Ishita Ganguly
২৮ জুন ২০২৪, ৪:৩২ অপরাহ্ণ
অনলাইন সংস্করণ

Negative Film: স্মৃতির অন্ধকারকক্ষে হারিয়ে যাওয়া নেগেটিভ ফিল্মের গল্প

ফটোগ্রাফির ইতিহাসে ফিল্ম নেগেটিভের স্থান অনন্য। এক সময় যা ছিল স্মৃতি সংরক্ষণের প্রধান মাধ্যম, আজ তা হারিয়ে যাচ্ছে ডিজিটাল যুগের অগ্রগতিতে। এই প্রতিবেদনে আমরা খুঁজে দেখব কীভাবে এই অমূল্য সম্পদ হারিয়ে যাচ্ছে এবং এর প্রভাব।

ফিল্ম নেগেটিভের স্বর্ণযুগ:

১৮৮৮ সালে জর্জ ইস্টম্যান কোডাক ক্যামেরা বাজারে আনার পর থেকেই ফিল্ম ফটোগ্রাফি জনপ্রিয় হতে থাকে। ১৯০০ সালের দিকে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে শুরু করে। ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ফিল্ম ক্যামেরা ছিল ছবি তোলার একমাত্র মাধ্যম।

কোডাক কোম্পানির তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৮০০ মিলিয়ন রোল ফিল্ম বিক্রি হয়েছিল। এটি ছিল ফিল্ম ব্যবহারের চূড়ান্ত সময়। পারিবারিক অনুষ্ঠান, ভ্রমণ, বিবাহ – সব ক্ষেত্রেই ফিল্ম ক্যামেরা ছিল অপরিহার্য।

ডিজিটাল যুগের আগমন:

১৯৭৫ সালে কোডাক ইঞ্জিনিয়ার স্টিভেন সাসন প্রথম ডিজিটাল ক্যামেরা আবিষ্কার করেন। কিন্তু ১৯৯০ এর দশকের শেষের দিকে এসে ডিজিটাল ক্যামেরা বাণিজ্যিকভাবে সফল হতে শুরু করে। ২০০৩ সালে প্রথমবারের মতো ডিজিটাল ক্যামেরার বিক্রি ফিল্ম ক্যামেরাকে ছাড়িয়ে যায়।

Camera & Imaging Products Association (CIPA) এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৩ সালে বিশ্বব্যাপী ৬৪ মিলিয়ন ডিজিটাল ক্যামেরা বিক্রি হয়েছিল, যেখানে ফিল্ম ক্যামেরার সংখ্যা ছিল মাত্র ২৪ মিলিয়ন।

হারিয়ে যাওয়ার কারণসমূহ:

১. সংরক্ষণের অভাব: অনেক পরিবারই পুরনো আলবাম ও নেগেটিভ সঠিকভাবে সংরক্ষণ করেনি। আর্দ্রতা, তাপ, এবং অন্যান্য পরিবেশগত কারণে এগুলো নষ্ট হয়ে গেছে।

২. ডিজিটাল রূপান্তরের অভাব: অনেকেই ডিজিটাল যুগে পুরনো নেগেটিভগুলোকে ডিজিটাল ফরম্যাটে রূপান্তর করার প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করেননি।

৩. প্রযুক্তিগত পরিবর্তন: দ্রুত প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের কারণে পুরনো ফিল্ম প্রসেসিং ল্যাব বন্ধ হয়ে গেছে, ফলে নেগেটিভ থেকে ছবি তৈরি করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

হারানো নেগেটিভের মূল্য:

প্রত্যেকটি নেগেটিভ একটি অনন্য মুহূর্তের সাক্ষী। এগুলো শুধু ব্যক্তিগত স্মৃতিই নয়, ঐতিহাসিক তথ্যেরও উৎস। উদাহরণস্বরূপ, ২০০১ সালে নিউ ইয়র্কের ৯/১১ হামলার সময়কার অনেক মূল্যবান ছবি ফিল্মে তোলা হয়েছিল। এই ধরনের ঐতিহাসিক মুহূর্তের নেগেটিভ হারিয়ে গেলে তা অপূরণীয় ক্ষতি।

সংরক্ষণের উপায়:

১. নেগেটিভ খোঁজা ও সংরক্ষণ: পুরনো নেগেটিভগুলো খুঁজে বের করে সঠিক তাপমাত্রা ও আর্দ্রতায় সংরক্ষণ করা।

