তবে এই উৎসবের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার সাথে সাথে কিছু চ্যালেঞ্জও দেখা দিয়েছে। পরিবেশ দূষণ, অতিরিক্ত ভিড় ও শব্দ দূষণ, এবং কখনও কখনও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার মতো সমস্যাগুলি মোকাবেলা করতে হচ্ছে। তবে এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও গণেশ চতুর্থী উৎসব তার মূল ভাবনা – ঐক্য ও সংহতি – ধরে রেখেছে।
শ্রীমন্ত ভাউসাহেব রাঙ্গারির জীবন ও কর্ম নিয়ে আরও কিছু তথ্য উল্লেখ করা যায়:
১. চিকিৎসা সেবা:
রাঙ্গারি শুধু একজন রাজকীয় চিকিৎসকই ছিলেন না, তিনি সাধারণ মানুষের জন্যও চিকিৎসা সেবা প্রদান করতেন। তিনি বিশেষ করে গরিব ও অসহায় মানুষদের বিনামূল্যে চিকিৎসা করতেন।
২. সামাজিক সংস্কার:
তিনি সমাজের নানা কুপ্রথার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। বিধবা বিবাহ, বাল্যবিবাহ নিরোধ, অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ ইত্যাদি বিষয়ে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন।
৩. শিক্ষা প্রসার:
রাঙ্গারি শিক্ষার গুরুত্ব বুঝতেন। তিনি নিজের বাড়িতে একটি পাঠশালা চালু করেছিলেন যেখানে গরিব ছাত্রছাত্রীরা বিনামূল্যে পড়াশোনা করতে পারত।
৪. স্বদেশী আন্দোলন:
তিনি স্বদেশী আন্দোলনের একজন সক্রিয় সমর্থক ছিলেন। তিনি মানুষকে বিদেশী পণ্য বর্জন করে দেশীয় পণ্য ব্যবহারের জন্য উৎসাহিত করতেন।
৫. সাহিত্য চর্চা:
রাঙ্গারি একজন সাহিত্য প্রেমীও ছিলেন। তিনি নিয়মিত কবিতা লিখতেন এবং সাহিত্য সভার আয়োজন করতেন।
৬. গোপন বৈঠক:
তাঁর বাড়িতে প্রায়ই স্বাধীনতা সংগ্রামীদের গোপন বৈঠক হত। এসব বৈঠকে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নিয়ে আলোচনা হত।
৭. অর্থ সাহায্য:
তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনে গোপনে অর্থ সাহায্য করতেন। এছাড়া তিনি অনেক গরিব ছাত্রের পড়াশোনার খরচও বহন করতেন।
৮. সংবাদপত্রের সাথে সম্পর্ক:
রাঙ্গারি লোকমান্য তিলকের ‘কেশরী’ পত্রিকার একজন নিয়মিত লেখক ছিলেন। তিনি এই পত্রিকায় সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে প্রবন্ধ লিখতেন।
৯. আয়ুর্বেদ চর্চা:
পাশ্চাত্য চিকিৎসা পদ্ধতির পাশাপাশি তিনি আয়ুর্বেদ চিকিৎসাতেও দক্ষ ছিলেন। তিনি আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরি ও ব্যবহার করতেন।
১০. সাংস্কৃতিক উত্থান:
গণেশোৎসব ছাড়াও তিনি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন যেখানে স্থানীয় শিল্পীরা তাদের প্রতিভা প্রদর্শনের সুযোগ পেতেন।
রাঙ্গারির এই বহুমুখী অবদান তাঁকে শুধু একজন চিকিৎসক বা স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে নয়, একজন সমাজ সংস্কারক ও সাংস্কৃতিক পুরুষ হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত করেছিল।গণেশ চতুর্থী উৎসবের ক্রমবিকাশের সাথে সাথে এর পালন পদ্ধতিতেও পরিবর্তন এসেছে:
১. পরিবেশ সচেতনতা:
