Significance of sindoor in Hinduism: হিন্দু ধর্মে বিবাহিত মহিলাদের সিঁদুর পরা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রথা। কিন্তু অনেকেই জানেন না যে সিঁদুর পরার সময় কোন দিকে মুখ করে থাকা উচিত। এই প্রথার পিছনে রয়েছে বহু প্রাচীন ঐতিহ্য এবং কিছু বৈজ্ঞানিক যুক্তিও। আসুন জেনে নেওয়া যাক সিঁদুর পরার সঠিক দিক এবং এর তাৎপর্য সম্পর্কে।
সিঁদুর পরার সঠিক দিক
হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, বিবাহিত মহিলাদের পূর্ব দিকে মুখ করে সিঁদুর পরা উচিত। এর পিছনে রয়েছে বেশ কিছু কারণ:
- পূর্ব দিক সূর্যোদয়ের দিক, যা নতুন দিনের সূচনা ও শুভতার প্রতীক।
- পূর্ব দিকে মুখ করে থাকলে সূর্যের আলো সরাসরি মুখে পড়ে, যা শরীর ও মনের জন্য উপকারী।
- পূর্ব দিক দেবতাদের বাসস্থান বলে মনে করা হয়, তাই এই দিকে মুখ করে থাকলে দৈবী শক্তি লাভ করা যায়।
দীর্ঘ সময় মাস্ক পরলে ত্বকের ক্ষতি: কারণ ও প্রতিকার
সিঁদুর পরার সময় অন্যান্য নিয়ম
শুধু দিক নয়, সিঁদুর পরার সময় আরও কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত:
- স্নান করার পর পবিত্র অবস্থায় সিঁদুর পরা উচিত।
- সিঁথির মাঝ বরাবর সিঁদুর পরতে হবে, একপাশে নয়।
- বাম হাতের তর্জনী আঙুল দিয়ে সিঁদুর পরা শুভ।
- সিঁদুর পরার আগে একটু মন্ত্র উচ্চারণ করা যেতে পারে।
সিঁদুর পরার বৈজ্ঞানিক কারণ
কেবল ধর্মীয় কারণেই নয়, সিঁদুর পরার পিছনে কিছু বৈজ্ঞানিক যুক্তিও রয়েছে:
- সিঁদুরে থাকা পারদ মস্তিষ্কের স্নায়ুর কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- সিঁথির মধ্যবর্তী স্থানে একটি গুরুত্বপূর্ণ নাড়ী রয়েছে, যেখানে সিঁদুর লাগালে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- সিঁদুরের লাল রং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
সিঁদুর পরার ইতিহাস
সিঁদুর পরার প্রথা অত্যন্ত প্রাচীন। এর উৎপত্তি নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে:
- কেউ কেউ মনে করেন, প্রাচীনকালে নারীকে পুরুষের সম্পত্তি হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য এই প্রথা শুরু হয়েছিল।
- অন্য একটি মত অনুযায়ী, সিঁদুর আসলে প্রাকৃতিক শক্তির উপাসনার প্রতীক।
- পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, দেবী পার্বতী সাধারণ মহিলাদের ওপর সিঁদুর ছড়িয়ে দিয়েছিলেন।
সিঁদুর পরার তাৎপর্য
হিন্দু ধর্মে সিঁদুর পরার বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে:
- এটি বিবাহিত নারীর প্রতীক।
- স্বামীর দীর্ঘায়ু ও মঙ্গল কামনা করা হয়।
