Swing states US presidential election 2024: যুক্তরাষ্ট্রের ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণে মূল ভূমিকা পালন করবে সাতটি ‘স্বিং স্টেট’ বা দোলায়মান রাজ্য। এই রাজ্যগুলোতে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস এবং রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে চলছে কাঁটায় কাঁটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা।
সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, এই রাজ্যগুলোতে দুই প্রার্থীর মধ্যে ব্যবধান মাত্র ১-২ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ।স্বিং স্টেট হিসেবে পরিচিত এই সাতটি রাজ্য হলো – আরিজোনা, জর্জিয়া, মিশিগান, নেভাডা, নর্থ ক্যারোলিনা, পেনসিলভানিয়া এবং উইসকনসিন। এই রাজ্যগুলোর মোট ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট সংখ্যা ৯৩। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে একজন প্রার্থীকে অবশ্যই ২৭০টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পেতে হবে। তাই এই রাজ্যগুলোর ফলাফল নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
২০২৪ মার্কিন নির্বাচন: অর্থনীতি ও অভিবাসন নিয়ে তুমুল লড়াই!
গত ২০২০ সালের নির্বাচনে এই সাতটি রাজ্যের মধ্যে ছয়টিতে জয়লাভ করেছিলেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। কেবলমাত্র নর্থ ক্যারোলিনায় জিতেছিলেন ট্রাম্প। তবে এবারের নির্বাচনে পরিস্থিতি পুরোপুরি ভিন্ন। সাম্প্রতিক জরিপগুলোতে দেখা যাচ্ছে, এই রাজ্যগুলোর বেশিরভাগেই ট্রাম্প এগিয়ে আছেন।আরিজোনায় ট্রাম্প ৫১.৯% ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, অন্যদিকে হ্যারিস পাবেন ৪৫.১% ভোট। জর্জিয়ায় ট্রাম্প পাচ্ছেন ৫০.৩% আর হ্যারিস ৪৭.১% ভোট। মিশিগানে ট্রাম্প ৪৯.৭% এবং হ্যারিস ৪৭.৬% ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নেভাডায় ট্রাম্প ৫১.৪% এবং হ্যারিস ৪৫.৯% ভোট পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। নর্থ ক্যারোলিনায় ট্রাম্প ৫০.৪% এবং হ্যারিস ৪৬.৮% ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পেনসিলভানিয়ায় ট্রাম্প ৪৯.৯% এবং হ্যারিস ৪৭.৪% ভোট পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। উইসকনসিনে ট্রাম্প ৫০.২% এবং হ্যারিস ৪৭.১% ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে এই জরিপের ফলাফল নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। অন্যান্য কিছু জরিপে দেখা গেছে, হ্যারিস এগিয়ে আছেন। রয়টার্স/ইপসস জরিপে দেখা গেছে, হ্যারিস জাতীয়ভাবে ১ শতাংশ পয়েন্ট এগিয়ে আছেন। তিনি পেয়েছেন ৪৪% ভোট, অন্যদিকে ট্রাম্প পেয়েছেন ৪৩% ভোট।এই নির্বাচনে ইতিহাস তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি হ্যারিস জয়লাভ করেন, তাহলে তিনি হবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। পাশাপাশি তিনি হবেন প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রেসিডেন্ট। অন্যদিকে যদি ট্রাম্প জয়লাভ করেন, তাহলে তিনি হবেন গত ১০০ বছরে প্রথম প্রেসিডেন্ট যিনি দুটি অবিচ্ছিন্ন মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফিরে যাবেন।নির্বাচনের দিন ৫ নভেম্বর।
বিশ্বনেতাদের চোখে বাইডেনের পদত্যাগ: আমেরিকার রাজনীতিতে নতুন মোড়
সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। প্রথম ফলাফল আসা শুরু হবে পূর্ব সময় অনুযায়ী সন্ধ্যা ৭টা থেকে। তবে চূড়ান্ত ফলাফল জানতে কয়েকদিন সময় লাগতে পারে। কারণ মেইল-ইন ব্যালট গণনা করতে সময় লাগবে।এবারের নির্বাচনে প্রচুর আগাম ভোট পড়েছে। ইতিমধ্যে ৭৮ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ ভোট দিয়েছেন। এটি ২০২০ সালের মোট ভোটের প্রায় অর্ধেক। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এবার মোট ভোটার অংশগ্রহণ হবে প্রায় ১৫০ মিলিয়ন, যা হবে একটি রেকর্ড।নির্বাচনী প্রচারণার শেষ দিনগুলোতে দুই প্রার্থীই স্বিং স্টেটগুলোতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। হ্যারিস বলছেন, তিনি সকল আমেরিকানদের জন্য প্রেসিডেন্ট হবেন। তিনি গর্ভপাতের অধিকার পুনর্বহাল এবং ছোট ব্যবসা ও পরিবারগুলোকে কর ছাড় দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
অন্যদিকে ট্রাম্প বলছেন, তিনি শুল্ক আরোপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে রক্ষা করবেন। তিনি অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের ওপরও জোর দিচ্ছেন।তবে দুই প্রার্থীর মধ্যে বিতর্কও তীব্র হয়েছে। ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, ডেমোক্র্যাটরা নির্বাচনে কারচুপি করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেছেন, তিনি পরাজয় মেনে নেবেন না। অন্যদিকে হ্যারিস বলেছেন, ট্রাম্প গণতন্ত্রের জন্য হুমকি।বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এবারের নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণ করবে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর মধ্যে রয়েছে – অর্থনীতি, অভিবাসন, গর্ভপাতের অধিকার, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি। যে প্রার্থী এই বিষয়গুলোতে ভোটারদের আস্থা অর্জন করতে পারবেন, তিনিই সম্ভবত জয়লাভ করবেন।তবে নির্বাচনের পর ফলাফল নিয়ে বিতর্ক দেখা দিতে পারে।
২০২০ সালের নির্বাচনের পর ট্রাম্প ফলাফল মেনে নেননি। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে। এর ফলে ৬ জানুয়ারি ২০২১ সালে ক্যাপিটল হিলে সহিংসতা সংঘটিত হয়েছিল। এবারও অনেকে আশঙ্কা করছেন, নির্বাচনের পর অশান্তি দেখা দিতে পারে।যাই হোক, আগামী কয়েকদিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই নির্বাচনের ফলাফল শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নয়, সারা বিশ্বের ওপর প্রভাব ফেলবে। তাই সারা বিশ্ব এখন অপেক্ষা করছে, কে হবেন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট – কমলা হ্যারিস নাকি ডোনাল্ড ট্রাম্প।
মন্তব্য করুন