Sunita 400 km height birthday: নাসার অ্যাস্ট্রনট সুনীতা উইলিয়ামস তাঁর ৫৯তম জন্মদিন পালন করলেন একেবারেই অসাধারণ এক পরিবেশে – পৃথিবী থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার উপরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (International Space Station)। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে তিনি এই অনন্য জন্মদিন উদযাপন করেন। এটি তাঁর দ্বিতীয় জন্মদিন যা তিনি মহাকাশে পালন করছেন।সুনীতা উইলিয়ামস এবং তাঁর সহকর্মী অ্যাস্ট্রনট ব্যারি “বাচ” উইলমোর গত ৫ জুন থেকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে রয়েছেন।
তাঁরা বোয়িং স্টারলাইনার স্পেসক্র্যাফ্টের প্রথম মানবযুক্ত পরীক্ষামূলক মিশনের অংশ হিসেবে মহাকাশে গিয়েছিলেন। মূলত ১০ দিনের জন্য পরিকল্পিত এই মিশন প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে দীর্ঘায়িত হয়েছে।বোয়িং স্টারলাইনারের হিলিয়াম লিক এবং থ্রাস্টার সমস্যার কারণে অ্যাস্ট্রনটদের ফেরত আনা যাচ্ছে না।
সুনীতা উইলিয়ামস ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মহাকাশে আটকে থাকতে পারেন
ফলে তাঁদের মিশন ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে তাঁরা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে অবস্থান করে বিভিন্ন গবেষণা ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে সহায়তা করছেন।সুনীতা উইলিয়ামসের এই জন্মদিন উপলক্ষে ভারতীয় সংগীত লেবেল সারেগামা একটি আবেগঘন সামাজিক মাধ্যমের শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রকাশ করেছে। এতে বিখ্যাত ভারতীয় সেলিব্রিটিরা তাঁর জন্য গান গেয়েছেন। ভিডিওতে করণ জোহর, হরিহরণ, সোনু নিগম, শান এবং নীতি মোহন অংশগ্রহণ করেছেন। তাঁরা ১৯৬৭ সালের ‘ফার্জ’ চলচ্চিত্রের বিখ্যাত গান ‘বার বার দিন ইয়ে আয়ে’ গেয়েছেন।
সুনীতা উইলিয়ামস ১৯৬৫ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ওহায়োর ইউক্লিডে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ডঃ দীপক পান্ড্যা গুজরাটের। তিনি ভারতে বেশ কয়েকবার এসেছেন এবং গুজরাটের ঝুলাসান গ্রামে তাঁর পৈতৃক বাড়িও পরিদর্শন করেছেন।সুনীতা উইলিয়ামস একজন অত্যন্ত অভিজ্ঞ অ্যাস্ট্রনট। তিনি ইতিমধ্যে দুটি দীর্ঘমেয়াদী মহাকাশ মিশনে অংশ নিয়েছেন। প্রথমটি ছিল এক্সপেডিশন ১৪/১৫, যা চলেছিল ২০০৬ সালের ৯ ডিসেম্বর থেকে ২০০৭ সালের ২২ জুন পর্যন্ত। দ্বিতীয়টি ছিল এক্সপেডিশন ৩২/৩৩, যা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১২ সালের ১৪ জুলাই থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত। এই দুটি মিশনে তিনি মোট ৩২২ দিন মহাকাশে কাটিয়েছেন।বর্তমানে চলমান মিশনটি সুনীতা উইলিয়ামসের তৃতীয় দীর্ঘমেয়াদী মহাকাশ অভিযান।
