Why RSS promoters stay unmarried: রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (RSS) ভারতের সবচেয়ে প্রভাবশালী হিন্দু সংগঠনগুলির মধ্যে অন্যতম, যা দেশের রাজনীতি ও সমাজ জীবনে গভীর প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। এই সংগঠনের পূর্ণকালীন কর্মীদের ‘প্রচারক’ বলা হয়, যাঁরা সংগঠনের মূল আদর্শ প্রচার ও প্রসারের কাজে জীবন উৎসর্গ করেন। কিন্তু অনেকেই জানেন না যে, এই প্রচারকদের জন্য একটি কঠিন নিয়ম রয়েছে – তাঁরা বিবাহিত জীবনযাপন করতে পারেন না। যদি কোনো প্রচারক বিয়ে করতে চান, তবে তাঁকে প্রচারকের পদ থেকে অবশ্যই সরে দাঁড়াতে হবে। কেন এই নিয়ম? আসুন জেনে নেওয়া যাক এর পিছনের আসল কারণ।
RSS প্রচারকদের ব্রহ্মচর্য নিয়মের ইতিহাস
রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের গঠন ও বিকাশের সাথে প্রচারকদের ব্রহ্মচর্য পালনের নিয়ম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই সংগঠনটি হিন্দু ধর্মীয় আদর্শে বিশ্বাসী, যেখানে ব্রহ্মচর্য একটি উচ্চ আদর্শ হিসেবে বিবেচিত। সংগঠনের মূল নীতি অনুসারে, যে ব্যক্তি সমগ্র জাতির সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করবেন, তাঁর জন্য সংসার জীবন থেকে দূরে থাকা অপরিহার্য।
সংঘের সর্বোচ্চ নেতা মোহন ভাগবত নিজেও একজন ব্রহ্মচারী, যিনি ৬৯ বছর বয়সেও অবিবাহিত জীবনযাপন করছেন। তিনি ২০০৯ সালে স্পষ্ট করেছিলেন যে প্রচারকদের বিয়ের অনুমতি দেওয়া নিয়ে কোনো ঐকমত্য নেই সংগঠনের মধ্যে।
RSS প্রচারকদের নিষ্ঠা ও সমর্পণ
প্রচারকরা সংগঠনের মেরুদণ্ড হিসেবে পরিচিত। এঁরা পূর্ণসময়ের জন্য সংগঠনের কাজে নিযুক্ত থাকেন এবং নিজেদের সম্পূর্ণ জীবন RSS-এর আদর্শ বাস্তবায়নে উৎসর্গ করেন। এই ধরনের সমর্পণ একটি বিশেষ মানসিকতা ও নিষ্ঠা দাবি করে, যা সংগঠনের মতে পারিবারিক দায়িত্ব পালনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
সরকারি কর্মচারীদের RSS-এ যোগদানের পথ খুলল মোদী সরকার: ৫৮ বছরের নিষেধাজ্ঞা উঠে গেল!
প্রচারকদের বিয়ে না করার আসল কারণ
১. সম্পূর্ণ সময়ের প্রতিশ্রুতি
প্রচারকদের জীবন সংগঠনের প্রতি একটি সম্পূর্ণ সময়ের প্রতিশ্রুতির উপর ভিত্তি করে। সারাদিনের প্রতিটি মুহূর্ত তাঁরা সংগঠনের কাজে, দর্শন প্রচারে এবং সামাজিক সেবায় ব্যয় করেন। RSS-এর মতে, পারিবারিক জীবন এই ধরনের সম্পূর্ণ সমর্পণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
মোহন ভাগবত স্পষ্টই বলেছেন: “কোনো প্রচারক যদি বিয়ে করতে চান, তিনি সর্বদা এটি করতে পারেন। তবে, তিনি আর প্রচারক হিসেবে কাজ করতে পারবেন না। আমরা সর্বদা গৃহস্থ আশ্রমকে উৎসাহিত করি।”
২. হিন্দু ঐতিহ্যে ব্রহ্মচর্যের গুরুত্ব
RSS হিন্দু ধর্মীয় ঐতিহ্যে বিশ্বাস করে, যেখানে ব্রহ্মচর্য একটি মহান আদর্শ হিসেবে বিবেচিত। হিন্দু ধর্মে চার আশ্রমের মধ্যে ব্রহ্মচর্য আশ্রম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই আদর্শ অনুসারে, ব্যক্তিগত সুখ ত্যাগ করে সমাজ ও জাতির কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করা উচ্চতর লক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত।
