সুইমার’স ইয়ার’—গ্রীষ্মের আনন্দে লুকিয়ে থাকা এক অস্বস্তিকর বিপদ!

what is swimmer’s ear: গ্রীষ্মের ছুটিতে সুইমিং পুল, নদী কিংবা সমুদ্রের জলে ডুব দিতে কার না ভালো লাগে! কিন্তু এই আনন্দের মাঝেই অনেকের অজান্তেই ঘাপটি মেরে থাকে এক বিরক্তিকর অসুখ—সুইমার’স…

Debolina Roy

 

what is swimmer’s ear: গ্রীষ্মের ছুটিতে সুইমিং পুল, নদী কিংবা সমুদ্রের জলে ডুব দিতে কার না ভালো লাগে! কিন্তু এই আনন্দের মাঝেই অনেকের অজান্তেই ঘাপটি মেরে থাকে এক বিরক্তিকর অসুখ—সুইমার’স ইয়ার’ (Swimmer’s Ear)। আপনি কি জানেন, এই রোগটি কেবল সাঁতারুদের নয়, বরং যেকোনো বয়সের, এমনকি শিশুরাও আক্রান্ত হতে পারে? চলুন, বিস্তারিত জানি সুইমার’স ইয়ার’ রোগের লক্ষণ, কারণ ও করণীয় সম্পর্কে।

সুইমার’স ইয়ার’ (Swimmer’s Ear) কী?

সুইমার’স ইয়ার’ বা মেডিক্যাল ভাষায় Otitis Externa হলো কানের বাইরের ছিদ্র (ear canal)-এর প্রদাহ বা সংক্রমণ, যা সাধারণত জলে ডুবে থাকার কারণে হয়। যখন কানে পানি ঢুকে দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকে, তখন সেখানে ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকের জন্ম হয় এবং সংক্রমণ তৈরি করে। শুধু সাঁতারের জন্য নয়, অতিরিক্ত কটন বাড, আঙুল বা অন্য কিছু দিয়ে কান খোঁচালেও এই রোগ হতে পারে। গরম ও আর্দ্র পরিবেশে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।

সুইমার’স ইয়ার’ রোগের লক্ষণ—কীভাবে বুঝবেন?

সুইমার’স ইয়ার’ এর লক্ষণগুলো সাধারণত ধাপে ধাপে বাড়তে থাকে। প্রথমদিকে হালকা হলেও অবহেলা করলে জটিলতাও দেখা দিতে পারে।

প্রাথমিক লক্ষণ

  • কানের ভেতরে চুলকানি
  • হালকা লালচে ভাব বা অস্বস্তি
  • কানের ছিদ্র থেকে স্বচ্ছ, গন্ধহীন তরল বের হওয়া
  • কান টানলে বা চাপ দিলে ব্যথা অনুভব

মাঝারি পর্যায়ের লক্ষণ

  • চুলকানি ও ব্যথা বেড়ে যাওয়া
  • কানে ভারী লাগা বা পূর্ণতার অনুভূতি
  • কানের ছিদ্র আংশিক বন্ধ হয়ে যাওয়া, শুনতে সমস্যা
  • কানের ভেতরে ও বাইরে আরও বেশি লালচে ভাব ও ফোলা
  • ঘন তরল বা পুঁজ বের হওয়া

গুরুতর লক্ষণ

  • ব্যথা এতটাই তীব্র হয় যে তা মুখ, গলা বা মাথার পাশে ছড়িয়ে পড়ে
  • কানের ছিদ্র পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়া
  • কানের বাইরের অংশ ফুলে যাওয়া
  • গলায় বা কানের চারপাশে লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়া
  • জ্বর

এছাড়া, অনেক সময় কানে বাজা, ভারসাম্যহীনতা বা সাময়িক শ্রবণশক্তি কমে যেতে পারে।

কেন হয় সুইমার’স ইয়ার’?

