sprouted potatoes safe to eat : প্রথমেই বলা দরকার, আমাদের রান্নাঘরের নিত্যসঙ্গী আলু, পেঁয়াজ ও রসুন—এই তিনটি সবজি প্রায়ই অঙ্কুরিত হয়ে যায়। অনেকেই দ্বিধায় পড়েন, এগুলো খাওয়া ঠিক হবে কিনা। আজকের আলোচনায় ‘অঙ্কুরিত আলু, পেঁয়াজ ও রসুন’ (Sprouted Potato, Onion & Garlic) খাওয়া নিরাপদ কি না, বিজ্ঞান কী বলছে, এবং কোনটা খাওয়া উচিত, কোনটা নয়—সবকিছুই থাকছে বিস্তারিতভাবে।
অঙ্কুরিত আলু, পেঁয়াজ ও রসুন: মূল তথ্য এক নজরে
- অঙ্কুরিত আলু: সাধারণত খাওয়া নিরাপদ নয়, কারণ এতে বিষাক্ত যৌগ (solanine ও chaconine) বেড়ে যায়, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
- অঙ্কুরিত পেঁয়াজ: সাধারণত নিরাপদ, তবে স্বাদ ও গন্ধে পরিবর্তন আসতে পারে। পচা বা নরম হলে অবশ্যই ফেলে দিতে হবে।
- অঙ্কুরিত রসুন: খাওয়া নিরাপদ, বরং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বাড়ে। তবে পুরনো বা নরম হলে না খাওয়াই ভালো।
অঙ্কুরিত আলু: কেন ঝুঁকিপূর্ণ?
আলু অঙ্কুরিত হলে এর মধ্যে থাকা গ্লাইকোঅ্যালকালয়েড (solanine ও chaconine) মাত্রা বেড়ে যায়। এই যৌগগুলো স্বল্পমাত্রায় উপকারী হলেও বেশি হলে বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে। অঙ্কুরিত আলু খেলে হতে পারে:
- বমি, ডায়রিয়া, পেটব্যথা
- মাথাব্যথা, বিভ্রান্তি, স্নায়বিক সমস্যা
- অতিরিক্ত খেলে হৃদযন্ত্র ও স্নায়ুতন্ত্রে মারাত্মক প্রভাব, এমনকি মৃত্যুও ঘটতে পারে
বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের জন্য অঙ্কুরিত আলু অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভাবস্থায় নিয়মিত অঙ্কুরিত আলু খেলে সন্তানের জন্মগত ত্রুটি (Neural Tube Defect, Orofacial Cleft) হওয়ার ঝুঁকি ২-৪ গুণ বেড়ে যায়। তাই অঙ্কুরিত আলু যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলাই নিরাপদ।
কখনো কি খাওয়া যায়?
কিছু বিশেষজ্ঞ বলছেন, যদি আলু শক্ত থাকে, অঙ্কুর ছোট হয় এবং সবুজ না হয়, তাহলে অঙ্কুর ও আশেপাশের অংশ কেটে ফেলে রান্না করা যেতে পারে। তবে ঝুঁকি পুরোপুরি এড়ানো যায় না। আলু নরম, কুঁচকে গেলে বা সবুজ হলে অবশ্যই ফেলে দিন।
অঙ্কুরিত পেঁয়াজ: কতটা নিরাপদ?
পেঁয়াজ অঙ্কুরিত হলে এর স্বাদ ও গন্ধ কিছুটা তীব্র ও তিক্ত হয়ে যেতে পারে। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, অঙ্কুরিত পেঁয়াজ খাওয়া সাধারণত ঝুঁকিপূর্ণ নয়, যদি পেঁয়াজটি শক্ত ও পচা না হয়। পেঁয়াজ নরম, পচা বা দুর্গন্ধযুক্ত হলে অবশ্যই ফেলে দিতে হবে।
অঙ্কুরিত পেঁয়াজে কিছু অ্যালকালয়েড (যেমন N-propyl disulfide) বেড়ে যেতে পারে, যা অতিমাত্রায় খেলে রক্তের লাল কণিকায় ক্ষতি করতে পারে। তবে সাধারণত রান্না করলে এই ঝুঁকি কমে যায়। তাই অঙ্কুরিত পেঁয়াজ রান্না করে খেতে পারেন, তবে কাঁচা খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন।
অঙ্কুরিত রসুন: উপকার, নাকি অপকার?
রসুন অঙ্কুরিত হলে অনেকেই ভাবেন, এটি নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু গবেষণা বলছে, অঙ্কুরিত রসুন বরং আরও বেশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হয়, যা হৃদরোগ, স্ট্রোক ও ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক। বিশেষ করে পাঁচ দিন অঙ্কুরিত রসুনে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্ষমতা বেড়ে যায়।
তবে, অঙ্কুরিত রসুনের স্বাদ কিছুটা তিক্ত ও গন্ধ কমে যেতে পারে। যদি রসুন নরম, পচা বা দুর্গন্ধযুক্ত হয়, তাহলে অবশ্যই ফেলে দিন। সাধারণত অঙ্কুরিত রসুন রান্না করে খেতে পারেন, কাঁচা খাওয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যা নেই।
অঙ্কুরিত আলু, পেঁয়াজ ও রসুন: তুলনামূলক বিশ্লেষণ
সবজিঅঙ্কুরিত হলে ঝুঁকিখাওয়া নিরাপদ?বাড়তি তথ্যআলুবিষাক্ত যৌগ (solanine) বেড়ে যায়নাগর্ভবতীদের জন্য বিশেষ ঝুঁকিপেঁয়াজস্বাদ তিক্ত, অ্যালকালয়েড বাড়েহ্যাঁ (পচা না হলে)রান্না করলে ঝুঁকি কমেরসুনঅ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বাড়েহ্যাঁ (নরম/পচা না হলে)স্বাদ তিক্ত হতে পারে
কিছু গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা ও টিপস
- অঙ্কুরিত আলু, বিশেষ করে সবুজ বা নরম হলে, খাওয়া একেবারেই ঠিক নয়।
- অঙ্কুরিত পেঁয়াজ ও রসুন শক্ত থাকলে ও পচা না হলে রান্না করে খেতে পারেন।
- সবজি অঙ্কুরিত হওয়া ঠেকাতে ঠান্ডা, অন্ধকার ও শুকনো স্থানে সংরক্ষণ করুন।
- সবজি কেটে দেখুন, যদি ভেতরে পচা, নরম বা দুর্গন্ধ থাকে, তাহলে ফেলে দিন।
- গর্ভবতী ও শিশুদের ক্ষেত্রে সতর্কতা আরও বেশি প্রয়োজন।
‘অঙ্কুরিত আলু, পেঁয়াজ ও রসুন’ খাওয়া নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্যঝুঁকির দিকটি আগে ভাবুন। অঙ্কুরিত আলু যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন, কারণ এতে থাকা বিষাক্ত যৌগ শরীরের জন্য মারাত্মক হতে পারে। অঙ্কুরিত পেঁয়াজ ও রসুন সাধারণত নিরাপদ, তবে সতর্কতা অবলম্বন করুন—নরম, পচা বা দুর্গন্ধযুক্ত হলে অবশ্যই ফেলে দিন। বিশেষজ্ঞদের মতে, রান্না করলে ঝুঁকি আরও কমে যায়। সুস্থ থাকতে খাদ্য নির্বাচন করুন সচেতনভাবে, আর রান্নাঘরের এই ছোট ছোট বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিন—কারণ স্বাস্থ্যই তো আসল সম্পদ!