Schools closed due to heatwave: পশ্চিমবঙ্গের স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকদের মধ্যে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। ২রা জুন থেকে স্কুল খোলার কথা থাকলেও, রাজ্যে অব্যাহত তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে আবারও ছুটি বাড়ানোর সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। গরমের ছুটি শেষ হলে ফের ছুটি পাবে পড়ুয়ারা এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার মূলত শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে। এ বছর এপ্রিলের শেষ থেকেই শুরু হওয়া গরমের ছুটি ইতিমধ্যে ৩১ মে পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। তবে আবহাওয়ার অবস্থা দেখে আরও সাত দিনের জন্য ছুটি বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে প্রশাসনিক সূত্রে।
বর্তমান গরমের ছুটির পরিস্থিতি
পশ্চিমবঙ্গ সরকার এ বছর গরমের ছুটি নিয়ে বেশ কয়েকবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে। প্রাথমিকভাবে ৩০ এপ্রিল থেকে গরমের ছুটি শুরু হওয়ার পর, তা ৩১ মে পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, রাজ্যের সমস্ত সরকারি ও সরকার পোষিত স্কুলের পাশাপাশি দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলার পার্বত্য অঞ্চলের স্কুলগুলিও এই ছুটির আওতায় রয়েছে।
মূলত স্কুল শিক্ষা দফতরের পরামর্শে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলি ১৩ মে এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলি ২৪ মে থেকে খোলার কথা থাকলেও, তীব্র গরমের কারণে সেই পরিকল্পনা পরিবর্তিত হয়েছে।
কেন এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে রাজ্য সরকার?
রাজ্যে এই মুহূর্তে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি ঘোরাফেরা করছে। বিশেষ করে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে দাবদাহের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, হাওড়া ও হুগলি জেলায় গরমের মাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে।
চিকিৎসকরা এই প্রচণ্ড গরমে খুব দরকার না পড়লে বাড়ির বাইরে না বেরনোর পরামর্শ দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে শিশুদের স্কুলে পাঠানো মানেই তাদের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি নেওয়া। তাই ছাত্রছাত্রীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই রাজ্য সরকার গরমের ছুটি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
স্বাস্থ্য দপ্তরের পরামর্শ নিয়েও এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। শিশুদের জন্য এই তীব্র তাপমাত্রা অত্যন্ত ক্ষতিকর হয়ে উঠেছে, যা তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
জুন মাসে আরও ছুটির সম্ভাবনা
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, ২ জুন থেকে স্কুল খোলার কথা থাকলেও রাজ্যে যে হারে তাপমাত্রা বাড়ছে, তাতে শিক্ষা দপ্তর এবং নবান্ন ফের ছুটি বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। আরও সাত দিনের জন্য ছুটি বাড়াতে চাইছে রাজ্য সরকার।
যদি বর্ষা সময় মতো না আসে, তাহলে রাজ্যের তাপপ্রবাহের হার আরও বাড়বে। এই পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে স্কুল শিক্ষা দপ্তর ইতিমধ্যেই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। তবে এখনও পর্যন্ত কোনও অফিশিয়াল বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়নি এই বিষয়ে।
জুন মাসে যেসব ছুটি থাকতে পারে সেগুলির মধ্যে রয়েছে জগন্নাথ রথযাত্রা, ইদুল আজহা এবং অন্যান্য ধর্মীয় উৎসব। এর সাথে যদি আবহাওয়াজনিত অতিরিক্ত ছুটি যোগ হয়, তাহলে জুন মাসেও বেশ কয়েকদিন স্কুল বন্ধ থাকবে।
শিক্ষকদের উদ্বেগ এবং পাঠ্যক্রমের চ্যালেঞ্জ
গরমের ছুটি বর্ধিত করার প্রসঙ্গে শিক্ষকদের একাংশের উদ্বেগ রয়েছে। তাদের মতে, অনির্দিষ্ট কাল স্কুল বন্ধ থাকলে পড়ুয়াদের পঠনপাঠনের ক্ষতি হতে পারে। বিশেষ করে যারা পরের বছর, ২০২৬ সালে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে, তাদের সিলেবাস দ্রুত শেষ করার প্রয়োজন আছে।
