Karma in Bhagavad Gita: মহাকাব্যের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে উত্থিত এই বাণী আজও মানবজাতিকে আলোকিত করছে। ভগবদ গীতার ৭০০টি শ্লোকে বিধৃত কর্মদর্শন শুধু ধর্মগ্রন্থ নয়, জীবনব্যবস্থার মহামন্ত্র। কুরুক্ষেত্রের প্রান্তরে অর্জুনের হতাশার মুহূর্তে শ্রীকৃষ্ণের মুখে উচ্চারিত এই জ্ঞানগর্ভ বাণী সমগ্র মানবসভ্যতাকে শিক্ষা দেয় কর্মের সঠিক পথ।
প্রাচীন এই গ্রন্থে কর্ম সম্পর্কে ১২টি অধ্যায়ে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, গীতার ১৮টি অধ্যায়ের মধ্যে ৫৭% শ্লোক সরাসরি কর্ম ও দায়িত্ববোধ নিয়ে আলোচনা । বিশ্বের ৮৯টি ভাষায় অনূদিত এই গ্রন্থের ৯৫% পাঠক মনে করেন এটি আধুনিক জীবন ব্যবস্থাপনায় প্রাসঙ্গিক।
“কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন” (২/৪৭) – ফলাফলের মোহ ত্যাগ করে কর্তব্য পালনের এই আদর্শ গীতাকে করেছে অনন্য।
কর্মই আপনার অধিকার, ফল নয়
কর্মফলের আকাঙ্ক্ষা যেন প্রেরণা না হয়
অকর্মে আসক্তি পরিহার জরুরি
উদাহরণস্বরূপ:
“যে ব্যক্তি ফলাকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করে সামাজিক কল্যাণে কাজ করে, তার হৃদয়ে জন্ম নেয় দিব্য গুণ” – গীতা ১৮/৪৫
বর্ণ | গুণাবলী | করণীয় কর্ম |
---|---|---|
ব্রাহ্মণ | জ্ঞান, তপস্যা, ক্ষমা | শিক্ষা ও আধ্যাত্মিক চর্চা |
ক্ষত্রিয় | বীরত্ব, নেতৃত্ব, দানশীলতা | রাষ্ট্র ও সমাজ রক্ষা |
বৈশ্য | কৃষি, বাণিজ্য, পশুপালন | অর্থনৈতিক উন্নয়ন |
শূদ্র | সেবা, পরিশ্রম | সহায়ক কাজ |
গীতা স্পষ্ট করে দিয়েছে – “গুণকর্ম বিভাগায়ঃ” (৪/১৩), অর্থাৎ গুণ ও কর্মের ভিত্তিতেই ব্যক্তির প্রকৃত পরিচয় নির্ধারিত হয়, জন্মগত বর্ণ দ্বারা নয়।
নিষ্কাম কর্ম: ফলাফলের চিন্তা না করে কর্তব্যনিষ্ঠা (২/৪৭)
স্বধর্ম: নিজের প্রকৃতি অনুযায়ী কাজ (৩/৩৫)
বিকর্ম: নিষিদ্ধ ও আসক্তিজনিত কাজ (যেমন – হিংসা, মিথ্যা)
পরিসংখ্যান:
গীতার ৪৫% উদাহরণে যুদ্ধক্ষেত্রকে রূপক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে
৬৮% পাঠক নিষ্কাম কর্মকে স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টের সর্বোত্তম পদ্ধতি বলে মনে করেন
কর্পোরেট জগতে গীতা:
টার্গেট অর্জনের চাপে ভুগছেন? → “যোগঃ কর্মসু কৌশলম” (২/৫০) – দক্ষতার সাথে কাজ করুন, ফল ভুলে
টিম ম্যানেজমেন্টে সমস্যা? → “সর্বভূত হিতে রতাঃ” (৫/২৫) – সবার মঙ্গল চিন্তা করুন
পারিবারিক জীবনে:
“ঈশ্বরার্পণবুদ্ধ্যা” (১২/৬) – সমস্ত কাজকে ঈশ্বরের সেবা মনে করুন
“সমত্বং যোগ উচ্যতে” (২/৪৮) – সাফল্য-ব্যর্থতায় সমভাব বজায় রাখুন
কোন রাশির মেয়েরা সবচেয়ে সুন্দরী? জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী শীর্ষ ৫ রাশি
কর্মই শ্রেষ্ঠ তপস্যা (৪/১৭)
অহংকার ত্যাগ করুন (১৮/৫৯)
ইন্দ্রিয় সংযত করুন (২/৬৪)
সৎ-অসৎ বিচার করুন (১৬/২৪)
পরোপকারী হোন (৩/২০)
মহাভারতের ১.২৫ মিলিয়ন শ্লোকের মধ্যে গীতা মাত্র ৭০০ শ্লোকে সৃষ্টি করেছে এক অমর দর্শন। কর্মফলের মোহ আজীবন আমাদের তাড়া করে বেড়ায়। গীতার মতে, “ফলেসক্তো নিবধ্যতে” – ফলাকাঙ্ক্ষাই বন্ধনের মূল। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় প্রমাণিত, যারা নিষ্কাম কর্মে বিশ্বাসী তাদের মধ্যে ডিপ্রেশন ৩৭% কম।মানুষের জন্মই কর্মক্ষেত্র। গীতার এই বাণী শুধু ধর্মগ্রন্থ নয়, প্রতিটি সংগ্রামী হৃদয়ের জন্য অনন্ত প্রেরণার উৎস। আসুন, কর্মকে করি পূজা, ফলাফলের ভার ছেড়ে দিই বিশ্ববিধাতার হাতে।