স্ট্রোকের ৯০% ক্লট কোথা থেকে আসে? হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ জানালেন হৃদপিণ্ডের এক ‘ক্ষুদ্র থলি’-র রহস্য

Stroke Clot Origin: আমাদের মস্তিষ্ককে বিকল করে দেওয়া বিধ্বংসী স্ট্রোকের জন্য দায়ী রক্ত জমাট বাঁধার (blood clot) মূল উৎসটি প্রায়শই আমাদের ধারণার বাইরে থাকে। বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ও…

Debolina Roy

 

Stroke Clot Origin: আমাদের মস্তিষ্ককে বিকল করে দেওয়া বিধ্বংসী স্ট্রোকের জন্য দায়ী রক্ত জমাট বাঁধার (blood clot) মূল উৎসটি প্রায়শই আমাদের ধারণার বাইরে থাকে। বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের কারণ এই স্ট্রোকের নেপথ্যে থাকা এক অন্যতম প্রধান অপরাধী হলো হৃদপিণ্ডের একটি ছোট, আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ অংশ, যা লেফট অ্যাট্রিয়াল অ্যাপেন্ডেজ (Left Atrial Appendage বা LAA) নামে পরিচিত। বিভিন্ন গবেষণা ও ক্লিনিকাল ডেটা অনুসারে, বিশেষত অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন (Atrial Fibrillation বা AFib) নামক হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে, প্রায় ৯০% এরও বেশি স্ট্রোক-সৃষ্টিকারী ক্লট এই ক্ষুদ্র থলির মধ্যেই তৈরি হয়। এই নিবন্ধে আমরা এই LAA-এর গঠন, কার্যকারিতা এবং কীভাবে এটি স্ট্রোকের মতো একটি মারাত্মক রোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়, তা শীর্ষ কার্ডিওলজিস্টদের মতামত ও বৈজ্ঞানিক প্রমাণের ভিত্তিতে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) অনুসারে, কার্ডিওভাসকুলার রোগের মধ্যে স্ট্রোক বিশ্বব্যাপী মৃত্যু এবং অক্ষমতার একটি প্রধান কারণ, তাই এর মূল উৎস সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরি।

স্ট্রোক: এক নীরব ঘাতক

স্ট্রোক, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় সেরেব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট (Cerebrovascular Accident) নামে পরিচিত, তখন ঘটে যখন মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় বা কমে যায়। এর ফলে মস্তিষ্কের কোষগুলো অক্সিজেন এবং পুষ্টির অভাবে মারা যেতে শুরু করে। স্ট্রোক মূলত দুই ধরনের হয়, এবং এদের মধ্যে পার্থক্য বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ইস্কেমিক স্ট্রোক (Ischemic Stroke) বনাম হেমোরেজিক স্ট্রোক (Hemorrhagic Stroke)

ইস্কেমিক স্ট্রোক: এটি সবচেয়ে সাধারণ প্রকারের স্ট্রোক, যা প্রায় ৮৫% ক্ষেত্রে ঘটে থাকে। মস্তিষ্কের রক্তনালীতে রক্ত জমাট বেঁধে (blood clot) রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হলে এই ধরনের স্ট্রোক হয়। এই ক্লটগুলো শরীরের অন্য কোথাও, বিশেষ করে হৃদপিণ্ডে তৈরি হয়ে রক্তের মাধ্যমে মস্তিষ্কে পৌঁছাতে পারে। আমাদের আজকের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু এই ইস্কেমিক স্ট্রোক এবং এর উৎস।

হেমোরেজিক স্ট্রোক: এই ধরনের স্ট্রোক তখন হয় যখন মস্তিষ্কের কোনো রক্তনালী ছিঁড়ে গিয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। এই রক্ত মস্তিষ্কের কোষের উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং তাদের ক্ষতি করে। উচ্চ রক্তচাপ এবং অ্যানিউরিজম (aneurysm) এর প্রধান কারণ।

আমেরিকান স্ট্রোক অ্যাসোসিয়েশন (American Stroke Association) এর মতে, ইস্কেমিক স্ট্রোকের কারণ বোঝা এবং তার উৎস চিহ্নিত করা প্রতিরোধের জন্য অত্যন্ত জরুরি। আর এখানেই হৃদপিণ্ডের সেই ‘ক্ষুদ্র থলি’ বা LAA-এর ভূমিকা সামনে আসে।

হৃদপিণ্ড ও মস্তিষ্কের সংযোগ: ক্লট তৈরির মূল রহস্য

আমাদের হৃদপিণ্ড একটি পাম্পের মতো কাজ করে, যা সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালন করে। হৃদপিণ্ডের চারটি প্রকোষ্ঠ রয়েছে: দুটি অলিন্দ (Atria) এবং দুটি নিলয় (Ventricles)। বাম অলিন্দ বা লেফট অ্যাট্রিয়াম (Left Atrium) ফুসফুস থেকে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত গ্রহণ করে এবং বাম নিলয় বা লেফট ভেন্ট্রিকলে পাঠায়, যা পরে সারা শরীরে সেই রক্ত পাম্প করে। এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় যখন কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তখনই বিপদের সূচনা হয়।

