Tejas Mk1A Turkish Hürjet comparison: মিশরের বায়ুসেনার জন্য নতুন লাইট ফাইটার জেট ক্রয়ের প্রতিযোগিতায় ভারতের তেজস Mk1A এবং তুরস্কের Hürjet মুখোমুখি হয়েছে। দুটি বিমানই নিজ নিজ দেশের এরোস্পেস শিল্পের সাম্প্রতিক অগ্রগতির প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।তেজস Mk1A হল হিন্দুস্তান এয়ারোনটিক্স লিমিটেড (HAL) কর্তৃক নির্মিত একটি হালকা যুদ্ধবিমান যা ভারতীয় বায়ুসেনার জন্য তৈরি করা হয়েছে।
অন্যদিকে Hürjet হল তুর্কি এয়ারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ (TAI) কর্তৃক নির্মিত একটি উন্নত জেট প্রশিক্ষক ও হালকা আক্রমণাত্মক বিমান। উভয় বিমানই মিশরের বায়ুসেনার পুরনো F-5 ও অন্যান্য হালকা যুদ্ধবিমান প্রতিস্থাপনের জন্য প্রতিযোগিতা করছে।
Taranga Shakti: বাংলাদেশ সরে দাঁড়াল, শ্রীলঙ্কা যোগ দিল ‘তরঙ্গ শক্তি’ বিমান মহড়ায়!
• একক ইঞ্জিন বিশিষ্ট, হালকা ওজনের মাল্টিরোল ফাইটার জেট
• সর্বোচ্চ গতি: ম্যাক ১.৮
• পরিসীমা: ৩,০০০ কিমি
• সর্বোচ্চ উচ্চতা: ১৫,২৪০ মিটার
• ইঞ্জিন: জেনারেল ইলেকট্রিক F404-GE-IN20 টার্বোফ্যান
• অত্যাধুনিক AESA রাডার ও ইলেকট্রনিক যুদ্ধ ব্যবস্থা
• বিভিন্ন ধরনের মিসাইল ও বোমা বহন ক্ষমতা
• একক ইঞ্জিন বিশিষ্ট, দ্বি-আসন যুক্ত উন্নত জেট প্রশিক্ষক ও হালকা আক্রমণাত্মক বিমান
• সর্বোচ্চ গতি: ম্যাক ১.৪
• পরিসীমা: ২,২২২ কিমি
• সর্বোচ্চ উচ্চতা: ১৩,৭১৬ মিটার
• ইঞ্জিন: জেনারেল ইলেকট্রিক F404-GE-102 টার্বোফ্যান
• আধুনিক অ্যাভিওনিক্স ও সেন্সর সিস্টেম
• হালকা আক্রমণের জন্য বিভিন্ন অস্ত্র বহন ক্ষমতা
দুটি বিমানের মধ্যে তুলনা করলে দেখা যায়, তেজস Mk1A অপেক্ষাকৃত বেশি উন্নত একটি যুদ্ধবিমান। এর গতি ও পরিসীমা Hürjet এর চেয়ে বেশি। তবে Hürjet এর সুবিধা হল এটি একটি দ্বি-আসন যুক্ত বিমান, যা প্রশিক্ষণের জন্য বেশি উপযোগী।প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ ড. অভিজিৎ সিংহ মন্তব্য করেছেন, “তেজস Mk1A একটি প্রমাণিত প্ল্যাটফর্ম যা ইতিমধ্যে ভারতীয় বায়ুসেনায় ব্যবহৃত হচ্ছে। এর যুদ্ধ ক্ষমতা Hürjet এর চেয়ে অনেক বেশি।
তবে Hürjet এর দাম কম হওয়ায় এটি মিশরের জন্য একটি আকর্ষণীয় বিকল্প হতে পারে।”মিশরের বায়ুসেনা বর্তমানে প্রায় ১০০টি F-16 যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে। এছাড়া তাদের কাছে রাফাল, মিরাজ ২০০০ ও MiG-29 বিমানও রয়েছে। তবে তাদের F-5 ও অন্যান্য পুরনো হালকা যুদ্ধবিমান প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে তেজস Mk1A বা Hürjet ক্রয় করা হতে পারে।বিশ্লেষকদের মতে, এই চুক্তি শুধু মিশরের বায়ুসেনার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, ভারত ও তুরস্কের এরোস্পেস শিল্পের জন্যও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
