Atul Subhash suicide case details: অতুল সুভাষ নামে একজন ৩৪ বছর বয়সী প্রযুক্তিবিদ গত ৯ ডিসেম্বর বেঙ্গালুরুর নিজের অ্যাপার্টমেন্টে আত্মহত্যা করেন। তিনি একটি ২৪ পৃষ্ঠার সুইসাইড নোট এবং ৮১ মিনিটের একটি ভিডিও রেখে যান, যেখানে তিনি তাঁর স্ত্রী নিকিতা সিংঘানিয়া এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ করেন। এই ঘটনা ভারতে বিবাহ সংক্রান্ত আইন এবং পুরুষদের অধিকার নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে।
অতুল সুভাষ ছিলেন একজন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রকৌশলী। তিনি ২০১৯ সালে নিকিতা সিংঘানিয়াকে বিয়ে করেন। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই তাদের সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। অতুলের অভিযোগ ছিল যে তাঁর স্ত্রী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করতেন। তাঁরা নাকি অতুলের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে তাঁকে হয়রান করতেন।অতুলের বিরুদ্ধে মোট ৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল, যার মধ্যে ছিল খুনের চেষ্টা, যৌতুক নির্যাতন, অস্বাভাবিক যৌনাচার ইত্যাদি অভিযোগ। কিছু মামলায় তাঁর বাবা-মাকেও অভিযুক্ত করা হয়েছিল। অতুল তাঁর সুইসাইড নোটে অভিযোগ করেন যে, উত্তর প্রদেশের একজন পারিবারিক আদালতের বিচারক তাঁর শ্বশুরবাড়ির পক্ষ নিয়েছিলেন।অতুলের মৃত্যুর পর বেঙ্গালুরু পুলিশ তদন্ত শুরু করে।
ইরাকে মেয়েদের বিয়ের বয়স ৯ বছর করার প্রস্তাবিত আইন বিতর্কের ঝড় তুলেছে
১৫ ডিসেম্বর পুলিশ নিকিতা সিংঘানিয়াকে হরিয়ানার গুরুগ্রাম থেকে গ্রেফতার করে। একই দিনে তাঁর মা নীশা সিংঘানিয়া এবং ভাই অনুরাগ সিংঘানিয়াকে উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজ থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ আনা হয়েছে।পুলিশের অভিযোগ, অভিযুক্তরা অতুলের কাছ থেকে ৩ কোটি টাকা দাবি করেছিল মামলা প্রত্যাহারের জন্য এবং ৩০ লাখ টাকা দাবি করেছিল তাঁর ছেলেকে দেখার অধিকারের জন্য। এই ঘটনা ভারতের যৌতুক বিরোধী আইন নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।অনেকে মনে করছেন যে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৮এ ধারা (বর্তমানে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৮৫ ও ৮৬ ধারা) অনেক ক্ষেত্রে অপব্যবহার হচ্ছে। এই আইন ১৯৮৩ সালে প্রণয়ন করা হয়েছিল যৌতুক সংক্রান্ত হত্যাকাণ্ড রোধ করার জন্য।
কিন্তু অনেকে অভিযোগ করছেন যে এখন এই আইন ব্যবহার করে অনেক স্ত্রী তাদের স্বামীদের ব্ল্যাকমেইল করছেন।জাতীয় অপরাধ রেকর্ড ব্যুরোর (এনসিআরবি) ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী, সেই বছর স্বামী বা তার আত্মীয়দের দ্বারা নির্যাতনের ১.৪ লক্ষ মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এর মধ্যে ১.২ লক্ষ মামলায় পুলিশ চার্জশিট দাখিল করেছে। কিন্তু এই ধারায় সর্বোচ্চ সংখ্যক খালাস হয়েছে – ৩৫,৯৯৮টি মামলায়। আর ৭,০৭৬টি মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।সুপ্রিম কোর্টও এই বিষয়ে মন্তব্য করেছে। একজন বিচারপতি এই আইনকে “আইনি সন্ত্রাসবাদ” বলে অভিহিত করেছেন, যা আত্মরক্ষার জন্য তৈরি করা হয়েছিল কিন্তু এখন আক্রমণের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।অন্যদিকে, নারী অধিকার কর্মীরা মনে করেন যে এখনও প্রতি বছর অসংখ্য নারী যৌতুক সংক্রান্ত সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। তাই এই আইন বাতিল করা উচিত নয়।অতুল সুভাষের আত্মহত্যার ঘটনা দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছে।
অনেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর জন্য ন্যায়বিচার দাবি করছেন। কিছু কর্মী দাবি করছেন যে এটি হত্যাকাণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা উচিত এবং নিকিতা সিংঘানিয়াকে কারাদণ্ড দেওয়া উচিত।এদিকে, অতুলের মা অঞ্জু মোদি সুপ্রিম কোর্টে একটি হেবিয়াস কর্পাস আবেদন দায়ের করেছেন তাঁর ৪ বছরের নাতির হেফাজত পাওয়ার জন্য। বাচ্চাটির অবস্থান এখনও অজানা।এই ঘটনা ভারতের বিবাহ সংক্রান্ত আইন এবং তার প্রয়োগ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছে। অনেকে মনে করছেন যে এই আইনগুলি সংশোধন করা প্রয়োজন যাতে কোনো পক্ষই অন্যায়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হন।
মমতা ব্যানার্জির মোবাইল নম্বর: আরও সহজ হলো জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রীর সাথে যোগাযোগ
তবে এই পরিবর্তন কীভাবে করা যায় তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে।এই ঘটনা থেকে স্পষ্ট যে ভারতের বিবাহ ব্যবস্থা এবং সংশ্লিষ্ট আইনগুলি একটি জটিল সমস্যার মুখোমুখি। একদিকে নারীদের সুরক্ষা দেওয়া প্রয়োজন, অন্যদিকে আইনের অপব্যবহার রোধ করাও জরুরি। এই ভারসাম্য বজায় রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ, যা সমাধান করতে সরকার, আইনজীবী এবং সমাজের সকল অংশের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।