Tapsee Tabassum Urmi Executive Magistrate Bangladesh: তাপসী তাবাসসুম উর্মি লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে ফেসবুকে একটি বিতর্কিত পোস্ট করেন, যার ফলে তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
তাপসী তাবাসসুম উর্মি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। তিনি ২০২২ সালে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন ২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর সহকারী কমিশনার হিসেবে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনে যোগদান করেন তাপসী ।গত শনিবার নিজের ফেসবুক পেজে তাপসী তাবাসসুম উর্মি লিখেছিলেন, “সাংবিধানিক ভিত্তিহীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, রিসেট বাটনে পুশ করা হয়েছে। অতীত মুছে গেছে। রিসেট বাটনে ক্লিক করে দেশের সব অতীত ইতিহাস মুছে ফেলেছেন তিনি। এতই সহজ। কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে আপনার, মহাশয়।”
এই পোস্টটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে রোববার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাপসী তাবাসসুম উর্মিকে ওএসডি (অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি) করা হয়। পরে সোমবার তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে সরকার।জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মানসুর হোসাইন গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “সহকারী কমিশনার তাপসী তাবাসসুম উর্মিকে ওএসডি করার পর, সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।”
এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় তাপসী তাবাসসুম উর্মি বলেন, “আমি যদি অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে না-ও থাকতাম, আমি সেইম কথাটা বলতাম। আমি মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি হতে পারবে না। এটা সম্ভব না। যখন যেই গভর্নমেন্ট আসবে, দুই ধরনের কন্ট্রাডিক্টরি কথা বলবে, একজন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বলবে, আরেকজন মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বলবে, আমি হ্যাঁ হ্যাঁ করব, এটা হিপোক্রেসি। দুইটা কন্ট্রাডিক্টরি মতে একমত পোষণ করা, এটা হিপোক্রেসি।”
তিনি আরও বলেন, “আমি যদি দেখি কেউ মুক্তিযুদ্ধকে মুছে ফেলতে চায়, আমি তার বিপক্ষে কথা বলব। আমি যখন দেখব, আমার দেশের ওপর কোনো থ্রেট চলে আসছে, দেশকে বাঁচানোর জন্য আমার যতটুকু বলা উচিত, সেই বলাটাই আমার দায়িত্বশীলতা।”তাপসী তাবাসসুম উর্মির ফেসবুক আইডিতে গিয়ে দেখা গেছে, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বেশ কিছু স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া, আওয়ামী লীগের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়ে বেশকিছু পোস্টও করেছেন।
এদিকে, গণঅভ্যুত্থানের শহীদ আবু সাঈদকে সন্ত্রাসী আখ্যা দেওয়ায় লালমনিরহাট জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাপসী তাবাসসুম উর্মিকে এবার স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ‘জাস্টিস ফর জুলাই’ নামক একটি প্ল্যাটফরম। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে আজ সোমবার এ উপলক্ষ্যে অয়োজিত এক গণবিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে এ দাবি তোলা হয়। আয়োজকরা বলছেন, তাপসী তাবাসসুম উর্মির স্থায়ী বহিষ্কার দাবি করে আজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা, রাজশাহী, খুলনা, সাতক্ষীরা, নোয়াখালী, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের ১৫টি জেলায় তাৎক্ষণিকভাবে গণবিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
‘জাস্টিস ফর জুলাই’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কর্তৃক আয়োজিত এই গণবিক্ষোভে সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেট তাপসীর চাকরি থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানান। তারা বলেছেন, জুলাই স্পিরিটের বিরুদ্ধে যারাই অবস্থান নিবে, তারা গণশত্রু। এমন কেউই প্রশাসনের কোনো পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করতে পারবে না। বিক্ষোভে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল আমিন বলেন, “আমরা ম্যাজিস্ট্রেট উর্মীকে বিচারের আওতায় দেখতে চাই। সেই সাথে ফ্যাসিবাদের দোসর যারা এখনো সরকারের মধ্যে থেকে শহীদের এবং জুলাই বিপ্লবকে অপমানিত করার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছেন সকলকে চাকরিচ্যুত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।”
এই ঘটনাটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলে বেশ আলোচনার সৃষ্টি করেছে। একজন সরকারি কর্মকর্তার সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ধরনের মন্তব্য করা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকে মনে করছেন, সরকারি কর্মকর্তাদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার নিয়ে কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন করা প্রয়োজন।এদিকে, তাপসী তাবাসসুম উর্মির এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে অনেক সরকারি কর্মকর্তা সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের মতামত প্রকাশ করার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিত।এই ঘটনা থেকে আরও একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যে, বাংলাদেশে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব ক্রমশ বাড়ছে। একজন সরকারি কর্মকর্তার একটি ফেসবুক পোস্ট তার চাকরি হারানোর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সোশ্যাল মিডিয়ার গুরুত্বকে তুলে ধরেছে।সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, তাপসী তাবাসসুম উর্মির বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তার ভবিষ্যৎ কর্মজীবন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এই ঘটনা থেকে অন্য সরকারি কর্মকর্তারা শিক্ষা নেবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।