তারকেশ্বরে বাবার মাথায় জল ঢালার নিয়ম: সম্পূর্ণ গাইড যা জানা অত্যাবশ্যক

Taraknath Jal Abhishek Rules: শ্রাবণ মাস এলেই বাংলার কোটি কোটি শিবভক্তের মন পড়ে যায় তারকেশ্বরের দিকে। তারকেশ্বরে বাবার মাথায় জল ঢালার নিয়ম নিয়ে অনেকেরই রয়েছে নানা প্রশ্ন ও দ্বিধা। বিশেষ করে সাম্প্রতিক…

Avatar

 

Taraknath Jal Abhishek Rules: শ্রাবণ মাস এলেই বাংলার কোটি কোটি শিবভক্তের মন পড়ে যায় তারকেশ্বরের দিকে। তারকেশ্বরে বাবার মাথায় জল ঢালার নিয়ম নিয়ে অনেকেরই রয়েছে নানা প্রশ্ন ও দ্বিধা। বিশেষ করে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে মন্দির কর্তৃপক্ষ পুণ্যার্থীদের সুরক্ষা ও সুবিধার কথা মাথায় রেখে বেশ কিছু নতুন নিয়ম চালু করেছে। এই নিয়মগুলি না জানলে আপনার তীর্থযাত্রা হতে পারে অসম্পূর্ণ বা সমস্যাযুক্ত।

আপনি যদি তারকেশ্বরে গিয়ে বাবা তারকনাথের আশীর্বাদ নিতে চান, তাহলে এই সম্পূর্ণ গাইডটি আপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে মন্দিরের নিয়ম-কানুনও পরিবর্তিত হয়েছে। তারকেশ্বরে বাবার মাথায় জল ঢালার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারলে আপনার তীর্থযাত্রা হবে আরও মসৃণ ও পুণ্যময়।

মন্দিরে প্রবেশের নতুন নিয়মাবলী

তারকেশ্বর মন্দিরে বর্তমানে তারকেশ্বরে বাবার মাথায় জল ঢালার নিয়ম অনেকটাই পরিবর্তিত হয়েছে। সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হলো, শ্রাবণ মাসে এবং বিশেষ দিনগুলিতে ভক্তরা আর মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশ করতে পারেন না। এই নিয়ম চালু করা হয়েছে মূলত পুণ্যার্থীদের অতিরিক্ত ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে এবং দুর্ঘটনা এড়াতে।

শ্রাবণ মাসের বিশেষ বিধি-নিষেধ

শ্রাবণ মাসে তারকেশ্বর মন্দিরে বাইরে থেকে বাঁকে করে জল আনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এর পরিবর্তে ভক্তরা তারকেশ্বর মন্দিরে এসে মন্দির থেকেই জল নিয়ে বাবার পূজা-অর্চনা করতে পারবেন। গুরু পূর্ণিমার থেকে মেলা চলাকালীন ভক্তদের জন্য গর্ভগৃহে প্রবেশ নিষিদ্ধ রয়েছে।

শ্রাবণ মাসের সোমবার কি কি খাওয়া যায়: সম্পূর্ণ খাদ্য তালিকা ও নিয়মাবলী

মন্দিরের সময়সূচী

বর্তমানে তারকেশ্বর মন্দির ভোর ৫টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত এবং সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত্রি ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে। শ্রাবণ মাসে মন্দির সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত খোলা থাকে। সন্ধ্যে বেলা মন্দির সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত্রি ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে ভক্তদের সন্ধ্যা আরতি দর্শনের জন্য।

চোঙার মাধ্যমে জল ঢালার প্রক্রিয়া

তারকেশ্বরে বাবার মাথায় জল ঢালার নিয়ম অনুযায়ী এখন সবাইকে চোঙার মাধ্যমে জল ঢালতে হয়। মহাদেবকে জল নিবেদন করতে হচ্ছে চোঙার মাধ্যমে, যা মন্দির কর্তৃপক্ষ গর্ভগৃহের বাইরে রেখেছে। এই ব্যবস্থা করা হয়েছে যাতে অধিক সংখ্যক ভক্ত নিরাপদে এবং সুশৃঙ্খলভাবে পূজা দিতে পারেন।

জল ঢালার সঠিক পদ্ধতি

ভক্তরা মন্দিরে পৌঁছানোর পর প্রথমে লাইনে দাঁড়াতে হয়। লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে মন্দিরের গর্ভগৃহের সামনে রাখা চোঙে জল ঢালতে হয় পরম আনন্দে। সেই সঙ্গে মোমবাতি-ধূপ জালিয়ে মনস্কামনা জানাতে পারেন ভক্তরা।

জল সংগ্রহের নিয়ম

যেহেতু বাইরে থেকে জল নিয়ে আসা নিষেধ, তাই ভক্তরা মন্দির চত্বর থেকেই জল সংগ্রহ করতে পারেন। মন্দির কর্তৃপক্ষ এর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রেখেছে। অনেকে বৈদ্যবাটি নিমাই তীর্থ ঘাট থেকে জল নিয়ে আসলেও, মন্দির প্রাঙ্গণে প্রবেশের সময় সেই জল ব্যবহার করার সুযোগ সীমিত।

স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিধি

কোভিড-১৯ অতিমারীর পর থেকে তারকেশ্বরে বাবার মাথায় জল ঢালার নিয়ম আরও কঠোর হয়েছে। ভক্তরা কোভিড বিধি অনুযায়ী সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মুখে মাস্ক পরে বাবা তারকনাথের দর্শন, জল ঢালা এবং পূজা করতে পারবেন।

ভিড় নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা

মন্দিরে এক সঙ্গে ২০০ জন ভক্ত প্রবেশ করতে পারবেন। এই সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা হয় যাতে অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে। বিশেষ করে শ্রাবণ মাসের সোমবারগুলিতে এই নিয়ম কঠোরভাবে পালন করা হয়।

চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা

তারকেশ্বর মন্দির কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসন পুণ্যার্থীদের জন্য চিকিৎসা সেবার বিশেষ ব্যবস্থা রেখেছে। পথে চলতে চলতে কোনো পুণ্যার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে মেডিকেল টিম ও অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই সাথে বিশুদ্ধ পানীয় জল ও বিশ্রামের ব্যবস্থাও রয়েছে।

শ্রাবণী মেলার বিশেষ নিয়মাবলী

শ্রাবণী মেলা চলাকালীন তারকেশ্বরে বাবার মাথায় জল ঢালার নিয়ম আরও কঠোর হয়ে ওঠে। গুরু পূর্ণিমা থেকে রাখী পূর্ণিমা অবধি একমাস ধরে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। তবে কখনো কখনো শ্রাবণ মাসে দুটি অমবস্যার কারণে এই মেলা দু’মাস ব্যাপী চলে।

বিশেষ দিনের নিয়ম

শ্রাবণ পূর্ণিমা, শ্রাবণের সোমবার এবং শিবরাত্রি বা অন্য বড় দিনে কেউই আর মন্দিরের গর্ভগৃহে ঢুকে শিবলিঙ্গে জল ঢালতে পারবেন না। এই দিনগুলিতে ভক্তরা মন্দিরের বাইরের দেওয়ালে চোঙা ব্যবহার করে জল ঢালতে পারবেন।

শ্রাবণ মাসের সোমবার: মহাদেবের কৃপা লাভের অব্যর্থ উপায়

পরিবেশ রক্ষার নিয়ম

তারকেশ্বরের শ্রাবণী মেলাকে এবার ‘নির্মল মেলা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ব্যবহার করলে ব্যবসায়ীদের জরিমানা করা হচ্ছে। খালে আবর্জনা না ফেলার জন্য সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে।

বাঁক যাত্রার ঐতিহ্য ও বর্তমান অবস্থা

ঐতিহ্যগতভাবে ভক্তরা বৈদ্যবাটি নিমাই তীর্থ ঘাট থেকে জল নিয়ে তারকেশ্বর মন্দির পর্যন্ত যেতেন। প্রায় ৩০ কিলোমিটার রাস্তা বাঁক কাঁধে “ভোলে বাবা পার করেগা” আওয়াজ তুলে হেঁটে চলে লক্ষ লক্ষ ভক্ত। কিন্তু বর্তমানে এই প্রথা সীমিত করা হয়েছে।

গঙ্গা জলের গুরুত্ব

পুরাণ মতে, শ্রাবণ মাসের সোমবার শিবের জন্মবার। তাই শ্রাবণ মাসের প্রত্যেক সোমবার লাখ লাখ ভক্তের সমাগম হয় তারকেশ্বর মন্দিরে। গঙ্গা থেকে তোলা জল ৩০ কিলোমিটার হেঁটে গিয়ে বাবার মাথায় ঢেলে পরম শান্তি পান ভক্তরা।

জলাভিষেকের আধ্যাত্মিক মহত্ত্ব

প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, জল ভর্তি কলসির বাঁক কাঁধে নিয়ে যাত্রা শেষ করলে এবং মহাদেবকে জল অর্পণ করলে দেবাদিদেবের আশীর্বাদ পাওয়া যায়। ভক্তদের সমস্ত মনোস্কামনা পূরণ করেন তিনি। এই কারণেই তারকেশ্বরে বাবার মাথায় জল ঢালার নিয়ম এত গুরুত্বপূর্ণ।

পূজার পরে করণীয়

তারকেশ্বরে বাবার মাথায় জল ঢালার নিয়ম অনুযায়ী শুধু জল ঢালাই যথেষ্ট নয়। শিবলিঙ্গে জল ঢালার পর পূজো করার সময় ভক্তরা তিনবার হাততালি দেওয়া উচিত। এই প্রথা না মানলে পূজো অসম্পূর্ণ থেকে যায় বলে শাস্ত্রে উল্লেখ আছে।

দুধপুকুরে স্নানের নিয়ম

তারকেশ্বর মন্দিরের পাশেই রয়েছে বিখ্যাত দুধপুকুর। এই পুকুরের জলেরও একটা আলাদা মহিমা রয়েছে। পূর্ণ বিশ্বাস ও ভক্তির সাথে এই পুকুরে ডুব দিয়ে স্নান করলে ভক্তজনের সকল মনস্কামনা পূরণ হয় এবং বিভিন্ন রোগব্যাধির প্রকোপ থেকে আরোগ্য লাভ হয়।

প্রণাম ও আরতি দর্শন

জল ঢালার পর ভক্তরা সন্ধ্যা আরতি দর্শন করতে পারেন। সন্ধ্যে বেলা মন্দির সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত্রি ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে ভক্তদের সন্ধ্যা আরতি দর্শনের জন্য। এই সময় মন্দিরে বিশেষ পূজা ও আরতির আয়োজন হয়।

তারকেশ্বরে বাবার মাথায় জল ঢালার নিয়ম সম্পর্কে এই বিস্তারিত তথ্য জানার পর আপনার তীর্থযাত্রা হবে আরও পরিপূর্ণ ও নিরাপদ। মন্দির কর্তৃপক্ষের নতুন নিয়ম-কানুন মেনে চললে আপনিও পেতে পারেন বাবা তারকনাথের পূর্ণ আশীর্বাদ। ভক্তি ও বিশ্বাসের সাথে এই পবিত্র তীর্থধামে গেলে অবশ্যই মিলবে মনের শান্তি ও পরম তৃপ্তি।

About Author
Avatar

আমাদের স্টাফ রিপোর্টারগণ সর্বদা নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন যাতে আপনি বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের সর্বশেষ ও গুরুত্বপূর্ণ খবর পেতে পারেন। তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রতিশ্রুতি আমাদের ওয়েবসাইটকে একটি বিশ্বস্ত তথ্যের উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।তারা নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ রিপোর্টিংয়ে বিশ্বাসী, দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক প্রতিবেদন তৈরিতে সক্ষম