ইলেকট্রিক গাড়ির (EV) চার্জ করা নিয়ে এখন আর মাথা ঘামাতে হবে না। কলকাতার বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা CESC একটি বড় পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। তারা রাজ্যে ইলেকট্রিক গাড়ির চার্জিং স্টেশন তৈরি করতে এবং সবুজ শক্তির জন্য ব্যাটারি স্টোরেজ সিস্টেম গড়তে চায়। এই কাজে সাহায্য করতে তারা যুক্তরাজ্যের (UK) একটি ফার্মের সঙ্গে কথা বলছে। এই খবরটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে, যা রাজ্যের ইলেকট্রিক গাড়ি ব্যবহারকারীদের জন্য একটি সুখবর হতে পারে।
গত ১১ মার্চ, ২০২৫-এ ‘দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া’য় প্রকাশিত একটি সংবাদে জানানো হয়েছে, CESC-এর ডিস্ট্রিবিউশন বিভাগের ম্যানেজিং ডিরেক্টর বিনীত সিক্কা এই পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। তিনি কলকাতায় আসা যুক্তরাজ্যের ছয়টি ছোট ও মাঝারি EV সংস্থার প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। এই প্রতিনিধিদলের মধ্যে ছিল Aegis Energy, Allye, Dock-y, Powerup, Hypermotive এবং Hodos Media-র মতো কোম্পানি। সিক্কা বলেছেন, তারা প্রথমে একটি পাইলট প্রকল্প শুরু করেছে ফ্লিট অপারেটরদের সঙ্গে। এটি সফল হলে ব্রিটিশ ফার্মগুলোর সাহায্যে বড় আকারে চার্জিং স্টেশন তৈরির কাজ শুরু হবে। তবে, ভারতে বিদ্যুৎ খাত নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় প্রথমে তারা একটি ‘প্রুফ অফ কনসেপ্ট’ নিয়ে এগোতে চায়।
এই উদ্যোগের পিছনে মূল লক্ষ্য হলো পরিবেশ রক্ষা। ইলেকট্রিক গাড়ি জনপ্রিয় হচ্ছে কারণ এগুলো পেট্রোল-ডিজেলের গাড়ির তুলনায় কম কার্বন নির্গমন করে। কিন্তু চার্জিং স্টেশনের অভাবে অনেকেই এই গাড়ি কিনতে দ্বিধা করেন। CESC এই সমস্যা দূর করতে চায়। বিনীত সিক্কা বলেছেন, “আমরা সাসটেইনেবিলিটির জন্য EV-কে প্রমোট করছি। আমাদের পাইলট প্রকল্পটি যদি ভালো ফল দেয়, তাহলে UK-এর ফার্মগুলোর সঙ্গে মিলে চার্জিং নেটওয়ার্ক তৈরি করব।” এছাড়া, তারা ব্যাটারি স্টোরেজের মাধ্যমে সবুজ শক্তি সংরক্ষণের পরিকল্পনাও করছে, যা রাতে বা বিদ্যুৎ না থাকার সময়ও চার্জিং সুবিধা দেবে।
এই আলোচনায় যুক্তরাজ্যের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ব্রিটেনে ইলেকট্রিক গাড়ির চার্জিং নেটওয়ার্ক অনেক উন্নত। উদাহরণস্বরূপ, সেখানে Osprey, GRIDSERVE, এবং Pod Point-এর মতো কোম্পানি হাজার হাজার চার্জিং পয়েন্ট পরিচালনা করে। CESC এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চায়। কলকাতায় আসা প্রতিনিধিদলের একজন, Powerup-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ডেভিড কলিনসন বলেছেন, “আমরা জেনারেটরের বদলে পাওয়ার স্টেশন বসাতে এবং নন-রোড যন্ত্রপাতি বিদ্যুৎচালিত করতে কাজ করতে চাই।” একইভাবে, Hypermotive-এর CEO অ্যাডাম হাকস্টেপ বলেছেন, “আমরা বাংলায় আমাদের দক্ষতা শেয়ার করতে চাই।” এই সহযোগিতা বাংলার EV ইকোসিস্টেমকে শক্তিশালী করতে পারে।
কেন এই প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ, তা বোঝা যায় পরিসংখ্যান থেকে। ভারতে ইলেকট্রিক গাড়ির বাজার দ্রুত বাড়ছে। ২০২৩ সালে দেশে প্রায় ১৫ লাখ EV বিক্রি হয়েছে বলে একটি রিপোর্টে জানানো হয়েছে। কিন্তু চার্জিং স্টেশনের সংখ্যা এখনও কম, মাত্র ১০,০০০-এর কাছাকাছি। পশ্চিমবঙ্গেও পরিস্থিতি একই। CESC-এর এই উদ্যোগ সেই ঘাটতি পূরণ করতে পারে। এছাড়া, সরকারও ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০% গাড়ি ইলেকট্রিক করার লক্ষ্য নিয়েছে, যার জন্য চার্জিং অবকাঠামো জরুরি।
এই প্রকল্প শুধু পরিবেশের জন্যই নয়, অর্থনীতির জন্যও ভালো। চার্জিং স্টেশন তৈরি হলে নতুন চাকরির সুযোগ হবে। স্থানীয় ব্যবসা, যেমন দোকান বা রেস্তোরাঁ, চার্জিং পয়েন্টের কাছে গ্রাহক বৃদ্ধি দেখতে পারে। ব্রিটিশ ফার্মগুলোর প্রযুক্তি এবং CESC-এর স্থানীয় অভিজ্ঞতা মিলে একটি শক্তিশালী মডেল তৈরি হতে পারে। তবে, চ্যালেঞ্জও আছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সরকারি নীতির ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে।
সব মিলিয়ে, CESC-এর এই পদক্ষেপ রাজ্যে ইলেকট্রিক গাড়ির ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করতে পারে। ব্রিটিশ ফার্মের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তারা যদি সফল হয়, তাহলে চার্জিং নিয়ে দুশ্চিন্তা অনেকটাই কমবে। এটি কেবল গাড়ির মালিকদের জন্যই নয়, পরিবেশের জন্যও একটি বড় জয় হবে।