Ishita Ganguly
২৭ জুন ২০২৪, ৪:০৫ অপরাহ্ণ
অনলাইন সংস্করণ

The Mystery of AM-PM: এর রহস্য উন্মোচন, কিভাবে ঠিক হলো, সাথে আরও কিছু অজানা তথ্য

সময় মানুষের জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ। আমরা প্রতিনিয়ত সময় গণনা করি, নিয়ন্ত্রণ করি, এবং এর সাথে তাল মিলিয়ে চলি। কিন্তু আমরা যে AM-PM পদ্ধতি ব্যবহার করি, তার মূল অর্থ ও ইতিহাস সম্পর্কে কতটুকু জানি? আসুন জেনে নেই AM-PM এর রহস্যময় দুনিয়া সম্পর্কে।

AM-PM এর মূল অর্থ: AM ও PM – এই দুটি সংক্ষিপ্ত রূপ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এতটাই অভ্যস্ত যে আমরা প্রায়ই এর মূল অর্থ নিয়ে ভাবি না। AM হল ‘Ante Meridiem’ এর সংক্ষিপ্ত রূপ, যা লাতিন ভাষা থেকে এসেছে। এর আক্ষরিক অর্থ হল ‘মধ্যাহ্নের আগে’। অন্যদিকে, PM হল ‘Post Meridiem’ এর সংক্ষেপ, যার অর্থ ‘মধ্যাহ্নের পরে’। এখানে ‘Meridiem’ শব্দটি লাতিন ভাষায় মধ্যাহ্ন বা দুপুর বোঝায়।

বাংলায় AM-PM এর অনুবাদ: বাংলা ভাষায় AM-PM এর সরাসরি অনুবাদ করা হয়েছে। AM কে বলা হয় ‘পূর্বাহ্ন’ এবং PM কে বলা হয় ‘অপরাহ্ন’। ‘পূর্বাহ্ন’ শব্দটি ‘পূর্ব’ (আগে) এবং ‘অহ্ন’ (দিন) শব্দ থেকে এসেছে, যার অর্থ দিনের প্রথম ভাগ। অনুরূপভাবে, ‘অপরাহ্ন’ শব্দটি ‘অপর’ (পরে) এবং ‘অহ্ন’ (দিন) থেকে উদ্ভূত, যা দিনের শেষের দিকের সময়কে বোঝায়।

সময় গণনার এই পদ্ধতির ইতিহাস: AM-PM পদ্ধতির উৎপত্তি প্রাচীন রোমান সভ্যতায়। রোমানরা দিনকে দুই ভাগে ভাগ করত: সূর্যোদয় থেকে মধ্যাহ্ন পর্যন্ত এবং মধ্যাহ্ন থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। তারা দিনের 24 ঘণ্টাকে দুটি 12 ঘণ্টার ভাগে বিভক্ত করেছিল। এই পদ্ধতি ধীরে ধীরে রোমান সাম্রাজ্যের বিস্তারের সাথে সাথে ছড়িয়ে পড়ে এবং পরবর্তীতে বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা পায়।

মধ্যযুগে, ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের সময় গণনা পদ্ধতি প্রচলিত ছিল। কিন্তু 15শ ও 16শ শতাব্দীতে মেকানিক্যাল ঘড়ির আবির্ভাবের পর AM-PM পদ্ধতি আরও বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ঔপনিবেশিক যুগে, ব্রিটিশ ও অন্যান্য ইউরোপীয় শক্তিগুলি এই পদ্ধতি তাদের উপনিবেশগুলিতে প্রচলন করে, যা এর বিশ্বব্যাপী ব্যবহারকে ত্বরান্বিত করে।

AM-PM ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা: AM-PM পদ্ধতির প্রধান সুবিধা হল এর সহজবোধ্যতা। অধিকাংশ মানুষের কাছে 12-ঘণ্টা পদ্ধতি বোঝা ও মনে রাখা সহজ। এছাড়া, এই পদ্ধতি দিনকে দুটি স্পষ্ট ভাগে বিভক্ত করে, যা অনেকের কাছে সুবিধাজনক।

