ভারতের সর্বোচ্চ আদালত মঙ্গলবার সংস্থাপন করল যে আধার কার্ড নাগরিকত্বের কোনো প্রমাণপত্র নয়, এবং এ নিয়ে কোনো সংশয় থাকা উচিৎ নয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইউআইডিএআই-কে কঠোর নির্দেশ দিয়ে আদালত জানিয়েছে, আধার শুধুমাত্র জনসংখ্যা পরিসংখ্যান ও সেবাদানের সুবিধার্থে চালু করা হয়; এটি ভারতীয় নাগরিকত্বের স্বীকৃতিপত্র হিসেবে ব্যবহার করার কোনো অধিকার কারো নেই।
এই রায়বিতে ব ব্যবস্থা করা হয় যে আধার নিবন্ধনের সময় নাগরিকত্ব যাচাই বিবেচনায় আসবে না। মামলাটি কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে দাখিল করা একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদেশ দেয়া হয়, যেখানে বলা হয়েছিল আধার ভিজিটিং বৈধতার স্বার্থে নাগরিকত্ব প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ এই যুক্তি প্রত্যাখ্যান করে দিল।
আদালতের বিস্তারিত পর্যালোচনায় উঠে এসেছে—‘আধারে নাগরিকত্বের কোনো উল্লেখ বা গ্যারান্টি নেই। এটি কেবল biometrics এবং ডেমোগ্রাফিক ডেটা সংরক্ষণের একটি মাধ্যমে মাত্র।’ বিচারপতি মেহতা বলেন, ‘নাগরিকত্ব প্রমাণে আধার ব্যবহার অনুচিত এবং বিরাট নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে’। ফলে কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রককে এই আদেশ অনুযায়ী পরিবর্তিত নির্দেশিকা জারি করতে হবে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শাহ বলেছেন, ‘সরকার আধারকে সুরক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক কল্যাণ কর্মসূচিতে নিশ্চিত করতে চাইছে, নাগরিকত্ব যাচাইয়ের কোনো উদ্দেশ্য নেই।’ এর আগে ২০১৮ সালে এনআরসি নিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে তোলপাড় হয়েছিল; সেই সময়েও আধার–নাগরিকত্ব নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ায়। এখন সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট অবস্থান শান্তি ফিরিয়ে দেবে সম্ভাব্য জনস্বার্থ বিরোধিতায়।
পটভূমি হিসেবে জানা যায়, ২০০৯ সালে আধার প্রকল্প শুরু করে কেন্দ্রীয় সরকার। সময়ের সঙ্গে ইউআইডিএআই আধার প্ল্যাটফর্মে ১৩ কোটি অধিক নিবন্ধন করেছে। তবে কেন্দ্রের বিভিন্ন নীতিতে আধারকে ‘ডিজিটাল আইডি’ হিসেবে দেখানো হয়েও নাগরিকত্বের গ্যারান্টি থেকে দূরে রাখা হয়েছিল। আদালতের এই আদেশ সেই বিভ্রান্তি দূর করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা আদেশকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। আইনজীবী অর্ঘ্য রায় বলেন, ‘নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সুরক্ষায় এই রায় নতুন দিশা দেখাবে।’ একই সঙ্গে, রাষ্ট্রের আধার-ভিত্তিক সেবা ব্যবস্থায় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে বলে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে আদালত নির্দেশ দিয়েছে।
উপসংহারে, আধার কার্ড বিদেশী বা অভিবাসী পর্যটক, বাসিন্দা অথবা ভারতীয় নাগরিক যেকোনো প্রকার পরিচয় সনদ হতে পারে না; এটি আদৌ নাগরিকত্ব নিরূপণ করবে না—এটাই সর্বোচ্চ আদালতের মূল বার্তা।