সেই ‘ক্ষুদ্র থলি’ আসলে কী? লেফট অ্যাট্রিয়াল অ্যাপেন্ডেজ (LAA) পরিচিতি

লেফট অ্যাট্রিয়াল অ্যাপেন্ডেজ (LAA) হলো হৃদপিণ্ডের বাম অলিন্দের সাথে লাগানো একটি ছোট, আঙুলের মতো থলি। ভ্রূণ অবস্থায় হৃদপিণ্ডের বিকাশের সময় এর কিছু ভূমিকা থাকলেও, প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে এর কোনো নির্দিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ কাজ এখনো পর্যন্ত প্রমাণিত হয়নি। এর গঠন অনেকটা ছোট থলের মতো এবং এর ভেতরে অনেক ভাঁজ বা খাঁজ থাকে, যাকে ট্র্যাবেকুলেশন (trabeculations) বলা হয়। এই বিশেষ গঠনের কারণেই এটি রক্ত জমাট বাঁধার জন্য একটি আদর্শ স্থানে পরিণত হয়।

যখন হৃদপিণ্ডের স্পন্দন স্বাভাবিক থাকে, তখন রক্ত মসৃণভাবে LAA-এর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়। কিন্তু যখন হৃদস্পন্দন অনিয়মিত হয়ে পড়ে, তখন এই থলির ভেতরে রক্ত স্থির হয়ে যাওয়ার বা জমে যাওয়ার (blood stasis) সম্ভাবনা তৈরি হয়। আর জমে থাকা রক্তই ক্লট বা থ্রম্বাস (thrombus) তৈরির প্রথম ধাপ।

অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন (AFib): স্ট্রোকের নীরব অনুঘটক

স্ট্রোকের ঝুঁকির কথা বলতে গেলে অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন বা AFib-এর কথা বলতেই হবে। এটি হলো সবচেয়ে সাধারণ ধরনের হৃদস্পন্দনের অনিয়মিতি (arrhythmia), যেখানে হৃদপিণ্ডের অলিন্দ দুটি স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক দ্রুত এবং অনিয়মিতভাবে কাঁপে। সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (CDC) এর তথ্য অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে শুধুমাত্র আমেরিকাতেই প্রায় ১২.১ মিলিয়ন মানুষ AFib-এ আক্রান্ত হতে পারে।

AFib কীভাবে LAA-তে রক্ত জমাট বাঁধায়?

AFib-এর সময়, অলিন্দগুলো সঠিকভাবে সংকুচিত হতে পারে না। ফলে রক্ত পুরোপুরি পাম্প হয়ে নিলয়ে যেতে পারে না। এর ফলে কিছু পরিমাণ রক্ত, বিশেষ করে LAA-এর মতো বদ্ধ জায়গায় এসে জমে যায়। এই স্থির রক্ত ধীরে ধীরে জমাট বাঁধতে শুরু করে। এই প্রক্রিয়াটি অনেকটা পুকুরের স্থির পানিতে শ্যাওলা জমার মতো।

  • রক্তের স্থবিরতা (Blood Stasis): LAA-এর থলির মতো গঠন এবং AFib-এর কারণে অলিন্দের অসম্পূর্ণ সংকোচন রক্ত প্রবাহকে ধীর করে দেয়, যা ক্লট তৈরির প্রধান কারণ।
  • ক্লট গঠন: জমে থাকা রক্তকণিকা, বিশেষ করে প্লেটলেট এবং ফাইব্রিন, একত্রিত হয়ে একটি পিণ্ড তৈরি করে, যা ক্লট নামে পরিচিত।
  • মস্তিষ্কে গমন (Embolization): এই ক্লটটি যদি কোনো কারণে LAA থেকে ছুটে গিয়ে রক্তস্রোতে মিশে যায়, তবে এটি সোজা মস্তিষ্কের দিকে ধাবিত হতে পারে। মস্তিষ্কের সূক্ষ্ম রক্তনালীতে গিয়ে এটি আটকে গেলে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় এবং ইস্কেমিক স্ট্রোক ঘটে।

Journal of the American College of Cardiology-তে প্রকাশিত একটি গবেষণায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, নন-ভালভুলার AFib (যেখানে হৃদপিণ্ডের ভাল্ভের সমস্যা নেই) রোগীদের ক্ষেত্রে প্রায় ৯১% স্ট্রোক সৃষ্টিকারী ক্লটের উৎস হলো এই LAA।