  • কানে পানি ঢুকে আটকে থাকা (বিশেষত পুল, নদী, সমুদ্রের পানি)
  • কটন বাড, আঙুল বা অন্য কিছু দিয়ে কান খোঁচানো
  • কানে হেডফোন, ইয়ারবাড বা হেয়ার স্প্রে, শ্যাম্পু, ডাই-এর রাসায়নিক ঢুকে যাওয়া
  • ডায়াবেটিস, একজিমা বা চর্মরোগ থাকলে ঝুঁকি বেড়ে যায়
  • সংকীর্ণ কানের ছিদ্র বা অতিরিক্ত ময়লা জমা

কারা বেশি ঝুঁকিতে?

শিশু ও কিশোরদের মধ্যে এই রোগ বেশি দেখা যায়, বিশেষত ৭-১৪ বছর বয়সীদের মধ্যে। তবে যেকোনো বয়সের মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন। গ্রীষ্মকালে, যখন সাঁতারের প্রবণতা বেশি, তখন রোগের প্রকোপও বাড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি ১০০০ বার সাঁতার কাটার মধ্যে প্রায় ৭ জনের এই সমস্যা হতে পারে। আমেরিকার মতো দেশে বছরে প্রায় ৯ লাখের বেশি মানুষ সুইমার’স ইয়ার’-এ আক্রান্ত হন।

চিকিৎসা ও করণীয়

  • শুরুতে: সাধারণত চিকিৎসক প্রদত্ত অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিফাঙ্গাল ইয়ার ড্রপসেই সুস্থ হয়ে যায়।
  • ব্যথা বেশি হলে: ব্যথানাশক ওষুধ দেওয়া হয়।
  • জটিল ক্ষেত্রে: মুখে খাওয়ার অ্যান্টিবায়োটিক বা বিশেষ চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।
  • কখনোই নিজে নিজে কটন বাড, আঙুল বা অন্য কিছু দিয়ে কান পরিষ্কার করবেন না।
  • কানের পানি শুকনো রাখতে হবে—সাঁতারের পর ভালোভাবে তোয়ালে দিয়ে কান মুছে নিন, প্রয়োজনে মাথা কাত করে পানি বের করে নিন।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?

  • কানে ব্যথা একদিনের বেশি স্থায়ী হলে
  • কানের ছিদ্র থেকে পুঁজ বা দুর্গন্ধযুক্ত তরল বের হলে
  • শুনতে সমস্যা হলে বা জ্বর এলে
  • আগের চিকিৎসায় কাজ না হলে

সুইমার’স ইয়ার’ থেকে বাঁচার উপায়

  • সাঁতারের সময় ইয়ারপ্লাগ ব্যবহার করুন
  • সাঁতারের পর কানের পানি ভালোভাবে শুকিয়ে নিন
  • কানে কিছু ঢোকাবেন না (কটন বাড, আঙুল ইত্যাদি)
  • বারবার সংক্রমণ হলে চিকিৎসকের পরামর্শে কানে ড্রাইং ড্রপ ব্যবহার করুন

সুইমার’স ইয়ার’ (Swimmer’s Ear) গ্রীষ্মের মজার দিনে অস্বস্তি এনে দিতে পারে, তবে সচেতনতা ও দ্রুত চিকিৎসায় এই রোগ সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। কানে সামান্য অস্বস্তি বা ব্যথা অনুভব করলেই অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সাঁতারের আনন্দে যেন কানের কোনো সমস্যা বাধা না হয়ে দাঁড়ায়—সেজন্য সতর্ক থাকুন, সুস্থ থাকুন!

About Author
Debolina Roy

দেবলীনা রায় একজন চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক লেখক, যিনি স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্পর্কে পাঠকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নিবেদিত। ডাক্তারি নিয়ে পড়াশোনা করা দেবলীনা তার লেখায় চিকিৎসা বিষয়ক জটিল তথ্যগুলি সহজ ভাষায় উপস্থাপন করেন, যা সাধারণ পাঠকদের জন্য সহজবোধ্য এবং উপকারী। স্বাস্থ্য, পুষ্টি, এবং রোগ প্রতিরোধের বিষয়ে তার গভীর জ্ঞান এবং প্রাঞ্জল লেখনী পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। দেবলীনা রায়ের লক্ষ্য হল সঠিক ও তথ্যনির্ভর স্বাস্থ্যবিধি প্রচার করা এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা।