পুরুষদের জন্য অন্ডকোষে ব্যথা (Testicular Pain) একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং অস্বস্তিকর বিষয়। অনেক সময় সামান্য আঘাত বা সাধারণ কারণে এই ব্যথা হলেও, কিছু ক্ষেত্রে এটি হতে পারে মারাত্মক কোনো রোগের পূর্বলক্ষণ। সঠিক তথ্যের অভাবে অনেকেই এই ব্যথাকে উপেক্ষা করেন, যা ভবিষ্যতে বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এই আর্টিকেলে আমরা অন্ডকোষে ব্যথার সম্ভাব্য কারণ, কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি, ঘরোয়া প্রতিকার এবং আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব, যা আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে। এই আলোচনাটি সম্পূর্ণ নির্ভরযোগ্য এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO), মায়ো ক্লিনিক (Mayo Clinic), এবং ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (NHS)-এর মতো প্রতিষ্ঠানের তথ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি।
অন্ডকোষে ব্যথা আসলে কী এবং কেন হয়?
অন্ডকোষ বা টেস্টিস (Testis) পুরুষদের প্রজনন ব্যবস্থার একটি অপরিহার্য অঙ্গ। এখানে শুক্রাণু এবং টেস্টোস্টেরন হরমোন তৈরি হয়। অন্ডকোষ দুটি স্ক্রোটাম (Scrotum) বা অন্ডথলির মধ্যে সুরক্ষিত থাকে। এই অংশে যেকোনো ধরনের ব্যথা, চাপ বা অস্বস্তিকেই অন্ডকোষের ব্যথা বলা হয়। এই ব্যথা এক বা উভয় অন্ডকোষেই হতে পারে এবং এর তীব্রতা হালকা থেকে পর্যন্ত হতে পারে। ব্যথা হঠাৎ শুরু হতে পারে (Acute Pain) বা দীর্ঘ সময় ধরে চলতে পারে (Chronic Pain)।
ব্যথার উৎস সরাসরি অন্ডকোষ থেকে হতে পারে, অথবা শরীরের অন্য কোনো অংশের সমস্যা থেকেও এখানে ব্যথা অনুভূত হতে পারে, যাকে “রেফার্ড পেইন” (Referred Pain) বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ, কিডনিতে পাথর বা ইনগুইনাল হার্নিয়ার ব্যথাও অন্ডকোষে অনুভূত হতে পারে। তাই কারণ শনাক্ত করা অত্যন্ত জরুরি।
অন্ডকোষে ব্যথার সাধারণ এবং গুরুতর কারণসমূহ
অন্ডকোষে ব্যথার কারণগুলোকে দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যেতে পারে: যেগুলোর জন্য অবিলম্বে চিকিৎসা প্রয়োজন এবং যেগুলো তুলনামূলকভাবে কম গুরুতর।
যে কারণগুলোর জন্য জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন (Medical Emergencies)
কিছু ক্ষেত্রে অন্ডকোষে ব্যথা একটি মেডিকেল ইমার্জেন্সি, যেখানে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসা না করালে স্থায়ী ক্ষতি, এমনকি অন্ডকোষ হারানোর ঝুঁকিও থাকতে পারে।
১. অন্ডকোষের টর্শন (Testicular Torsion)
এটি সবচেয়ে গুরুতর কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম। এখানে স্পার্মাটিক কর্ড (যে কর্ডের মাধ্যমে অন্ডকোষে রক্ত সরবরাহ হয়) পেঁচিয়ে যায়, ফলে রক্ত চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
