stomach cancer symptoms: স্টমাক ক্যানসার (Stomach cancer) বা পাকস্থলীর ক্যানসার আমাদের দেশে দ্রুত বাড়ছে। অনেকেই গ্যাস্ট্রিক, অম্বল বা বদহজম ভেবে প্রাথমিক লক্ষণগুলোকে গুরুত্ব দেন না, ফলে রোগটি ধরা পড়ে দেরিতে। অথচ, সময়মতো সচেতনতা ও চিকিৎসা জীবন বাঁচাতে পারে। আজকের এই লেখায় আমরা জানব—স্টমাক ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ, কেন হয় এবং কীভাবে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
স্টমাক ক্যানসার (Stomach cancer): এক নজরে
স্টমাক ক্যানসার হলো পাকস্থলীর অভ্যন্তরীণ আস্তরণে অস্বাভাবিক কোষের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি, যা ধীরে ধীরে টিউমার তৈরি করে। প্রাথমিক পর্যায়ে লক্ষণগুলো অস্পষ্ট বা গ্যাস্ট্রিকের মতো মনে হতে পারে, তাই অনেকেই গুরুত্ব দেন না। বাংলাদেশে প্রতি লাখে ১১৪ জন ক্যানসারে আক্রান্ত হন, যার মধ্যে পাকস্থলীর ক্যানসার অন্যতম প্রধান6। বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরুষদের মধ্যে এই ক্যানসার বেশি দেখা যায়, তবে নারীরাও ঝুঁকিমুক্ত নন।
স্টমাক ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ: কীভাবে চিনবেন?
প্রাথমিক পর্যায়ে স্টমাক ক্যানসারের লক্ষণগুলো খুবই সাধারণ ও অস্পষ্ট হতে পারে। নিচে উল্লেখযোগ্য কিছু লক্ষণ তুলে ধরা হলো—
- দীর্ঘদিন ধরে বদহজম ও পেটের অস্বস্তি
- খাওয়ার পর পেট ফুলে যাওয়া বা ভারী লাগা
- হালকা বমি বমি ভাব ও ক্ষুধামান্দ্য
- পেটে জ্বালাপোড়া বা বুকজ্বালা
- খাবারে অরুচি, বিশেষত মাংসের প্রতি অনীহা
- অনিচ্ছাকৃত ওজন কমে যাওয়া
- ক্লান্তি ও দুর্বলতা
- মাঝে মাঝে বমি, কখনও রক্তসহ
- মলের রং কালো বা রক্ত মেশানো
- খাবার গিলতে সমস্যা
- চোখ ও ত্বক হলুদ হয়ে যাওয়া (জন্ডিস)
এছাড়া, অনেক সময় এই লক্ষণগুলো গ্যাস্ট্রিক, আলসার বা অন্য কোনো সাধারণ রোগের মতো মনে হতে পারে। তাই, উপরের লক্ষণগুলো দীর্ঘদিন থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে13915।
কেন হয় স্টমাক ক্যানসার? (Causes of Stomach cancer)
স্টমাক ক্যানসার কেন হয়, তার নির্দিষ্ট কারণ এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে গবেষণায় কিছু ঝুঁকিপূর্ণ কারণ চিহ্নিত হয়েছে—
১. হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি (Helicobacter pylori) সংক্রমণ
এটি একটি ব্যাকটেরিয়া, যা পাকস্থলীতে দীর্ঘদিন সংক্রমণ ঘটালে আলসার এবং পরে ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
২. খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপন
- অতিরিক্ত লবণযুক্ত, ধূমায়িত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি খাওয়া
- তাজা ফল ও সবজি কম খাওয়া
- অতিরিক্ত মদ্যপান ও ধূমপান
- স্থূলতা ও শারীরিক পরিশ্রমের অভাব
৩. পারিবারিক ইতিহাস ও জেনেটিক কারণ
পরিবারে কারো স্টমাক ক্যানসার থাকলে ঝুঁকি বাড়ে।
৪. দীর্ঘদিনের গ্যাস্ট্রিক আলসার, পলিপ বা গ্যাস্ট্রাইটিস
পাকস্থলীর দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ, পলিপ বা ক্ষতিকর রক্তাল্পতা থাকলে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে।
৫. বয়স ও লিঙ্গ
বয়স্কদের মধ্যে এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি।
কোন লক্ষণগুলো হলে সতর্ক হবেন?
- দীর্ঘদিন পেটে ব্যথা, বদহজম বা অস্বস্তি
- খাওয়ার পর পেট ফুলে যাওয়া বা অস্বাভাবিক ওজন কমে যাওয়া
- খাবার গিলতে সমস্যা বা বমিতে রক্ত
- মলের রং কালো বা রক্তমিশ্রিত
- অল্পতেই ক্লান্তি, দুর্বলতা, জন্ডিস
এই উপসর্গগুলো অবহেলা না করে দ্রুত গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট বা ক্যানসার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
স্টমাক ক্যানসার থেকে মুক্তি পেতে কী করবেন?
১. প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয়
- উপসর্গ থাকলে দ্রুত এন্ডোস্কোপি ও বায়োপসি করান।
- রোগ নির্ণয় যত দ্রুত হবে, চিকিৎসার সুফল তত বেশি।
২. চিকিৎসার মূল স্তম্ভ
- সার্জারি: প্রাথমিক পর্যায়ে টিউমার অপসারণে সফলতা বেশি।
- কেমোথেরাপি: ক্যানসার কোষ ধ্বংসে ব্যবহৃত হয়, বিশেষত উন্নত পর্যায়ে।
- রেডিয়েশন থেরাপি: নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে ক্যানসার কোষ ধ্বংসে সহায়ক।
- প্রয়োজনে লক্ষ্যভিত্তিক (Targeted) ও ইমিউনোথেরাপি।
৩. জীবনযাত্রার পরিবর্তন
- নিয়মিত তাজা ও অর্গানিক শাকসবজি ও ফল খান
- প্রক্রিয়াজাত, ধূমায়িত ও অতিরিক্ত লবণাক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন
- ধূমপান ও মদ্যপান সম্পূর্ণভাবে ত্যাগ করুন
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন ও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
- দীর্ঘদিন পেটের সমস্যা অবহেলা করবেন না, সময়মতো চিকিৎসকের কাছে যান।
স্টমাক ক্যানসার প্রতিরোধে করণীয়
- স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন: বেশি করে সবজি-ফল খান, প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়ান
- খাবার সঠিকভাবে সংরক্ষণ ও রান্না করুন
- ধূমপান ও অ্যালকোহল ত্যাগ করুন
- শরীরচর্চা করুন, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
- পরিবারের কারো ক্যানসার থাকলে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন
- কোনো উপসর্গ অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
স্টমাক ক্যানসার (Stomach cancer) একটি নীরব ঘাতক। প্রাথমিক লক্ষণগুলো সাধারণত গ্যাস্ট্রিক বা বদহজমের মতো মনে হলেও, অবহেলা করলে রোগটি জটিল হয়ে পড়ে। তাই, সচেতনতা, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণই পারে এই রোগ থেকে মুক্তির পথ খুলে দিতে। আপনার ও আপনার পরিবারের সুস্থতা নিশ্চিত করতে আজ থেকেই সতর্ক হোন।