উচ্চ মাধ্যমিকের নতুন নিয়মে পরের বছর ছাত্রছাত্রীদের মূল্যায়ন হবে তৃতীয় ও চতুর্থ সিমেস্টারে। তৃতীয় সিমেস্টার সেপ্টেম্বরে হওয়ার কথা। সেই নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন শিক্ষকেরা।
গত বছর সরকারি স্কুলগুলিতে প্রায় দুই মাস গরমের ছুটি ছিল। শিক্ষকদের অভিযোগ ছিল যে, প্রায় দুই মাস স্কুল ছুটি থাকার কারণে সারা বছরের পাঠ্যক্রম শেষ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এ বছর এক মাসের গরমের ছুটির কথা ঘোষণা করলেও, পরিস্থিতি দেখে তা আরও বাড়তে পারে।
বিভিন্ন ধরনের স্কুলের জন্য আলাদা নীতি
সরকারি বিদ্যালয়, সরকার সহায়তাপ্রাপ্ত বিদ্যালয়, সরকার অনুমোদিত মাদ্রাসা সহ সরকারের তরফে অনেক বেসরকারি স্কুলগুলোকেও এই নির্দেশ মানার জন্য বলা হয়েছে। তবে প্রাইভেট স্কুলগুলির ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ সিদ্ধান্ত স্কুল কর্তৃপক্ষ নেবে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রাইভেট স্কুলগুলির কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন এই নির্দেশ মেনে চলার জন্য। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তাদের নিজেদের নিতে হবে।
অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীদের প্রতিক্রিয়া
এই টানা ছুটির কারণে বাচ্চাদের পড়াশোনা নিয়ে অনেকটাই সমস্যা দেখা দিচ্ছে বলে মনে করেন অভিভাবকেরা। অনেক শিক্ষক সংগঠনের তরফে সরকারের কাছে স্কুল খোলার অনুরোধ করা হয়েছে।
কিছু অভিভাবক মনে করেন, বৃষ্টির কারণে এখন আবহাওয়া একটু হলেও মনোরম হয়েছে। তাই এখন সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয় সেই দিকে নজর সকলের।
অন্যদিকে, ছাত্রছাত্রীরা এই অতিরিক্ত ছুটি পেয়ে খুশি হলেও, দীর্ঘমেয়াদী পড়াশোনার ক্ষতির বিষয়টিও তাদের মাথায় রয়েছে। বিশেষ করে যারা পরীক্ষার্থী, তাদের উদ্বেগ বেশি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব এবং সত্যতা
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ২০২৫ সালের গরমের ছুটি বাড়ানো নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই জানতে চাইছেন, ছুটি কি সত্যিই সাত দিন বাড়ানো হয়েছে বা স্কুল কি ১৬ই জুন খুলবে।
তবে এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে বা মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর থেকে ২০২৫ সালের গরমের ছুটি বাড়ানো সংক্রান্ত কোনও রকম সরকারি বিজ্ঞপ্তি বা ঘোষণা করা হয়নি। সোশ্যাল মিডিয়ায় যে খবরগুলি ঘুরছে, সেগুলি কোনও নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে আসেনি।
যতক্ষণ না পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনও বিজ্ঞপ্তি আসছে, ততক্ষণ ছুটি বাড়ানোর কোনও খবরকেই সত্যি বলে ধরে নেওয়া উচিত নয়।
আগামী দিনের পরিকল্পনা
আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে ভবিষ্যতে ছুটি আরও বাড়ানো হতে পারে বলে মনে করেন অনেকে। আবহাওয়া দপ্তরের সতর্কতা এবং স্বাস্থ্য দপ্তরের পরামর্শ মেনে সরকার পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।
যদি জুনের প্রথম সপ্তাহেও তাপমাত্রা কমার কোনও লক্ষণ না দেখা যায়, তাহলে আরও ছুটি বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সেক্ষেত্রে পাঠ্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা নিতে হতে পারে।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার গরমের ছুটি শেষ হলে ফের ছুটি দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে মূলত শিশুদের স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে। তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে শিক্ষার্থীদের স্কুলে পাঠানো ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এই পরিস্থিতিতে ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকদের ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে সরকারি ঘোষণার জন্য। সব ধরনের গুজবে কান না দিয়ে শুধুমাত্র সরকারি বিজ্ঞপ্তির উপর ভরসা রাখাই হবে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।