ইউরোপের প্রথম চাঁদের রোভার “টেনেশিয়াস” এই বছরের শেষের দিকে চাঁদে পাড়ি জমাবে বলে জানা গেছে। জাপানি স্পেস এক্সপ্লোরেশন কোম্পানি ispace-এর লুক্সেমবুর্গ-ভিত্তিক সাবসিডিয়ারি (I-space_EUROPE) এই মাইক্রো রোভারটি তৈরি করেছে। রোভারটি SpaceXফালকন ৯ রকেটের মাধ্যমে কেপ ক্যানাভেরাল থেকে উৎক্ষেপণ করা হবে। এটি ispace-এর দ্বিতীয় HAKUTO-R মিশনের অংশ হিসেবে “রেসিলিয়েন্স” নামক চাঁদের ল্যান্ডারের মাধ্যমে চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণ করবে।
“টেনেশিয়াস” রোভারটি মাত্র ২৬ সেন্টিমিটার উচ্চতা, ৩১.৫ সেন্টিমিটার প্রস্থ এবং ৫৪ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের এবং এর ওজন প্রায় ৫ কেজি। রোভারটির সামনের দিকে একটি HD ক্যামেরা লাগানো আছে যা চাঁদের পৃষ্ঠের ছবি তুলতে পারবে। এর চাকাগুলি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে চাঁদের মাটিতে স্থিরভাবে চলাচল করতে পারে। এই মিশনটি ইউরোপের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। Ispace-EUROPE-এর CEOজুলিয়েন লামামি বলেছেন, “টেনেশিয়াস হল ইউরোপে নির্মিত প্রথম চাঁদের রোভার এবং এটি প্রথম ইউরোপীয় গ্রাহকদের চাঁদের পৃষ্ঠে নিয়ে যাবে এবং লুক্সেমবুর্গের ২০১৭ সালের স্পেস রিসোর্সেস আইনের অধীনে মহাকাশ সম্পদ সংগ্রহ করবে।”
চাঁদে অবতরণের ক্ষেত্রে ব্যর্থতার হার উচ্চ। ঐতিহাসিকভাবে চাঁদের মিশনগুলির ৪০-৬০% ব্যর্থ হয়েছে। রোবোটিক ল্যান্ডার মিশনগুলির ক্ষেত্রে এই হার ৬০% এরও বেশি। তাই ispace-এর এই উদ্যোগ বেশ চ্যালেঞ্জিং। লুক্সেমবুর্গের অর্থনীতি, SME, জ্বালানি ও পর্যটন মন্ত্রী লেক্স ডেলেস বলেছেন, “আমাদের লক্ষ্য হল একটি মহাকাশ খাত গড়ে তোলা যা পৃথিবীর শিল্পগুলির সাথে অত্যন্ত সমন্বিত এবং মহাকাশে ও পৃথিবীতে নতুন বাজারের সুযোগ খুলে দেয়। এই মাইক্রো রোভারটি, যা লুক্সেমবুর্গে প্রথম উন্নত ও সংযোজিত হয়েছে, মহাকাশ সম্পদের অন্বেষণ ও ব্যবহারে লুক্সেমবুর্গকে অগ্রণী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করছে।”
জাপানের রাষ্ট্রদূত তাদাহিরো মাৎসুবারা মন্তব্য করেছেন, “লুক্সেমবুর্গে আজ প্রথম ইউরোপীয় রোভার দেখতে পেয়ে আমি আনন্দিত যা ডিজাইন ও নির্মাণ করা হয়েছে এবং প্রকৃতপক্ষে চাঁদে যাচ্ছে। এটি লুক্সেমবুর্গ সরকারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ যারা সক্রিয়ভাবে মহাকাশ সম্পদের শিল্পায়নকে উৎসাহিত করছে।” চাঁদের মিশনগুলির ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে ১৯৫০ এর দশকে ব্যর্থতার হার ছিল খুবই বেশি, প্রায় ৮৪.৬%। ১৯৬০ এর দশকে সর্বাধিক সংখ্যক (৭৪টি) চাঁদের মিশন হয়েছিল, কিন্তু ব্যর্থতার হার ছিল ৬২.২%। ১৯৭০ এর দশকে অবস্থার উন্নতি হয় এবং ব্যর্থতার হার কমে ২৫% হয়। ২০০০ এর দশকে সব মিশনই সফল হয়েছিল। কিন্তু ২০২০ এর দশকে আবার ব্যর্থতার হার বেড়ে ৪৭.১% হয়েছে।এই পরিপ্রেক্ষিতে, ইউরোপের প্রথম চাঁদের রোভার মিশনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি সফল হলে ইউরোপের মহাকাশ গবেষণায় একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে। এর মাধ্যমে চাঁদের সম্পদ অন্বেষণ ও ব্যবহারের নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে। এছাড়া এটি ভবিষ্যতে মানুষের চাঁদে বসবাসের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি উন্নয়নে সাহায্য করবে।তবে এই মিশনের সামনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। চাঁদের কঠিন পরিবেশে রোভারটি কতটা কার্যকরভাবে কাজ করতে পারবে তা দেখার বিষয়। এছাড়া চাঁদের মাটিতে নিরাপদে অবতরণ করাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
সামগ্রিকভাবে, “টেনেশিয়াস” রোভার মিশনটি ইউরোপের মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এটি সফল হলে ইউরোপের স্বাধীন চাঁদ অভিযানের পথ প্রশস্ত হবে এবং আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণায় ইউরোপের অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে।