বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল (৫ আগস্ট, ২০২৪) দুপুরের আগে পদত্যাগ করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে চলা গণবিক্ষোভের মুখে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পদত্যাগের পর তিনি ভারতে চলে গেছেন। এই ঘটনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।
শেখ হাসিনা ২০০৯ সাল থেকে টানা তিনটি মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি দেশজুড়ে ব্যাপক গণবিক্ষোভের মুখে তাঁর সরকার চাপের মধ্যে পড়ে। বিশেষ করে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ক্রমশ সরকার বিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়।
গত কয়েকদিন ধরে দেশের বিভিন্ন শহরে হিংসাত্মক বিক্ষোভ চলছিল। বিক্ষোভকারীরা সরকারি অফিস ও গাড়িতে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করে। এই পরিস্থিতিতে সরকার ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ ও কারফিউ জারি করে। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
শেখ হাসিনার পতন: বাংলাদেশের সামনে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ
শেখ হাসিনা গতকাল দুপুরে বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। এরপর দুপুর আড়াইটার দিকে তিনি একটি সামরিক হেলিকপ্টারে করে ভারতের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন। তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানাও তাঁর সঙ্গে ছিলেন।
সম্প্রতি বাংলাদেশের অর্থনীতি চাপের মুখে পড়েছিল। মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি এবং বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছিল।
আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনকালে বিরোধী দলগুলোকে দমন করা হয়েছে বলে অভিযোগ ছিল। এতে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। এতে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ক্রমশ বড় আকার ধারণ করে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছিল।
শেখ হাসিনার পতনের ফলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এর ফলে দেশটিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হতে পারে। তবে সেনাবাহিনীর ভূমিকা কী হবে তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।
একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মন্তব্য করেছেন, “শেখ হাসিনার পতন বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক যুগান্তকারী ঘটনা। এর ফলে দেশটিতে নতুন করে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে আসতে পারে। তবে এই সুযোগ কাজে লাগাতে হলে সকল রাজনৈতিক দলকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।”
বাংলাদেশের এই রাজনৈতিক পরিবর্তন ভারতের জন্যও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শেখ হাসিনা ছিলেন ভারতের ঘনিষ্ঠ মিত্র। তাঁর পতনের ফলে দুই দেশের সম্পর্কে কী প্রভাব পড়বে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
একজন কূটনীতিক বলেছেন, “ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না। তবে দেশটিতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকুক এটাই ভারতের প্রত্যাশা।”
শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল উদ্বিগ্ন। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানিয়েছে।
বাংলাদেশের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ হলো শান্তিপূর্ণভাবে রাজনৈতিক সংকট মোকাবেলা করা। দেশটির অর্থনীতি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হলে দ্রুত একটি স্থায়ী সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এজন্য সকল রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতা প্রয়োজন।
ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবন ধ্বংস: ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়
শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে পরিবর্তন এসেছে তা দেশটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। এই মুহূর্তে দেশটির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পরবর্তী সরকার গঠন করা। এর জন্য সকল পক্ষকে সংযম ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে হবে।
1. অন্তর্বর্তীকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন
2. সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠান
3. গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা
4. অর্থনৈতিক সংস্কার
5. দুর্নীতি দমন
শেষ পর্যন্ত বলা যায়, শেখ হাসিনার পতন বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এই পরিবর্তন কতটা ইতিবাচক হবে তা নির্ভর করবে পরবর্তী কয়েক মাসে দেশটির রাজনৈতিক নেতৃত্ব কীভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে তার উপর। বাংলাদেশের জনগণ আশা করছে এই সংকট থেকে দেশ দ্রুত বেরিয়ে আসবে এবং গণতন্ত্র ও উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবে।