Sugar and kids’ hyperactivity: পার্টিতে মিষ্টি খাওয়ার পর শিশুরা হঠাৎ উচ্ছল হয়ে ওঠে – এমন দৃশ্য অনেক বাবা-মায়ের কাছে পরিচিত। অনেকেই বিশ্বাস করেন চিনি খেলে শিশুরা অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে ওঠে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, বৈজ্ঞানিক গবেষণা এই জনপ্রিয় ধারণার বিপরীতে দাঁড়িয়েছে। বিগত কয়েক দশকের বিভিন্ন গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চিনির সেবন এবং শিশুদের অতিসক্রিয়তার মধ্যে সরাসরি কোনো যোগসূত্র নেই।
১৯৭০-এর দশকে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডঃ বেন ফেইনগোল্ড তাঁর “হোয়াই ইওর চাইল্ড ইজ হাইপারঅ্যাকটিভ” বইতে দাবি করেছিলেন যে, চিনিসহ বিভিন্ন খাদ্য উপাদান শিশুদের অতিসক্রিয়তার কারণ হতে পারে। এই দাবি দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছিল এবং বাবা-মায়েদের মধ্যে একটি সাধারণ বিশ্বাসে পরিণত হয়েছিল। তবে ১৯৯০-এর দশক থেকে নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হলে, বিজ্ঞানীরা এই ধারণা প্রশ্নবিদ্ধ করতে শুরু করেন।
গ্রীষ্মকালে সুস্থ থাকুন: এই ৫টি ফল রাখবে আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে
মেটা-অ্যানালিসিস (যে গবেষণায় বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল একত্রিত করে বিশ্লেষণ করা হয়) দেখিয়েছে যে, ৫০০-এরও বেশি শিশুর উপর পরিচালিত ২৩টি গবেষণায়, চিনি শিশুদের আচরণ, মানসিক কার্যক্ষমতা, বা শিক্ষাগত পারফরম্যান্সের উপর কোনো উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে না। এই গবেষণাগুলিতে শিশুদের চিনি এবং কৃত্রিম মিষ্টকারক (প্লেসিবো) খাওয়ানোর পর তাদের আচরণের পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল।
আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্সের চেয়ার মার্ক করকিন্স মন্তব্য করেছেন যে, “গবেষকদের একান্ত সিদ্ধান্ত হলো – এখানে কোনো সম্পর্ক নেই, একেবারেই নেই”। এমনকি অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার (ADHD) আছে এমন শিশুদের উপরও চিনি কোনো উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে না বলে গবেষণা নির্দেশ করে।
কেন তবে এত বাবা-মা চিনি ও হাইপারঅ্যাকটিভিটির মধ্যে সম্পর্ক দেখেন? একটি আকর্ষণীয় গবেষণায় দেখা গেছে, বাবা-মায়েরা যখন ভাবেন তাদের শিশু চিনি খেয়েছে (যদিও আসলে তারা কৃত্রিম মিষ্টকারক খেয়েছিল), তখনও তারা শিশুদের অতিসক্রিয় বলে মনে করেন। এটি প্রমাণ করে যে এখানে একটি সম্পূর্ণ মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব কাজ করে – বিশ্বাসের প্রত্যাশা বাস্তবতাকে প্রভাবিত করে।
অনেক সময় পার্টি বা জন্মদিনের অনুষ্ঠানে শিশুরা আসলে উত্তেজিত হয় বন্ধুদের সাথে দেখা করার কারণে, খেলার কারণে, বা অন্যান্য উদ্দীপনার কারণে – চিনির জন্য নয়। কিছু গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, চিনি শিশুদের মধ্যে সেরোটোনিন উৎপাদন করে যা একটি আরাম প্রদানকারী কেমিক্যাল – তাই চিনি আসলে কিছু ক্ষেত্রে শান্তিদায়ক প্রভাব ফেলতে পারে।
তবে বিরোধী কিছু তথ্যও আছে। ২০২০ সালের একটি মেটা-অ্যানালিসিসে, ২৫,০০০-এর বেশি অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে ৭টি গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে, চিনি ও ADHD লক্ষণের মধ্যে একটি সম্ভাব্য সম্পর্ক থাকতে পারে। বিশেষ করে চিনিযুক্ত পানীয় (সফট ড্রিংকস) সেবন ADHD-এর সাথে বেশি সংযুক্ত বলে মনে হচ্ছে। তবে এই গবেষণায় গবেষকরা উল্লেখ করেছেন যে অন্তর্ভুক্ত অধ্যয়নগুলির মধ্যে বিষম্যতা ছিল, যা ফলাফলকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
রিফাইনড (প্রক্রিয়াজাত) চিনি রক্তে দ্রুত প্রবেশ করে, যা রক্তে শর্করার মাত্রার দ্রুত ওঠানামা ঘটাতে পারে। এর ফলে কিছু শিশু আরও সক্রিয় হতে পারে। কিছু গবেষণা কৃত্রিম রং ও হাইপারঅ্যাকটিভিটির মধ্যে সম্পর্ক দেখিয়েছে, কিন্তু অন্যরা এই সম্পর্ক খুঁজে পায়নি। এই বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি।
বাবা-মায়েদের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, চিনি সীমিত করার অন্যান্য বেশ কিছু যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে। অতিরিক্ত চিনি দাঁতের ক্ষয়, অপুষ্টি, এবং স্থূলতা বাড়ানোর প্রধান কারণ। তাই শিশুদের খাদ্যে চিনির পরিমাণ সীমিত রাখা উচিত, তবে হাইপারঅ্যাকটিভিটির ভয়ে নয়, বরং অন্যান্য স্বাস্থ্যগত কারণে।
একটি আশার কথা হল, চিনির পরিবর্তে আঁশযুক্ত খাবার যেমন ওটমিল, শ্রেডেড হুইট, বেরি, কলা, হোল-গ্রেইন প্যানকেক ইত্যাদি খাওয়ালে রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল থাকে। এছাড়া শিশুদের জন্য “কোয়াইট টাইম” বা শান্ত সময় নির্ধারণ করে দিলে তারা নিজেদেরকে শান্ত রাখতে শিখতে পারে।
সবশেষে, আপনি যদি দেখেন আপনার শিশু সমবয়সী শিশুদের তুলনায় বসে থাকতে পারে না বা নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ এটি আসলে চিনির প্রভাব নয়, অন্য কোনো মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ হতে পারে যা পেশাদার দৃষ্টি দিয়ে মূল্যায়ন করা দরকার।