- লক্ষণ: হঠাৎ তীব্র ব্যথা, অন্ডথলি ফুলে যাওয়া, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া, একটি অন্ডকোষ অন্যটির চেয়ে উপরে উঠে যাওয়া।
- কেন জরুরি: মায়ো ক্লিনিকের মতে, টর্শন হওয়ার ৪-৬ ঘণ্টার মধ্যে অস্ত্রোপচার না করলে অন্ডকোষটি স্থায়ীভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এটি সাধারণত ১০ থেকে ২৫ বছর বয়সী পুরুষদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, তবে যেকোনো বয়সে হতে পারে।
২. এপিডিডাইমাইটিস (Epididymitis)
এপিডিডাইমিস হলো অন্ডকোষের পিছনে অবস্থিত একটি পেঁচানো টিউব যা শুক্রাণু বহন ও সঞ্চয় করে। এর প্রদাহকে এপিডিডাইমাইটিস বলে।
- লক্ষণ: ধীরে ধীরে ব্যথা বাড়তে থাকা, অন্ডথলি গরম ও লাল হয়ে যাওয়া, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, মূত্রনালী থেকে অস্বাভাবিক স্রাব।
- কারণ: সাধারণত ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ, বিশেষ করে যৌনবাহিত সংক্রমণ (STI) যেমন ক্ল্যামাইডিয়া এবং গনোরিয়া এর প্রধান কারণ। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (CDC)-এর তথ্যমতে, ৩৫ বছরের কম বয়সী পুরুষদের মধ্যে এটি STI-এর কারণে বেশি হয়।
৩. অর্কিটিস (Orchitis)
এটি হলো এক বা উভয় অন্ডকোষের প্রদাহ।
- লবণ: জ্বর, ক্লান্তি, বমি ভাব এবং অন্ডকোষে ব্যথা ও ফোলা।
- কারণ: এটি প্রায়শই মাম্পস (Mumps) ভাইরাসের কারণে হয়। এপিডিডাইমাইটিসের মতো ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ থেকেও অর্কিটিস হতে পারে। মাম্পস টিকা (MMR vaccine) অর্কিটিস প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর।
৪. অন্ডকোষে গুরুতর আঘাত (Severe Trauma)
খেলাধুলা, দুর্ঘটনা বা অন্য কোনো কারণে অন্ডকোষে সরাসরি আঘাত লাগলে ব্যথা ও ফোলা দেখা দিতে পারে। যদি রক্ত জমে (Hematoma) বা অন্ডকোষ ফেটে যায় (Testicular Rupture), তবে অবিলম্বে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়।
তুলনামূলক কম গুরুতর কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কারণ
এই কারণগুলো সরাসরি জীবননাশের ঝুঁকি তৈরি না করলেও, সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে দীর্ঘমেয়াদী জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
৫. ইনগুইনাল হার্নিয়া (Inguinal Hernia)
যখন অন্ত্রের কোনো অংশ পেটের দুর্বল প্রাচীর ভেদ করে কুঁচকির দিকে বা অন্ডথলিতে নেমে আসে, তখন তাকে ইনগুইনাল হার্নিয়া বলে।
- লক্ষণ: কুঁচকিতে বা অন্ডথলিতে ফোলা বা পিন্ডের মতো অনুভূতি, যা কাশি দিলে বা ভারী কিছু তুললে বড় হয়। এর সাথে হালকা থেকে মাঝারি ব্যথা থাকতে পারে।
৬. ভ্যারিকোসেল (Varicocele)
এটি হলো অন্ডথলির ভিতরের শিরা ফুলে যাওয়া, যা অনেকটা পায়ের ভ্যারিকোস ভেইনের মতো।
- লক্ষণ: সাধারণত বাম অন্ডকোষে বেশি হয়। হালকা ভোঁতা ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে, যা দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে বা গরম আবহাওয়ায় বাড়ে। হাত দিয়ে পরীক্ষা করলে “কেঁচোর বস্তা” (bag of worms)-এর মতো মনে হতে পারে। ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের তথ্য অনুযায়ী, এটি পুরুষদের বন্ধ্যত্বের অন্যতম একটি সাধারণ কারণ।
৭. হাইড্রোসিল (Hydrocele)
যখন অন্ডকোষের চারপাশে থাকা থলিতে তরল জমে তা ফুলে যায়, তাকে হাইড্রোসিল বলে।
- লবণ: সাধারণত এতে ব্যথা হয় না, তবে অন্ডথলি ভারি ও ফোলা লাগে। যদি আকারে অনেক বড় হয়ে যায় বা সংক্রমণ হয়, তবে ব্যথা হতে পারে।
৮. স্পার্মাটোসেল (Spermatocele)
এটি এপিডিডাইমিসের মধ্যে তৈরি হওয়া একটি তরল-ভর্তি সিস্ট। এটি সাধারণত ব্যথাহীন এবং ক্ষতিকর নয়, তবে আকারে বড় হলে অস্বস্তি বা হালকা ব্যথা হতে পারে।
৯. কিডনিতে পাথর (Kidney Stones)
কিডনিতে তৈরি হওয়া পাথর যখন মূত্রনালী দিয়ে নিচে নামতে থাকে, তখন এর ব্যথা পিঠ থেকে কুঁচকি এবং অন্ডকোষ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই ধরনের ব্যথাকে রেফার্ড পেইন বলা হয়।
১০. অন্ডকোষের ক্যান্সার (Testicular Cancer)
যদিও এটি তুলনামূলকভাবে বিরল, তবে ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী পুরুষদের মধ্যে এটি সবচেয়ে সাধারণ ক্যান্সার।
- লক্ষণ: প্রধান লক্ষণ হলো অন্ডকোষে একটি ব্যথাহীন পিন্ড বা ফোলা। তবে কিছু ক্ষেত্রে, প্রায় ১০% রোগীর হালকা ব্যথা বা অস্বস্তিও থাকতে পারে। আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি নিয়মিত স্ব-পরীক্ষার উপর জোর দেয়, কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে এর চিকিৎসার সাফল্যের হার প্রায় ৯৫%।
কখন আপনার অবিলম্বে ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত?
যেকোনো ধরনের অন্ডকোষের ব্যথাকেই গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত। তবে নিচের লক্ষণগুলো দেখা দিলে এক মুহূর্ত দেরি না করে জরুরি বিভাগে যোগাযোগ করুন:
লক্ষণ | সম্ভাব্য কারণ | গুরুত্ব |
হঠাৎ এবং অসহনীয় ব্যথা | অন্ডকোষের টর্শন | মেডিকেল ইমার্জেন্সি |
ব্যথার সাথে জ্বর, বমি বা বমি বমি ভাব | টর্শন, অর্কিটিস বা গুরুতর সংক্রমণ | অবিলম্বে চিকিৎসা প্রয়োজন |
অন্ডকোষে আঘাত পাওয়ার ব্যথা ও ফোলা | অন্ডকোষ ফেটে যাওয়া বা হেমাটোমা | অবিলম্বে চিকিৎসা প্রয়োজন |
অন্ডথলি লাল, গরম বা স্পর্শে संवेदनशील | এপিডিডাইমাইটিস বা সংক্রমণ | দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন |
অন্ডকোষে কোনো পিন্ড বা ফোলা অনুভব করা | অন্ডকোষের ক্যান্সার বা অন্য কোনো টিউমার | অবহেলা না করে ডাক্তার দেখান |
রোগ নির্ণয়ের জন্য কী কী পরীক্ষা করা হয়?