এই মিশন শেষ হলে তাঁর মোট মহাকাশে অবস্থানের সময় দাঁড়াবে প্রায় ৮ মাস। তিনি মহিলা অ্যাস্ট্রনটদের মধ্যে মহাকাশে হাঁটার সময়ের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন। তাঁর মোট স্পেসওয়াক সময় ৫০ ঘণ্টা ৪০ মিনিট।মহাকাশে থাকাকালীন সুনীতা উইলিয়ামস বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ গবেষণায় অংশ নিচ্ছেন। তিনি মহাকাশে উদ্ভিদ চাষের জন্য তরল পদার্থবিদ্যার প্রয়োগ নিয়ে গবেষণা করছেন। অমাধ্যাকর্ষ পরিবেশে উদ্ভিদের জলসেচন ও পুষ্টি সরবরাহের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এই গবেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।এছাড়াও তিনি মহাকাশ স্টেশনের জল সরবরাহ ব্যবস্থা থেকে সংগৃহীত অণুজীবের নমুনা থেকে DNA নিষ্কাশন করেছেন।
এই গবেষণা মহাকাশযানে জীবাণুর উপস্থিতি ও প্রভাব বোঝার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে।সুনীতা উইলিয়ামস এবং তাঁর সহকর্মী বাচ উইলমোর আল্ট্রাসাউন্ড ডিভাইস ব্যবহার করে শিরার স্ক্যান করেছেন। এর মাধ্যমে গবেষকরা বুঝতে পারবেন কীভাবে অমাধ্যাকর্ষ পরিবেশ মানব শরীরকে প্রভাবিত করে। তাঁরা পরস্পরের গলা, কাঁধ ও পায়ের শিরার ছবি তুলেছেন, যা পৃথিবীতে অবস্থিত চিকিৎসকরা রিয়েল-টাইমে পর্যবেক্ষণ করেছেন।নাসা জানিয়েছে, বোয়িং স্টারলাইনারের প্রযুক্তিগত সমস্যা সমাধানের জন্য প্রকৌশলীরা নিউ মেক্সিকোর হোয়াইট স্যান্ডস টেস্ট ফ্যাসিলিটিতে গ্রাউন্ড হট ফায়ার টেস্টিং সম্পন্ন করেছেন। এই পরীক্ষায় মহাকাশযানটি মহাকাশ স্টেশনে যাওয়ার সময় যে পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিল, সেই অনুরূপ পরিস্থিতিতে ইঞ্জিন চালানো হয়েছে।
এছাড়াও মহাকাশ স্টেশন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া এবং পৃথিবীতে ফেরার সময় যে পরিস্থিতি হতে পারে, সেই ধরনের বিভিন্ন চাপযুক্ত পরিস্থিতিতেও ইঞ্জিন চালানো হয়েছে। বর্তমানে প্রকৌশলীরা এই পরীক্ষার তথ্য বিশ্লেষণ করছেন।সুনীতা উইলিয়ামস এবং বাচ উইলমোরের নিরাপদে ফিরে আসা নিশ্চিত করার জন্য নাসা জরুরি পরিকল্পনাও প্রস্তুত করেছে। স্পেসএক্স-এর ড্রাগন ক্রু ক্যাপসুল, যা ক্রু-৮ মিশনকে সমর্থন করছে, তাকে এখন জরুরি প্রত্যাবর্তন যানরূপে কনফিগার করা হয়েছে। এই ব্যবস্থা নাসার স্পেসএক্স ক্রু-৯ মিশনের উৎক্ষেপণ পর্যন্ত চালু থাকবে, যা আগামী ২৪ সেপ্টেম্বরের আগে হবে না।
পৃথিবীর কক্ষপথে ১০,০০০ সক্রিয় স্যাটেলাইট: এলন মাস্কের নেতৃত্বে মহাকাশ বিপ্লব
সুনীতা উইলিয়ামসের এই অসাধারণ জন্মদিন উদযাপন তাঁর অনন্য জীবন ও কর্মের প্রতিফলন। তিনি শুধু একজন দক্ষ অ্যাস্ট্রনটই নন, বরং মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে একজন অগ্রদূতও বটে। তাঁর কাজ ভবিষ্যতে মহাকাশ অভিযান ও মঙ্গল গ্রহে মানুষের বসতি স্থাপনের পথ প্রশস্ত করছে।তাঁর এই জন্মদিন উদযাপন আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে মানুষের জ্ঞান ও অন্বেষণের সীমা কতটা প্রসারিত হয়েছে। একসময় যা কল্পনাতীত ছিল, আজ তা বাস্তবে পরিণত হয়েছে। সুনীতা উইলিয়ামসের মতো ব্যক্তিরা আমাদের দেখাচ্ছেন যে মানবজাতির জন্য কোনো লক্ষ্যই অধরা নয়।
মন্তব্য করুন