ঝুঁকির কারণ (Risk Factors) বিবরণ
অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন (AFib) হৃদস্পন্দনের অনিয়মিতি যা LAA-তে রক্ত জমাট বাঁধার প্রধান কারণ।
উচ্চ রক্তচাপ (Hypertension) এটি রক্তনালীর প্রাচীরের ক্ষতি করে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
ডায়াবেটিস (Diabetes) রক্তে শর্করার উচ্চ মাত্রা রক্তনালীগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং ক্লট তৈরির প্রবণতা বাড়ায়।
বয়স বৃদ্ধি (Advanced Age) বয়স ৬৫ বছরের বেশি হলে AFib এবং স্ট্রোক উভয়ের ঝুঁকিই উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।
পূর্ববর্তী স্ট্রোক বা TIA যাদের আগে স্ট্রোক বা ট্রানজিয়েন্ট ইস্কেমিক অ্যাটাক (TIA) হয়েছে, তাদের ঝুঁকি বেশি।
হৃদরোগ (Heart Disease) হার্ট ফেইলিওর, করোনারি আর্টারি ডিজিজ ইত্যাদি স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
স্থূলতা (Obesity) অতিরিক্ত ওজন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং AFib-এর ঝুঁকি বাড়িয়ে পরোক্ষভাবে স্ট্রোকের কারণ হয়।
ধূমপান ও মদ্যপান এই অভ্যাসগুলো রক্তনালীর স্বাস্থ্য নষ্ট করে এবং রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়।

রোগ নির্ণয় এবং আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি

যেহেতু LAA থেকে সৃষ্ট ক্লট স্ট্রোকের একটি বড় কারণ, তাই সময়মতো রোগ নির্ণয় এবং সঠিক চিকিৎসা জীবন বাঁচাতে পারে।

কীভাবে রোগ নির্ণয় করা হয়?

AFib এবং হৃদপিণ্ডের গঠন পরীক্ষা করার জন্য চিকিৎসকরা বিভিন্ন পরীক্ষা করে থাকেন।

  • ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম (ECG or EKG): এটি হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ রেকর্ড করে এবং অনিয়মিত হৃদস্পন্দন শনাক্ত করতে সাহায্য করে।
  • ইকোকার্ডিওগ্রাম (Echocardiogram): এটি একটি আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা যা হৃদপিণ্ডের গঠন, কার্যকারিতা এবং LAA-এর মধ্যে কোনো ক্লট আছে কিনা তা দেখতে সাহায্য করে। বিশেষ করে, ট্রান্সএসোফেজিয়াল ইকোকার্ডিওগ্রাম (TEE) LAA দেখার জন্য সবচেয়ে কার্যকর।
  • হোল্টার মনিটর (Holter Monitor): এটি একটি বহনযোগ্য ECG ডিভাইস যা ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় ধরে হৃদস্পন্দন রেকর্ড করে, যা অনিয়মিত AFib শনাক্ত করতে পারে।

চিকিৎসা বিকল্প: রক্ত পাতলা করার ওষুধ থেকে অত্যাধুনিক ডিভাইস

AFib রোগীদের স্ট্রোক প্রতিরোধের জন্য চিকিৎসা পদ্ধতিকে মূলত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়।

১. অ্যান্টিকোঅ্যাগুল্যান্ট বা রক্ত পাতলা করার ওষুধ (Anticoagulants):

এটি সবচেয়ে প্রচলিত চিকিৎসা। এই ওষুধগুলো রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়, ফলে LAA-তে ক্লট তৈরির ঝুঁকি কমে।

  • ওয়ারফারিন (Warfarin): এটি একটি পুরোনো এবং কার্যকর ওষুধ, তবে এর ব্যবহার কিছুটা জটিল কারণ রোগীকে নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা (INR) করাতে হয় এবং খাবারের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হয়।
  • নোভেল ওরাল অ্যান্টিকোঅ্যাগুল্যান্ট (NOACs/DOACs): যেমন ড্যাবিগাট্রান, রিভারোক্সাবান, অ্যাপিক্সাবান ইত্যাদি নতুন প্রজন্মের ওষুধ। এগুলোর ব্যবহার সহজ এবং সাধারণত নিয়মিত রক্ত পরীক্ষার প্রয়োজন হয় না।

তবে, অ্যান্টিকোঅ্যাগুল্যান্টের প্রধান পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া। কিছু রোগীর ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি এতটাই বেশি থাকে যে তারা এই ওষুধগুলো ব্যবহার করতে পারেন না।

২. লেফট অ্যাট্রিয়াল অ্যাপেন্ডেজ ক্লোজার (LAA Closure/LAAO):