RSS-এর মতে, বিবাহ একটি “সংস্কার” যা কেবল আনন্দ বা চুক্তির জন্য নয়, বরং সামাজিক কল্যাণের জন্য। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক দত্তাত্রেয় হোসবালে বলেছেন: “হিন্দু জীবনে বিবাহ একটি ‘সংস্কার’, এটি উপভোগের জন্য নয়, এটি চুক্তিও নয়।”
৩. সমর্পণের পরীক্ষা
RSS প্রচারকদের ব্রহ্মচর্য পালন একটি সমর্পণের পরীক্ষাও বটে। সংগঠনের বিশ্বাস অনুযায়ী, যে ব্যক্তি নিজের ব্যক্তিগত সুখ-আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করতে পারেন, তিনিই কেবল সমাজ ও জাতির জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করতে পারেন।
বিতর্ক ও সমালোচনা
সমালোচকদের দৃষ্টিকোণ
অনেক সমালোচক RSS-এর এই নীতিকে রূঢ় ও অবাস্তব বলে মনে করেন। তাঁদের মতে, একজন ব্যক্তি পারিবারিক জীবন যাপন করেও সমাজসেবা ও সংগঠনমূলক কাজে সম্পূর্ণভাবে নিবেদিত থাকতে পারেন।
কিছু সমালোচক এমনও মনে করেন যে, যিনি বিবাহিত নন, তিনি বিবাহ সম্পর্কে পরামর্শ দেওয়ার যোগ্যতা রাখেন না। মোহন ভাগবতের বিবাহ সম্পর্কিত মতামত প্রসঙ্গে এই সমালোচনা প্রায়শই উত্থাপিত হয়।
ব্যতিক্রম ও বাস্তবতা
অনেক প্রচারক কর্তব্য সমাপ্ত করার পরে পারিবারিক জীবনে প্রবেশ করেছেন। এটি দেখায় যে সংগঠন প্রচারকদের ব্যক্তিগত পছন্দকে সম্মান করে, তবে তা শুধুমাত্র তাঁদের প্রচারক পদ থেকে অবসর নেওয়ার পরেই।
সংগঠনের নেতৃত্ব বলেন যে, কোনো পূর্ণকালীন প্রচারক কখনও এমন ইচ্ছা প্রকাশ করেননি যে তিনি তাঁর ব্রহ্মচর্য ত্যাগ করতে চান এবং একই সাথে প্রচারক হিসেবে কাজ করতে চান।
RSS-এর অন্যান্য বিবাহ সম্পর্কিত দৃষ্টিকোণ
আন্তঃধর্মীয় বিবাহ সম্পর্কে RSS-এর অবস্থান
RSS আন্তঃধর্মীয় বিবাহের বিরোধী নয়, তবে তারা চায় এই ধরনের বিবাহ বিশেষ বিবাহ আইনের অধীনে নিবন্ধিত হোক, যাতে মহিলাদের সমান অধিকার থাকে। RSS মিডিয়া টিমের সদস্য রতন শারদা বলেছেন: “রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (RSS) আন্তঃধর্মীয় বিবাহের বিরোধী নয়, তবে বিবাহের নামে মহিলাদের শোষণের বিরোধী। তাদের ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য করা হয় এবং তারা তাদের অধিকার হারায়।”
বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, যা RSS-এর একটি সহযোগী সংগঠন, আন্তঃধর্মীয় বিবাহ নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে3। তারা চায় যে এই ধরনের বিবাহের ক্ষেত্রে উভয় পক্ষের পরিবারকে এক মাস আগে নোটিশ দেওয়া হোক এবং প্রতারণামূলকভাবে বিবাহ সম্পন্ন হলে নিরোধমূলক শাস্তি থাকুক।
সমলিঙ্গ বিবাহ সম্পর্কে RSS-এর অবস্থান
RSS সমলিঙ্গ বিবাহের বিরোধী। যদিও তারা সমলিঙ্গ সম্পর্কের অপরাধমুক্তির পক্ষে সমর্থন দিয়েছে, তবে তারা সমলিঙ্গ বিবাহের স্বীকৃতির বিরোধী।