সঠিক কারণ খুঁজে বের করার জন্য চিকিৎসক কিছু পরীক্ষা করতে পারেন।
- শারীরিক পরীক্ষা (Physical Examination): চিকিৎসক অন্ডকোষ, পেট এবং কুঁচকি পরীক্ষা করে ফোলা, ব্যথা বা কোনো অস্বাভাবিকতা আছে কিনা তা দেখবেন।
- আলট্রাসাউন্ড (Scrotal Ultrasound): এটি সবচেয়ে সাধারণ এবং কার্যকর পরীক্ষা। শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করে অন্ডকোষের একটি পরিষ্কার ছবি তৈরি করা হয়, যা টর্শন, এপিডিডাইমাইটিস, টিউমার বা ভ্যারিকোসেল শনাক্ত করতে সাহায্য করে।
- প্রস্রাব পরীক্ষা (Urinalysis): প্রস্রাবে সংক্রমণ বা কিডনি পাথরের উপস্থিতি পরীক্ষা করার জন্য এটি করা হয়।
- রক্ত পরীক্ষা (Blood Test): শরীরে সংক্রমণের লক্ষণ বা টিউমার মার্কার (ক্যান্সারের ক্ষেত্রে) পরীক্ষা করার জন্য রক্ত পরীক্ষা করা হতে পারে।
- এসটিআই স্ক্রিনিং (STI Screening): যদি যৌনবাহিত সংক্রমণের সন্দেহ থাকে, তবে ক্ল্যামাইডিয়া এবং গনোরিয়া পরীক্ষা করার জন্য মূত্রনালী থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হতে পারে।
অন্ডকোষের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় এবং প্রাথমিক ব্যবস্থাপনা
সতর্কতা: ঘরোয়া প্রতিকার শুধুমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শের পর বা সামান্য আঘাতজনিত হালকা ব্যথার জন্য প্রযোজ্য। গুরুতর ব্যথার ক্ষেত্রে এটি কোনোভাবেই চিকিৎসার বিকল্প নয়।
১. সম্পূর্ণ বিশ্রাম (Rest)
যেকোনো ধরনের শারীরিক কার্যকলাপ, বিশেষ করে দৌড়ানো বা ভারী কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। শোয়ার সময় পায়ের নিচে একটি নরম তোয়ালে বা বালিশ রেখে অন্ডথলিকে কিছুটা উঁচু করে রাখলে ফোলা এবং ব্যথা কমতে পারে।
২. ঠান্ডা সেঁক (Cold Compress)
একটি কাপড়ে কয়েক টুকরো বরফ মুড়ে ব্যথার জায়গায় ১৫-২০ মিনিটের জন্য ধরে রাখুন। এটি ফোলা এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করবে। দিনে কয়েকবার এটি করা যেতে পারে। সরাসরি ত্বকে বরফ লাগাবেন না।
৩. অন্ডকোষের সাপোর্ট (Scrotal Support)
অ্যাথলেটিক সাপোটার বা টাইট-ফিটিং অন্তর্বাস পরলে অন্ডকোষের নড়াচড়া কম হয়, যা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। এটি বিশেষ করে এপিডিডাইমাইটিস বা ভ্যারিকোসেলের ক্ষেত্রে আরামদায়ক হতে পারে।
৪. ব্যথানাশক ঔষধ (Pain Relievers)
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আইবুপ্রোফেন (Ibuprofen) বা প্যারাসিটামলের (Paracetamol) মতো ওভার-দ্য-কাউন্টার ব্যথানাশক ঔষধ সেবন করা যেতে পারে। তবে যেকোনো ঔষধ খাওয়ার আগে অবশ্যই এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং ডোজ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিন।
৫. হালকা গরম পানিতে স্নান (Warm Bath)
যদি ব্যথা মাংসপেশির টানের কারণে হয়, তবে হালকা গরম পানিতে স্নান করলে আরাম মিলতে পারে। তবে প্রদাহ বা ফোলার ক্ষেত্রে ঠান্ডা সেঁক বেশি কার্যকর।
অন্ডকোষের ব্যথার আধুনিক চিকিৎসা
রোগের কারণের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা পদ্ধতি ভিন্ন হয়।
- অ্যান্টিবায়োটিক (Antibiotics): এপিডিডাইমাইটিস বা অর্কিটিসের মতো ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের জন্য চিকিৎসকরা নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের পরামর্শ দেন।
- অস্ত্রোপচার (Surgery):
- অন্ডকোষের টর্শন: এটি একটি জরুরি অস্ত্রোপচার, যেখানে পেঁচিয়ে যাওয়া কর্ডটিকে সোজা করে রক্ত সরবরাহ পুনরায় চালু করা হয়।
- হার্নিয়া: হার্নিয়া মেরামতের জন্য অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়।
- ভ্যারিকোসেল: যদি ভ্যারিকোসেলের কারণে ব্যথা বা বন্ধ্যত্বের সমস্যা দেখা দেয়, তবে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ফোলা শিরাগুলোকে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
- ক্যান্সার: অন্ডকোষের ক্যান্সারের প্রধান চিকিৎসা হলো অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আক্রান্ত অন্ডকোষটি অপসারণ করা (Orchiectomy)। এরপর প্রয়োজন অনুযায়ী কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি দেওয়া হতে পারে।
প্রতিরোধের উপায়: ঝুঁকি কমানো সম্ভব?