যে দেশের বিমান নির্বাচিত হবে, সেই দেশের আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা বাজারে প্রভাব বৃদ্ধি পাবে।ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “তেজস Mk1A এর রপ্তানি সফল হলে তা ভারতের প্রতিরক্ষা রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে আমরা ৫ বিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা রপ্তানি করতে চাই।”অন্যদিকে তুর্কি এরোস্পেস বিশেষজ্ঞ ড. মেহমেত আলি বলেছেন, “Hürjet এর সফলতা তুরস্কের এরোস্পেস শিল্পকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। এটি প্রমাণ করবে যে আমরা বিশ্বমানের উন্নত যুদ্ধবিমান তৈরি করতে পারি।”তেজস Mk1A ইতিমধ্যে মালয়েশিয়া ও অন্যান্য দেশের কাছে রপ্তানির জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে Hürjet এর প্রথম উড়ান হয়েছে ২০২৩ সালের এপ্রিলে। তুরস্ক এই বিমানটি নিজেদের বায়ুসেনার পাশাপাশি রপ্তানির জন্যও তৈরি করছে।মিশরের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে তা হবে তেজস বা Hürjet এর প্রথম আন্তর্জাতিক বিক্রয়। এটি শুধু আর্থিক দিক থেকেই নয়, কূটনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হবে। কারণ মিশর মধ্যপ্রাচ্যের একটি প্রভাবশালী দেশ এবং তাদের সিদ্ধান্ত অন্য দেশগুলোকেও প্রভাবিত করতে পারে।বিমান দুটির দাম নিয়েও আলোচনা চলছে। তেজস Mk1A এর দাম প্রতিটি প্রায় ৪২ মিলিয়ন ডলার। Hürjet এর সঠিক দাম এখনো জানা যায়নি, তবে অনুমান করা হচ্ছে এটি তেজস এর চেয়ে কম হবে।
দাম ছাড়াও অন্যান্য বিষয় যেমন প্রযুক্তি হস্তান্তর, যন্ত্রাংশ সরবরাহ ইত্যাদি বিষয়ে চুক্তি হতে পারে।মিশরীয় বিমান বাহিনীর একজন কর্মকর্তা বলেছেন, “আমরা শুধু বিমান কিনছি না, একটি দীর্ঘমেয়াদী অংশীদারিত্ব করছি। তাই দাম ছাড়াও অন্যান্য বিষয় যেমন প্রযুক্তি হস্তান্তর, প্রশিক্ষণ সুবিধা, রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি বিবেচনা করা হচ্ছে।”এই প্রতিযোগিতায় অন্য দেশের বিমানও অংশগ্রহণ করতে পারে। চীনের JF-17 থান্ডার এবং দক্ষিণ কোরিয়ার FA-50 লাইট কমব্যাট এয়ারক্রাফট এর নামও উঠে এসেছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তেজস Mk1A এবং Hürjet এর মধ্যেই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।এই চুক্তির ফলাফল শুধু মিশরের বায়ুসেনার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি ভারত ও তুরস্কের এরোস্পেস শিল্পের ভবিষ্যৎকেও প্রভাবিত করবে। যে দেশের বিমান নির্বাচিত হবে, সেই দেশের আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা বাজারে প্রভাব বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া এটি অন্যান্য দেশকেও উৎসাহিত করতে পারে ঐ দেশের বিমান ক্রয় করতে।তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বিমান দুটির পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর। মিশরীয় বিমান বাহিনী দুটি বিমানকেই পরীক্ষা করবে এবং তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী যে বিমানটি সবচেয়ে উপযুক্ত মনে হবে সেটিই নির্বাচন করা হবে।
Minakshi Mukherjee: CBI-র তলবে মীনাক্ষী, আরজিকর কাণ্ডে নতুন মোড়?
সামগ্রিকভাবে, এই প্রতিযোগিতা প্রমাণ করছে যে ভারত ও তুরস্ক উভয় দেশই এরোস্পেস প্রযুক্তিতে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। যে দেশের বিমানই নির্বাচিত হোক না কেন, এটি নিঃসন্দেহে ঐ দেশের জন্য একটি বড় সাফল্য হবে এবং তাদের আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা বাজারে অবস্থান আরও মজবুত করবে।