যাদের রক্তক্ষরণের ঝুঁকি খুব বেশি বা যারা দীর্ঘমেয়াদী অ্যান্টিকোঅ্যাগুল্যান্ট নিতে পারেন না, তাদের জন্য এটি একটি যুগান্তকারী বিকল্প। এই পদ্ধতিতে একটি ছোট ডিভাইসের মাধ্যমে LAA-এর মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

  • পদ্ধতি: পায়ের কুঁচকির শিরা দিয়ে একটি ক্যাথেটারের মাধ্যমে ছাতার মতো একটি ডিভাইস (যেমন WATCHMAN বা Amplatzer Amulet) হৃদপিণ্ডে নিয়ে যাওয়া হয় এবং LAA-এর মুখে স্থাপন করা হয়।
  • কার্যকারিতা: ডিভাইসটি LAA-কে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেয়, ফলে সেখানে রক্ত প্রবেশ করতে পারে না এবং ক্লট তৈরি হওয়ার কোনো সুযোগই থাকে না। সময়ের সাথে সাথে হৃদপিণ্ডের টিস্যু ডিভাইসের উপর একটি আস্তরণ তৈরি করে, যা এটিকে শরীরের অংশ বানিয়ে ফেলে।

ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FDA) এই ধরনের ডিভাইসগুলোকে অনুমোদন দিয়েছে এবং একাধিক ক্লিনিকাল ট্রায়ালে (যেমন PROTECT AF এবং PREVAIL) দেখা গেছে যে LAAO স্ট্রোক প্রতিরোধে ওয়ারফারিনের মতোই কার্যকর, এবং এটি দীর্ঘমেয়াদী রক্তক্ষরণের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমায়।

প্রতিরোধই সর্বোত্তম উপায়: জীবনযাত্রায় পরিবর্তন

স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে চিকিৎসার পাশাপাশি জীবনযাত্রায় কিছু স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন আনা অপরিহার্য। ওয়ার্ল্ড স্ট্রোক অর্গানাইজেশন (World Stroke Organization) এর মতে, প্রায় ৮০% স্ট্রোক প্রতিরোধযোগ্য।

  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করুন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খান।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
  • স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: লবণ ও চর্বিযুক্ত খাবার কমিয়ে ফল, শাকসবজি এবং আঁশযুক্ত খাবার বেশি করে খান।
  • নিয়মিত ব্যায়াম: সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি তীব্রতার ব্যায়াম করার লক্ষ্য রাখুন।
  • ধূমপান ত্যাগ: ধূমপান রক্তনালীকে শক্ত করে তোলে এবং রক্তচাপ বাড়ায়।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণ: শরীরের ওজন স্বাস্থ্যকর সীমার মধ্যে রাখুন।
  • নিয়মিত চেক-আপ: বিশেষ করে বয়স বাড়ার সাথে সাথে নিয়মিত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

স্ট্রোক একটি বিধ্বংসী রোগ, কিন্তু এর পেছনের বিজ্ঞান বোঝা আমাদের প্রতিরোধের পথে অনেকটা এগিয়ে দেয়। হৃদপিণ্ডের ‘ক্ষুদ্র থলি’ বা লেফট অ্যাট্রিয়াল অ্যাপেন্ডেজ (LAA) যে অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশনে আক্রান্ত রোগীদের স্ট্রোকের একটি প্রধান উৎস, তা আজ প্রমাণিত। অ্যান্টিকোঅ্যাগুল্যান্ট থেকে শুরু করে LAA ক্লোজারের মতো আধুনিক প্রযুক্তি আমাদের হাতে নতুন অস্ত্র তুলে দিয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় অস্ত্র হলো সচেতনতা। নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নেওয়া, ঝুঁকির কারণগুলো সম্পর্কে জানা এবং সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করার মাধ্যমে আমরা এই নীরব ঘাতকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ী হতে পারি। হৃদপিণ্ডের এই ক্ষুদ্র অংশের বিশাল প্রভাব সম্পর্কে জ্ঞানই আমাদের এবং আমাদের প্রিয়জনদের একটি সুস্থ, স্ট্রোক-মুক্ত জীবনযাপনের দিকে পরিচালিত করতে পারে।

About Author
Debolina Roy

দেবলীনা রায় একজন চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক লেখক, যিনি স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্পর্কে পাঠকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নিবেদিত। ডাক্তারি নিয়ে পড়াশোনা করা দেবলীনা তার লেখায় চিকিৎসা বিষয়ক জটিল তথ্যগুলি সহজ ভাষায় উপস্থাপন করেন, যা সাধারণ পাঠকদের জন্য সহজবোধ্য এবং উপকারী। স্বাস্থ্য, পুষ্টি, এবং রোগ প্রতিরোধের বিষয়ে তার গভীর জ্ঞান এবং প্রাঞ্জল লেখনী পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। দেবলীনা রায়ের লক্ষ্য হল সঠিক ও তথ্যনির্ভর স্বাস্থ্যবিধি প্রচার করা এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা।