্রি বেশি। আবহবিদদের অনুমান অনুযায়ী, আগামী কয়েকদিন এই গরম স্বাভাবিকের চেয়ে ২-৪ ডিগ্রি বেশি থাকবে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, উত্তরবঙ্গে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন দেখা যাচ্ছে। দার্জিলিং এবং জলপাইগুড়ির কিছু এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে শনিবার। দার্জিলিং ও কালিম্পংয়ে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়িতে বিক্ষিপ্তভাবে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি এবং কোচবিহারের দু-এক জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি হতে পারে। আবহবিদরা জানিয়েছেন, উত্তরবঙ্গের আট জেলায় আগামী পাঁচ দিন তাপমাত্রার কোনও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হবে না।
গরমের এই দাপট মোকাবিলা করতে সাধারণ মানুষের সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। বিশেষ করে যারা দীর্ঘ সময় রোদে বাইরে থাকেন, তাঁদের অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। পর্যাপ্ত জলপান, সূর্যতাপ থেকে সুরক্ষা এবং শরীর ঠাণ্ডা রাখার ব্যবস্থা নিতে হবে। চিকিৎসকরা পরামর্শ দিচ্ছেন, দিনের বেলা যতটা সম্ভব ঘরের ভিতরে থাকতে এবং অপরিহার্য কাজ ছাড়া বাইরে না বেরোতে।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, মার্চ মাসেই এত তীব্র গরম অস্বাভাবিক। সাধারণত এপ্রিল-মে মাসে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়ায়, কিন্তু এবার মার্চেই এই অবস্থা দেখা দিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হিসেবে এই অস্বাভাবিক আবহাওয়া দেখা দিয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর থেকে জানানো হয়েছে, আগামী ৪-৫ দিন পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গে এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে। স্বাভাবিকের তুলনায় তাপমাত্রা ৩-৪ ডিগ্রি বেশি থাকবে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়1। শহরবাসীদের জন্য বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে, যেহেতু কংক্রিটের জঙ্গলে তাপমাত্রা আরও বেশি অনুভূত হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অস্বাভাবিক গরমের সময় শিশু, বয়স্ক এবং দীর্ঘ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। তাপাঘাত ও সানস্ট্রোক থেকে বাঁচতে বিকেলের দিকে শারীরিক পরিশ্রম এড়িয়ে চলা উচিত। যে সকল কাজ অপরিহার্য, সেগুলি সকাল বা সন্ধ্যার সময় করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।