সব ধরনের অন্ডকোষের ব্যথা প্রতিরোধ করা সম্ভব না হলেও, কিছু পদক্ষেপ ঝুঁকি কমাতে পারে।
- নিরাপদ যৌন অভ্যাস: কনডম ব্যবহার যৌনবাহিত সংক্রমণ (STI) প্রতিরোধ করে, যা এপিডিডাইমাইটিসের ঝুঁকি কমায়।
- টিকা গ্রহণ: মাম্পস ভাইরাসের বিরুদ্ধে MMR টিকা নিলে অর্কিটিসের ঝুঁকি এড়ানো যায়।
- সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম ব্যবহার: খেলাধুলা করার সময়, বিশেষ করে ক্রিকেট, ফুটবল বা মার্শাল আর্টের মতো খেলায় অ্যাবডোমিনাল গার্ড বা সাপোটার পরা উচিত।
- নিয়মিত স্ব-পরীক্ষা (Regular Self-Exam): প্রতি মাসে অন্তত একবার অন্ডকোষ পরীক্ষা করার অভ্যাস করুন। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (NHS) এটি করার জন্য সহজ নির্দেশিকা প্রদান করে। যেকোনো ধরনের পিন্ড, ফোলা বা পরিবর্তন লক্ষ্য করলে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন।
কীভাবে অন্ডকোষের স্ব-পরীক্ষা করবেন?
১. উষ্ণ গরম পানিতে স্নানের সময় বা পরে পরীক্ষা করা সবচেয়ে ভালো, কারণ তখন অন্ডথলির ত্বক নরম থাকে।
২. একটি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অন্ডথলির ত্বকে কোনো ফোলাভাব আছে কিনা দেখুন।
৩. প্রতিটি অন্ডকোষ আলতোভাবে বুড়ো আঙুল এবং অন্যান্য আঙুলের মধ্যে নিয়ে ঘোরান।
৪. কোনো পিন্ড, ফোলা, ব্যথা বা আকারে পরিবর্তন অনুভব করছেন কিনা তা লক্ষ্য করুন।
৫. মনে রাখবেন, একটি অন্ডকোষ অন্যটির চেয়ে সামান্য বড় বা কিছুটা নিচে ঝুলে থাকা স্বাভাবিক।
অন্ডকোষে ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা হলেও একে কখনো উপেক্ষা করা উচিত নয়। এটি যেমন সামান্য আঘাতের ফল হতে পারে, তেমনই অন্ডকোষের টর্শন বা ক্যান্সারের মতো গুরুতর রোগের লক্ষণও হতে পারে। ব্যথার কারণ যাই হোক না কেন, লজ্জা বা ভয় না পেয়ে সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় এবং সঠিক চিকিৎসা শুধু দীর্ঘমেয়াদী জটিলতা থেকে রক্ষা করে না, প্রয়োজনে জীবনও বাঁচাতে পারে। আপনার স্বাস্থ্য আপনার দায়িত্ব, তাই শরীরের যেকোনো অস্বাভাবিক সংকেতকে গুরুত্ব দিন এবং সুস্থ থাকুন।