- সৌভাগ্য ও শুভতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।
সিঁদুর পরার সময় এড়িয়ে চলার বিষয়গুলি
কিছু বিষয় রয়েছে যা সিঁদুর পরার সময় এড়িয়ে চলা উচিত:
- মঙ্গলবার সিঁদুর পরা থেকে বিরত থাকা ভালো।
- অন্য কারও সিঁদুর ব্যবহার করা উচিত নয়।
- ঋতুস্রাবের সময় সিঁদুর পরা নিষিদ্ধ।
- চুল ভেজা অবস্থায় সিঁদুর পরা উচিত নয়।
সিঁদুর পরার বিভিন্ন পদ্ধতি
বিভিন্ন অঞ্চলে সিঁদুর পরার পদ্ধতি ভিন্ন:
- বাংলায় সিঁথি ভরে সিঁদুর পরা হয়।
- উত্তর ভারতে অনেক সময় কেবল কপালে টিপ হিসেবে সিঁদুর পরা হয়।
- দক্ষিণ ভারতে কুমকুম নামে একধরনের গুঁড়ো সিঁদুর ব্যবহৃত হয়।
সিঁদুর পরার সময় ব্যবহৃত মন্ত্র
অনেক মহিলা সিঁদুর পরার সময় নিম্নলিখিত মন্ত্রটি উচ্চারণ করেন8:”ওঁ সিন্দূরং ত্রিলোকেশং তনুত্রাণং মহেশ্বরী।
যোগক্ষেমকরং নিত্যং প্রীণাতু পরমেশ্বরী॥”
সিঁদুরের প্রকারভেদ
বাজারে বিভিন্ন ধরনের সিঁদুর পাওয়া যায়:
- পাউডার সিঁদুর
- লিকুইড সিঁদুর
- স্টিক সিঁদুর
- কুমকুম
সিঁদুর পরার সুবিধা ও অসুবিধা
সিঁদুর পরার কিছু সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে:
সুবিধা |
অসুবিধা |
মানসিক শান্তি |
ত্বকে অ্যালার্জি হতে পারে |
সামাজিক স্বীকৃতি |
নিম্নমানের সিঁদুর স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে |
ঐতিহ্য রক্ষা |
দাগ পড়তে পারে কাপড়ে |
বৈবাহিক সম্পর্কের প্রতীক |
কর্মক্ষেত্রে বাধা হতে পারে |
আধুনিক যুগে সিঁদুর পরার প্রবণতা
বর্তমান সময়ে সিঁদুর পরার প্রথায় কিছু পরিবর্তন এসেছে:
- অনেক মহিলা এখন নিজের পছন্দ মতো সিঁদুর পরছেন, বাধ্যবাধকতা কমেছে।
- বিকল্প হিসেবে লিপস্টিক বা অন্য কসমেটিক্স ব্যবহার করা হচ্ছে।
- কিছু মহিলা এই প্রথাকে লিঙ্গ বৈষম্যের প্রতীক হিসেবে দেখছেন এবং প্রত্যাখ্যান করছেন।
- অনেক জায়গায় বর-কনে উভয়েই সিঁদুর পরার চল শুরু হয়েছে।
চাঁদির আংটি কোন আঙুলে পরবেন? প্রেমানন্দ মহারাজের পরামর্শ জানুন
সিঁদুর পরার বিকল্প উপায়
যারা ঐতিহ্যগত সিঁদুর পরতে চান না, তাদের জন্য কিছু বিকল্প উপায় রয়েছে:
- লাল বিন্দি বা টিপ
- লাল চুড়ি
- মঙ্গলসূত্র
- আংটি
সিঁদুর পরা একটি প্রাচীন ভারতীয় প্রথা যা বহু শতাব্দী ধরে চলে আসছে। এর পিছনে রয়েছে নানা ধর্মীয়, সামাজিক ও বৈজ্ঞানিক কারণ। যদিও আধুনিক সমাজে এর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তিত হচ্ছে, তবুও এখনও অনেক মহিলা এই ঐতিহ্য বজায় রাখতে চান। সবশেষে বলা যায়, সিঁদুর পরা বা না পরা ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়। তবে যারা পরেন, তাদের জন্য পূর্ব দিকে মুখ করে থাকা এবং শাস্ত্রীয় নিয়ম মেনে চলা উত্তম।