Starlink internet launch in India news: এলন মাস্কের স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা শীঘ্রই ভারতে চালু হতে চলেছে। এটি ভারতের টেলিকম বাজারে একটি বড় পরিবর্তন আনতে পারে। কিন্তু এর দাম কত হবে এবং জিও বা এয়ারটেলের থেকে সস্তা হবে কিনা তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে।স্টারলিংক ভারতে প্রবেশের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সরকার ইতিমধ্যে স্যাটেলাইট স্পেকট্রাম প্রশাসনিকভাবে বরাদ্দ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা স্টারলিংকের জন্য অনুকূল। কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া জানিয়েছেন, স্টারলিংক ভারতীয় নিয়মকানুন মেনে চলার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। সব শর্ত পূরণ করলে তাদের লাইসেন্স দেওয়া হবে।তবে স্টারলিংকের ভারতে প্রবেশ নিয়ে জিও এবং এয়ারটেলের মতো বড় টেলিকম কোম্পানিগুলো উদ্বিগ্ন। তারা চাইছে স্যাটেলাইট স্পেকট্রাম নিলামের মাধ্যমে বরাদ্দ করা হোক। কিন্তু সরকার প্রশাসনিক পদ্ধতিতে বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা স্টারলিংকের জন্য সুবিধাজনক।
ভারতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯৩৬ মিলিয়ন ছাড়িয়ে গেল, ২০২৪ সালে নতুন রেকর্ড!
স্টারলিংকের দাম নিয়ে এখনও কোনো সরকারি ঘোষণা আসেনি। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রথম বছরে এর খরচ প্রায় ১,৫৮,০০০ টাকা হতে পারে। দ্বিতীয় বছর থেকে সেবার দাম কমে প্রায় ১,১৫,০০০ টাকা হতে পারে, যার মধ্যে ৩০% কর অন্তর্ভুক্ত। এর মানে গ্রাহকদের মাসে প্রায় ১০,০০০ টাকা দিতে হবে।অন্যদিকে জিও ফাইবারের হাই-স্পিড ব্রডব্যান্ড প্ল্যানের দাম মাসে মাত্র ৮৩৩ টাকা (১০ ডলার)। দীর্ঘমেয়াদী প্ল্যানে রাউটার ফ্রি দেওয়া হয়। জিওর তারযুক্ত ব্রডব্যান্ড বাজারে ৩০% শেয়ার রয়েছে।
তুলনামূলকভাবে স্টারলিংকের দাম অনেক বেশি মনে হলেও এর কিছু সুবিধা রয়েছে:
১. দুর্গম এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগ: স্টারলিংক স্যাটেলাইটের মাধ্যমে যেকোনো জায়গায় ইন্টারনেট দিতে পারবে। এটি গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিপ্লব আনতে পারে।
২. কম লেটেন্সি: স্টারলিংকের নিম্ন-কক্ষপথের স্যাটেলাইট ব্যবস্থা পারম্পরিক জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইটের তুলনায় অনেক কম লেটেন্সি প্রদান করে।
৩. উচ্চ গতি: স্টারলিংক বর্তমানে ২২০ Mbps পর্যন্ত গতি দিতে পারে, যা ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে।
৪. অসীম ডেটা: অধিকাংশ প্ল্যানে স্টারলিংক অসীম ডেটা দেয়, যা বহু ব্যবহারকারী থাকা পরিবারের জন্য উপযোগী।
৫. সহজ সেটআপ: স্টারলিংকের যন্ত্রপাতি সহজেই সেট করা যায়, পেশাদার সাহায্য লাগে না।
তবে স্টারলিংকের কিছু সমস্যাও রয়েছে:
১. উচ্চ প্রাথমিক খরচ: যন্ত্রপাতির দাম এবং ইনস্টলেশন খরচ অনেক বেশি।
২. নিয়ন্ত্রক সমস্যা: ভারতের নিয়মকানুন মেনে চলা এবং ডেটা লোকালাইজেশন নিশ্চিত করা স্টারলিংকের জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
৩. জ্যোতির্বিজ্ঞানী পর্যবেক্ষণে বাধা: স্টারলিংকের স্যাটেলাইটগুলো আকাশ পর্যবেক্ষণে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
স্টারলিংক ভারতে আসলে টেলিকম বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়বে। জিও এবং এয়ারটেল তাদের সেবার মান উন্নত করতে এবং দাম কমাতে বাধ্য হতে পারে। কিন্তু স্টারলিংকের উচ্চ দাম এবং সীমিত কভারেজের কারণে তারা তাৎক্ষণিকভাবে বড় হুমকি নাও হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, স্টারলিংক মূলত দুর্গম এলাকায় ইন্টারনেট সেবা দিতে পারে যেখানে অন্য প্রযুক্তি পৌঁছায় না। শহরাঞ্চলে তারযুক্ত ইন্টারনেট এবং 5G নেটওয়ার্ক স্টারলিংকের চেয়ে সস্তা থাকবে।ভারতের ৪২ মিলিয়ন তারযুক্ত ব্রডব্যান্ড ব্যবহারকারী এবং ৯০৪ মিলিয়ন টেলিকম গ্রাহক রয়েছে। কিন্তু এখনও ২৫,০০০ গ্রামে ইন্টারনেট নেই। এমনকি শহরেও অনেক এলাকায় হাই-স্পিড ফাইবার ইন্টারনেট নেই। স্টারলিংক এই ঘাটতি পূরণে সাহায্য করতে পারে।স্টারলিংক ভারতে প্রথমে একটি অসীম ডেটা প্ল্যান নিয়ে আসতে পারে এবং কর্পোরেট গ্রাহকদের লক্ষ্য করতে পারে। তবে এর দাম সাধারণ গ্রাহকদের জন্য বেশি হতে পারে।
পৃথিবীর কক্ষপথে ১০,০০০ সক্রিয় স্যাটেলাইট: এলন মাস্কের নেতৃত্বে মহাকাশ বিপ্লব
সামগ্রিকভাবে, স্টারলিংক ভারতের ডিজিটাল বিভাজন কমাতে এবং দূরবর্তী এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগ দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কিন্তু এর উচ্চ দাম এবং সীমিত কভারেজের কারণে জিও বা এয়ারটেলের মতো বড় প্লেয়ারদের জন্য তাৎক্ষণিক হুমকি হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে দীর্ঘমেয়াদে স্টারলিংক ভারতের টেলিকম বাজারে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে।