২০২৫ সালের প্রথম ৭৩ দিনে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী বড় ধরনের ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এই সময়ের মধ্যে মোট ৩৮,২৫২ জন কর্মী তাদের চাকরি হারিয়েছেন। বিশেষ করে আমেরিকায় এই ছাঁটাইয়ের প্রভাব সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে। প্রযুক্তি শিল্পে এই ধরনের ব্যাপক কর্মী ছাঁটাই নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এই সংবাদ পড়ে অনেকেই বুঝতে পারছেন যে, প্রযুক্তির দ্রুত উন্নতির পাশাপাশি এর কর্মীদের জন্যও চ্যালেঞ্জ বাড়ছে।
২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত এই ছাঁটাই চলেছে। এই ৭৩ দিনে বিশ্বের বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানি তাদের কর্মী সংখ্যা কমিয়েছে। আমেরিকার মতো উন্নত দেশে এই প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে, কারণ সেখানে বড় বড় টেক জায়ান্ট কোম্পানি রয়েছে। যেমন, কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, গত কয়েক বছরে অটোমেশন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে অনেক কোম্পানি তাদের শ্রমিকদের উপর নির্ভরতা কমিয়ে দিচ্ছে। ফলে, এই বছরের শুরুতেই এত বড় সংখ্যক কর্মী ছাঁটাইয়ের শিকার হয়েছেন। এই পরিস্থিতি শুধু আমেরিকাতেই নয়, ইউরোপ, এশিয়া এবং অন্যান্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে।
এই ঘটনার পেছনে কয়েকটি বড় কারণ কাজ করছে। প্রথমত, প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো বর্তমানে খরচ কমানোর দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে কিছুটা অনিশ্চয়তা থাকায় অনেক কোম্পানি তাদের বাজেট সংকোচন করছে। দ্বিতীয়ত, AI এবং অটোমেশনের মতো প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ায় পুনরাবৃত্তিমূলক কাজের জন্য মানুষের প্রয়োজন কমে গেছে। তবে, এটাও সত্যি যে, উচ্চ দক্ষতার কাজের জন্য এখনও মানুষের প্রয়োজন রয়েছে। তৃতীয়ত, কিছু কোম্পানি তাদের ব্যবসায়িক কৌশল পরিবর্তন করছে, যার ফলে কর্মীদের একটি অংশ অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ছে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু প্রতিষ্ঠান এখন ক্লাউড কম্পিউটিং বা ডেটা অ্যানালিটিক্সের দিকে ঝুঁকছে, যেখানে আগের মতো বেশি লোকের দরকার হয় না।
ছাঁটাইয়ের প্রভাব শুধু কর্মীদের উপরই পড়েনি, বরং পুরো সমাজের উপরও এর ছায়া পড়ছে। আমেরিকায় যেসব প্রযুক্তি কোম্পানি বড় আকারে ছাঁটাই করেছে, সেগুলোর মধ্যে কিছু নামকরা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। গত বছরের তুলনায় এই বছরে ছাঁটাইয়ের হার অনেক বেশি। একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৪ সালে বিমান নেভিগেশন সিস্টেমে সমস্যা বৃদ্ধি পাওয়ার মতো ঘটনা প্রযুক্তি খাতে চাপ সৃষ্টি করেছিল। এই বছরে সেই চাপ আরও বেড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়া, বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির কারণেও কোম্পানিগুলো তাদের কৌশল পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে, কর্মীদের উপর এই প্রভাব পড়ছে।
এই ছাঁটাই মানে হলো অনেক মানুষের জীবনে বড় পরিবর্তন। যারা চাকরি হারিয়েছেন, তাদের অনেকেই এখন নতুন কাজ খুঁজছেন। কিন্তু প্রযুক্তি ক্ষেত্রে দক্ষতার চাহিদা এত দ্রুত বদলাচ্ছে যে, অনেকের পক্ষে নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। তবে, কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এই পরিবর্তন দীর্ঘমেয়াদে প্রযুক্তি খাতকে আরও শক্তিশালী করতে পারে। কারণ, কোম্পানিগুলো এখন শুধুমাত্র সবচেয়ে দক্ষ এবং প্রয়োজনীয় কর্মীদের রাখতে চাইছে।
বিষয়টির গুরুত্ব বোঝার জন্য আরেকটি দিক দেখা দরকার। এই ছাঁটাইয়ের ফলে অনেক পরিবার অর্থনৈতিক সমস্যার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে আমেরিকায়, যেখানে জীবনযাত্রার খরচ বেশি, সেখানে চাকরি হারানো মানে বড় সংকট। তবে, সরকার এবং বিভিন্ন সংস্থা এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে। যেমন, কর্মীদের জন্য নতুন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করা হচ্ছে, যাতে তারা আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে।
শেষ কথা হিসেবে বলা যায়, ২০২৫ সালের এই ছাঁটাই প্রযুক্তি জগতের জন্য একটি বড় ঘটনা। এটি আমাদের বুঝিয়ে দিচ্ছে যে, প্রযুক্তি যত উন্নত হচ্ছে, ততই এর সঙ্গে জড়িত মানুষের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে। ভবিষ্যতে এই পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, তা দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। তবে, এটা স্পষ্ট যে, প্রযুক্তির এই যুগে বেঁচে থাকতে হলে সবাইকে নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হবে।