২. ডিজিটাল রূপান্তর: উচ্চ রেজোলিউশনে স্ক্যান করে ডিজিটাল ফাইলে রূপান্তর করা।

৩. ক্লাউড স্টোরেজ: Google Photos, Dropbox ইত্যাদি ক্লাউড সার্ভিসে ব্যাকআপ রাখা।

৪. ফিজিক্যাল প্রিন্ট: গুরুত্বপূর্ণ ছবিগুলোর উচ্চমানের প্রিন্ট করে রাখা।

The National Film and Sound Archive of Australia এর মতে, সঠিক পরিবেশে সংরক্ষণ করলে ফিল্ম নেগেটিভ ১০০ বছরেরও বেশি সময় টিকে থাকতে পারে।

যা না বললেই নয়

ফিল্ম নেগেটিভ হারিয়ে যাওয়া শুধু প্রযুক্তিগত পরিবর্তন নয়, এটি আমাদের ইতিহাস ও স্মৃতির একটি অংশ হারানোর মতো। যদিও ডিজিটাল প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে সহজ করেছে, কিন্তু পুরনো নেগেটিভগুলোর সংরক্ষণও সমান গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের উচিত এই দুই মাধ্যমের মধ্যে একটি সুন্দর সমন্বয় গড়ে তোলা, যাতে আমাদের অতীত ও বর্তমান, দুটোই সুরক্ষিত থাকে।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইউনুসের ‘নতুন’ বাংলাদেশে ধর্ষণের ঊর্ধ্বগতি: রাজপথে প্রতিবাদের ঝড় ছাত্রদের

ভারতে ইন্টারনেট বিপ্লবের নতুন দিগন্ত: স্টারলিঙ্কের সঙ্গে এয়ারটেলের ঐতিহাসিক চুক্তি

অস্ত্র আমদানির দৌড়ে শীর্ষে ইউক্রেন, ভারতের স্থান দ্বিতীয়: বিশ্বে কী বার্তা?

মুসলিম ভোট ব্যাঙ্কে নজর! বঙ্গের সব আসনে লড়তে প্রস্তুত আইএমআইএম

হোলির রঙে ব্যাঙ্ক বন্ধ: আগামীকাল থেকে টানা ৪ দিন ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ব্যাঙ্ক ছুটি, তালিকা দেখে নিন

কেকেআরের প্রস্তুতি শুরু: কলকাতায় নাইটদের ক্যাপ্টেন-কোচের সঙ্গে প্রকাশিত হল প্র্যাক্টিস সূচি

শিক্ষামন্ত্রীর বাড়ির সামনে ‘ক্রিমিনাল’ পোস্টার: সিপিএম নেতার থানায় তলব!

কলকাতার Zakaria Street-এর মাস্ট ভিজিট ফুড স্টল: একটি খাদ্যপ্রেমীর স্বর্গভূমি

অলক্ষ্যে ঋত্বিক: ঋত্বিক ঘটকের জীবনালেখ্য নিয়ে আসছে বাঙালির প্রতীক্ষিত চলচ্চিত্র

আইপিএল-এ তামাকের বিজ্ঞাপন বন্ধ! স্বাস্থ্যমন্ত্রকের কড়া নির্দেশ জারি!

১০

দেওয়ালের কোন দিকে কোন রঙ শুভ? বাস্তুশাস্ত্রের চোখে একটি গভীর দৃষ্টিপাত

১১

ডিএলএফ-এমআরএফ-আমূল-পেটিএম: সংক্ষিপ্ত নামেই ভারত বিখ্যাত, এবার জেনে নিন এই ব্র্যান্ডগুলোর পুরো নাম!

১২

সেক্সসমনিয়া: ঘুমের মধ্যে লুকিয়ে থাকা এক বিরল রহস্য

১৩

ভীষণ ক্ষতিকর Non-Stick প্যানে রান্না করছেন না তো? জেনে নিন সেরা বিকল্পগুলো

১৪

কাক ডাকার ফলাফল: ইসলাম ও হিন্দু শাস্ত্রে কী বলা আছে?

১৫

দিনে ৮ ঘণ্টা AC চালালে মাসে কত ‘Electric Bill’ আসবে? সহজ হিসেবে নিশ্চিন্তে থাকুন

১৬

প্রাক্তনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা কি বুদ্ধিমানের কাজ? একটি গভীর বিশ্লেষণ

১৭

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের জাদু: কীভাবে ভারত হয়ে উঠল অপ্রতিরোধ্য?

১৮

বাংলার প্রথম এসি লোকাল ট্রেন শিয়ালদা-কৃষ্ণনগর রুটে, ভাড়া কত জানেন?

১৯

ভারতে রাজ্যভিত্তিক হীরার মজুদ: কোন রাজ্য হীরা উৎপাদনে সেরা?

২০
close