তবে, এই পদ্ধতির কিছু অসুবিধাও রয়েছে। প্রথমত, এটি বিভ্রান্তির সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে যখন মধ্যরাত্রি বা মধ্যাহ্নের কাছাকাছি সময়ের কথা আসে। উদাহরণস্বরূপ, 12:00 AM হল মধ্যরাত্রি, যা অনেকের কাছে অস্বাভাবিক মনে হতে পারে। দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে যেখানে সময়ের সঠিকতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে 24-ঘণ্টা পদ্ধতি অধিক নির্ভরযোগ্য ও স্পষ্ট।

24-ঘণ্টা পদ্ধতির সাথে তুলনা করলে AM-PM পদ্ধতি কিছুটা জটিল মনে হতে পারে। 24-ঘণ্টা পদ্ধতিতে দিনের প্রতিটি মুহূর্ত একটি অনন্য সংখ্যা দ্বারা প্রকাশ করা হয়, যা বিভ্রান্তির সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। তবে, দৈনন্দিন ব্যবহারে AM-PM পদ্ধতি এখনও বেশ জনপ্রিয়, বিশেষ করে ইংরেজি-ভাষী দেশগুলিতে।

\ AM-PM ব্যবহার: ভারতে AM-PM পদ্ধতি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। দৈনন্দিন কথোপকথনে, ব্যবসা-বাণিজ্যে, এবং মিডিয়ায় এই পদ্ধতি প্রচলিত। উদাহরণস্বরূপ, টেলিভিশন অনুষ্ঠানসূচি, ফ্লাইট শেডিউল, এবং অফিস সময়সূচি প্রায়শই AM-PM ফরম্যাটে প্রকাশিত হয়।

তবে, সরকারি দপ্তরে এবং সামরিক বাহিনীতে 24-ঘণ্টা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এটি বিশ্বব্যাপী প্রচলিত রীতি, যেখানে সঠিক সময় নির্ধারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে উভয় পদ্ধতি শেখানো হয়, যাতে ছাত্রছাত্রীরা দুটি পদ্ধতিতেই সাবলীল হতে পারে।

AM-PM সম্পর্কিত ভুল ধারণা ও তার সমাধান: AM-PM ব্যবহারে কিছু সাধারণ ভুল ধারণা রয়েছে। একটি প্রচলিত ভুল ধারণা হল 12:00 PM কে রাত 12টা মনে করা। আসলে, 12:00 PM হল দুপুর 12টা বা মধ্যাহ্ন, আর 12:00 AM হল মধ্যরাত্রি।

আরেকটি ভুল ধারণা হল AM কে সকাল এবং PM কে বিকাল হিসেবে সীমিত করা। বাস্তবে, AM সূর্যোদয়ের আগে থেকেও শুরু হয় (যেমন ভোর 4টা), এবং PM রাত 11টা পর্যন্ত চলতে পারে।

সঠিক ব্যবহারের জন্য, মনে রাখা প্রয়োজন যে AM 12:00 (মধ্যরাত্রি) থেকে শুরু হয়ে 11:59 AM পর্যন্ত চলে। PM 12:00 (দুপুর) থেকে শুরু হয়ে 11:59 PM পর্যন্ত চলে। এই নিয়মগুলি মেনে চললে AM-PM ব্যবহারে বিভ্রান্তি এড়ানো সম্ভব।

সমাপ্তি: AM-PM পদ্ধতি, তার সরল প্রতীয়মান রূপের পিছনে, একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস ও জটিল ব্যবহারবিধি লুকিয়ে আছে। এই পদ্ধতি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে, তবে এর সঠিক ব্যবহার ও বোঝাপড়া গুরুত্বপূর্ণ। সময়ের এই দ্বৈত বিভাজন আমাদের দিনকে সংগঠিত করতে সাহায্য করে, কিন্তু এর পাশাপাশি 24-ঘণ্টা পদ্ধতির গুরুত্বও অনস্বীকার্য। সময় গণনার এই বিভিন্ন পদ্ধতি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে সময় শুধু গণনার বিষয় নয়, এটি মানব সভ্যতার একটি মূল্যবান সম্পদ।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইউনুসের ‘নতুন’ বাংলাদেশে ধর্ষণের ঊর্ধ্বগতি: রাজপথে প্রতিবাদের ঝড় ছাত্রদের

ভারতে ইন্টারনেট বিপ্লবের নতুন দিগন্ত: স্টারলিঙ্কের সঙ্গে এয়ারটেলের ঐতিহাসিক চুক্তি

অস্ত্র আমদানির দৌড়ে শীর্ষে ইউক্রেন, ভারতের স্থান দ্বিতীয়: বিশ্বে কী বার্তা?

মুসলিম ভোট ব্যাঙ্কে নজর! বঙ্গের সব আসনে লড়তে প্রস্তুত আইএমআইএম

হোলির রঙে ব্যাঙ্ক বন্ধ: আগামীকাল থেকে টানা ৪ দিন ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ব্যাঙ্ক ছুটি, তালিকা দেখে নিন

কেকেআরের প্রস্তুতি শুরু: কলকাতায় নাইটদের ক্যাপ্টেন-কোচের সঙ্গে প্রকাশিত হল প্র্যাক্টিস সূচি

শিক্ষামন্ত্রীর বাড়ির সামনে ‘ক্রিমিনাল’ পোস্টার: সিপিএম নেতার থানায় তলব!

কলকাতার Zakaria Street-এর মাস্ট ভিজিট ফুড স্টল: একটি খাদ্যপ্রেমীর স্বর্গভূমি

অলক্ষ্যে ঋত্বিক: ঋত্বিক ঘটকের জীবনালেখ্য নিয়ে আসছে বাঙালির প্রতীক্ষিত চলচ্চিত্র

আইপিএল-এ তামাকের বিজ্ঞাপন বন্ধ! স্বাস্থ্যমন্ত্রকের কড়া নির্দেশ জারি!

১০

দেওয়ালের কোন দিকে কোন রঙ শুভ? বাস্তুশাস্ত্রের চোখে একটি গভীর দৃষ্টিপাত

১১

ডিএলএফ-এমআরএফ-আমূল-পেটিএম: সংক্ষিপ্ত নামেই ভারত বিখ্যাত, এবার জেনে নিন এই ব্র্যান্ডগুলোর পুরো নাম!

১২

সেক্সসমনিয়া: ঘুমের মধ্যে লুকিয়ে থাকা এক বিরল রহস্য

১৩

ভীষণ ক্ষতিকর Non-Stick প্যানে রান্না করছেন না তো? জেনে নিন সেরা বিকল্পগুলো

১৪

কাক ডাকার ফলাফল: ইসলাম ও হিন্দু শাস্ত্রে কী বলা আছে?

১৫

দিনে ৮ ঘণ্টা AC চালালে মাসে কত ‘Electric Bill’ আসবে? সহজ হিসেবে নিশ্চিন্তে থাকুন

১৬

প্রাক্তনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা কি বুদ্ধিমানের কাজ? একটি গভীর বিশ্লেষণ

১৭

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের জাদু: কীভাবে ভারত হয়ে উঠল অপ্রতিরোধ্য?

১৮

বাংলার প্রথম এসি লোকাল ট্রেন শিয়ালদা-কৃষ্ণনগর রুটে, ভাড়া কত জানেন?

১৯

ভারতে রাজ্যভিত্তিক হীরার মজুদ: কোন রাজ্য হীরা উৎপাদনে সেরা?

২০
close