প্লাস্টিক ও রাসায়নিক রঙ দিয়ে তৈরি মূর্তির পরিবর্তে এখন অনেকেই মাটি বা অন্যান্য জৈব পদার্থ দিয়ে তৈরি পরিবেশবান্ধব মূর্তি ব্যবহার করছেন।
২. সামাজিক দায়বদ্ধতা:
অনেক গণেশ পূজা কমিটি এখন রক্তদান শিবির, স্বাস্থ্য পরীক্ষা ক্যাম্প, বৃক্ষরোপণ ইত্যাদি সামাজিক কর্মকাণ্ড আয়োজন করে।
৩. প্রযুক্তির ব্যবহার:
অনলাইন দর্শন, লাইভ স্ট্রিমিং, ভার্চুয়াল আরতি ইত্যাদির মাধ্যমে দূরবর্তী ভক্তরাও এখন উৎসবে অংশগ্রহণ করতে পারছেন।
৪. শিল্প ও সংস্কৃতির প্রচার:
গণেশ প্যান্ডেলগুলিতে এখন প্রায়ই স্থানীয় শিল্প ও সংস্কৃতির প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়।
৫. শিক্ষামূলক কার্যক্রম:
অনেক জায়গায় এখন গণেশ চতুর্থী উপলক্ষে শিশুদের জন্য শিক্ষামূলক কার্যক্রম আয়োজন করা হয়।
৬. নারী সশক্তিকরণ:
মহিলাদের নেতৃত্বে পরিচালিত গণেশ পূজা কমিটির সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে।
৭. ডিজিটাল প্রচার:
সোশ্যাল মিডিয়া ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে এখন উৎসবের ব্যাপক প্রচার হচ্ছে।
৮. থিম-ভিত্তিক উদযাপন:
অনেক জায়গায় এখন বিভিন্ন সামাজিক বা ঐতিহাসিক থিম ভিত্তিক গণেশ প্যান্ডেল সাজানো হয়।
৯. আন্তর্জাতিক সংযোগ:
বিদেশে বসবাসকারী ভারতীয়রা এখন তাদের স্থানীয় সম্প্রদায়ের সাথে মিলে গণেশোৎসব পালন করছেন, যা সাংস্কৃতিক বিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি করছে।
১০. গবেষণা ও অধ্যয়ন:
গণেশ চতুর্থী উৎসব এখন বিভিন্ন সামাজিক ও ঐতিহাসিক গবেষণার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে।
মা আসছেন! জানেন দূর্গা পূজা আর কত দিন বাকি? জেনে নিন এখনই!
শ্রীমন্ত ভাউসাহেব রাঙ্গারির দূরদর্শী পদক্ষেপ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত গণেশ চতুর্থী উৎসবের এই ক্রমবিকাশ প্রমাণ করে যে কীভাবে একটি ধর্মীয় উৎসব সময়ের সাথে সাথে সামাজিক পরিবর্তনের একটি শক্তিশালী মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে।গণেশ চতুর্থী উৎসব এখন শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি ভারতীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও মূল্যবোধের একটি প্রতিফলন। এই উৎসব দেশপ্রেম, সামাজিক সচেতনতা, পরিবেশ সংরক্ষণ, শিল্প ও সংস্কৃতির প্রচার, এবং সর্বোপরি সামাজিক সংহতির বার্তা বহন করে।
শ্রীমন্ত ভাউসাহেব রাঙ্গারির স্বপ্ন ছিল এমন একটি উৎসব যা জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষকে একত্রিত করবে। আজ সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। গণেশ চতুর্থী উৎসব এখন শুধু হিন্দুদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এতে সব ধর্মের মানুষ অংশগ্রহণ করে।এই উৎসবের মাধ্যমে রাঙ্গারি যে বীজ রোপণ করেছিলেন, তা আজ একটি মহীরুহে পরিণত হয়েছে। এই মহীরুহের ছায়ায় আজ কোটি কোটি মানুষ একত্রিত হয়ে উদযাপন করে তাদের ঐক্য, সংহতি ও জাতীয়তাবোধ। এভাবে গণেশ চতুর্থী উৎসব ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক উজ্জ্বল নিদর্শন হয়ে দাঁড়িয়েছে।