মোহন ভাগবত বলেছেন যে সমকামিতা একটি “ব্যক্তিগত বিষয়” হিসেবে থাকা উচিত, তবে “সমকামী বিবাহ প্রাতিষ্ঠানিক করা উচিত নয় কারণ এটি সমকামিতাকে প্রাতিষ্ঠানিক করবে”। জানুয়ারি ২০২৩-এ, ভাগবত আবারও বলেছেন যে LGBT ব্যক্তিদের “তাদের নিজস্ব ব্যক্তিগত ও সামাজিক স্থান থাকা উচিত কারণ তারা মানুষ এবং অন্যদের মতো বেঁচে থাকার অধিকার রাখে”।
RSS প্রচারকদের জীবনচর্যা
প্রচারকদের দৈনন্দিন জীবন
RSS প্রচারকরা অত্যন্ত শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাপন করেন। তাঁদের দিন শুরু হয় প্রত্যুষে, প্রার্থনা ও ব্যায়ামের মাধ্যমে। দিনের বেশিরভাগ সময় তাঁরা সংগঠনের কাজে, শাখা পরিচালনায়, সমাজসেবায় এবং সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনে ব্যয় করেন।
প্রচারকদের প্রশিক্ষণ ও অঙ্গীকার
একজন প্রচারক হওয়ার পথে কঠোর প্রশিক্ষণ ও সাধনার প্রয়োজন। নিয়মিত শাখার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ, RSS-এর দর্শন ও আদর্শের প্রতি গভীর বোধ, এবং ব্যক্তিগত জীবনে এই মূল্যবোধ অনুসরণ করা অপরিহার্য।
প্রচারক হওয়ার আগে, একজন স্বয়ংসেবককে এই অঙ্গীকার করতে হয় যে তিনি তাঁর সম্পূর্ণ জীবন সংগঠনের উদ্দেশ্য সাধনে নিবেদিত করবেন, যার মধ্যে ব্রহ্মচর্য পালনও অন্তর্ভুক্ত।
আধুনিক সময়ে RSS প্রচারকদের ভূমিকা
রাজনৈতিক প্রভাব
RSS-এর প্রচারকরা ভারতের রাজনৈতিক পরিদৃশ্যে উল্লেখযোগ্য প্রভাব বিস্তার করেছেন। অনেক প্রচারক পরবর্তীতে রাজনীতিতে প্রবেশ করেছেন, যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলেন ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, যিনি একসময় RSS-এর প্রচারক ছিলেন।
সমাজে RSS প্রচারকদের প্রভাব
RSS প্রচারকরা সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সক্রিয়, বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ও সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রমে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সংকটের সময়ে তাঁরা সেবামূলক কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
সোহেল তাজের সপ্তম বিবাহ: রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত জীবনে নতুন অধ্যায়
সমাপ্তি: পরিবর্তনশীল সময়ে অপরিবর্তিত নীতি
রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের প্রচারকদের ব্রহ্মচর্য পালনের নীতি দীর্ঘকাল ধরে অপরিবর্তিত রয়েছে। ২০০৯ সালে মোহন ভাগবত স্পষ্ট করেছিলেন যে এই বিষয়ে কোনো ঐকমত্য নেই, এবং বর্তমানে সংগঠনের অবস্থান একই রয়েছে।
আধুনিক সময়ে, সমাজের পরিবর্তনশীল মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যেও, RSS তার মূল নীতি ও ঐতিহ্যে অটল রয়েছে। প্রচারকদের ব্রহ্মচর্য পালন নিছক একটি নিয়ম নয়, বরং সংগঠনের দর্শন ও কর্মপদ্ধতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।
সংগঠনের মতে, ব্যক্তিগত সুখ ত্যাগ করে সমাজ ও জাতির কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করার এই আদর্শই RSS প্রচারকদের শক্তির উৎস। তাই, যতদিন RSS তার মূল আদর্শে অবিচল থাকবে, ততদিন প্রচারকদের ব্রহ্মচর্য পালনের নীতিও অপরিবর্তিত থাকবে বলে আশা করা যায়।