ইদের উৎসব মানেই কলকাতার রাস্তায় ভিড়, আনন্দ আর একটু বাড়তি ব্যস্ততা। এই সময়টাতে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে নামাজের জমায়েত ও উৎসবের আমেজ থাকে ঢাকঢোল। তবে এই উৎসবকে নির্বিঘ্ন করতে এবং সাধারণ মানুষের চলাচলে যাতে বড় কোনো সমস্যা না হয়, সেজন্য কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ প্রতিবারের মতো এবারও বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। ২০২৫ সালের ইদ-উল-ফিতর বা ইদ-উল-আজহার জন্য (তারিখ নির্ভর করবে চাঁদ দেখার ওপর) শহরের বেশ কিছু রাস্তায় গাড়ি চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে। কিছু রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ থাকবে, আবার কোথাও আংশিক নিয়ন্ত্রণ থাকবে। এই সংবাদে আমরা জানাবো, কোন কোন রাস্তায় কীভাবে প্রভাব পড়বে আর কীভাবে আপনি নিজের যাত্রা পরিকল্পনা করতে পারেন।
কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, ইদের দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শহরের প্রধান প্রধান রাস্তাগুলোতে গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রিত হবে। বিশেষ করে যেসব এলাকায় মসজিদ বা ঈদগাহ মাঠ রয়েছে, সেখানে বড় জমায়েতের কথা মাথায় রেখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, গত বছরের ইদ-উল-ফিতরে (২০২৩ সালের ২২ এপ্রিল) শহরের ৮০টির বেশি রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল। এবারও একই ধরনের পরিকল্পনা থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। সকাল ৪টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সমস্ত প্রকার পণ্যবাহী গাড়ির (এলপিজি, ফল, সবজি ও দুধবাহী গাড়ি ছাড়া) চলাচল পুরোপুরি বন্ধ থাকবে। পথচারীদের চলাচলেও কিছু ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ থাকতে পারে। যেসব রাস্তা বন্ধ বা নিয়ন্ত্রিত হবে, তার মধ্যে রয়েছে পার্ক সার্কাস, নারকেলডাঙ্গা, কিড স্ট্রিট, রেড রোড এবং মধ্য কলকাতার কিছু গুরুত্বপূর্ণ সড়ক।
এই বিধিনিষেধের পিছনে মূল উদ্দেশ্য হলো উৎসবের সময় রাস্তায় যানজট এড়ানো এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ইদের দিন শহরের বিভিন্ন মসজিদে নামাজ পড়তে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হন। এছাড়া, রাস্তায় জমায়েত ও উৎসবের আনন্দে পথচারীদের সংখ্যাও বেড়ে যায়। গত বছরের তথ্য অনুযায়ী, কলকাতা পুলিশের এই ব্যবস্থার ফলে বড় ধরনের যানজট বা দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়েছিল। এবারও একইভাবে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। যেসব রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ থাকবে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—পার্ক সার্কাস সেভেন পয়েন্ট ক্রসিং থেকে মল্লিকবাজার, নারকেলডাঙ্গা মেইন রোডের কিছু অংশ, কিড স্ট্রিট থেকে রেড রোডের দিকে যাওয়া পথ এবং মেটিয়াব্রুজের কিছু গলি। আংশিক বিধিনিষেধ থাকবে এ জে সি বোস রোড, স্ট্র্যান্ড রোড এবং হেয়ার স্ট্রিটের মতো ব্যস্ত রাস্তায়। জরুরি পরিষেবার গাড়ি, যেমন অ্যাম্বুলেন্স বা ফায়ার ব্রিগেড, এই নিয়মের আওতায় পড়বে না।
এই নিয়মের সঙ্গে আরও কিছু প্রাসঙ্গিক তথ্য জানা দরকার। কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ প্রতিবছর ইদের সময় এই ধরনের নোটিশ জারি করে। ২০২৩ সালে যেমন, শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার পর ২১ এপ্রিল রাতে ইদের দিন ঘোষণা করা হয়েছিল। তখন পুলিশের নোটিশে বলা হয়েছিল, সকাল ৪টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত পণ্যবাহী গাড়ির চলাচল বন্ধ থাকবে। এছাড়া, যেসব রাস্তায় নামাজের জমায়েত বেশি হয়, সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এবারও একই ধরনের ব্যবস্থা থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে ২০২৫ সালের ইদের সঠিক তারিখ এখনও নির্ধারিত হয়নি, কারণ তা চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে। সাধারণত ইদ-উল-ফিতর রমজান মাসের শেষে আর ইদ-উল-আজহা জিলহজ মাসের ১০ তারিখে পালিত হয়। তারিখ ঘোষণার পর পুলিশের তরফে আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হবে।
শহরবাসীর জন্য এই সময়ে যাতায়াতের পরিকল্পনা করে নেওয়া জরুরি। যদি আপনার গন্তব্য রেলস্টেশন, বিমানবন্দর বা কোনো জরুরি কাজের জায়গা হয়, তাহলে একটু আগে বেরিয়ে পড়াই ভালো। কলকাতা পুলিশের পরামর্শ অনুযায়ী, বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, পার্ক সার্কাসের দিকে যাওয়ার পরিবর্তে টপশিয়া রোড বা বাইপাস ব্যবহার করা যেতে পারে। একইভাবে, রেড রোড এড়িয়ে চিৎপুর রোড বা অন্য গলি দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করা যায়। পুলিশের তরফে সামাজিক মাধ্যমে (ফেসবুক, এক্স) আপডেট দেওয়া হবে, তাই সেদিকে নজর রাখলে সুবিধা হবে।
এই বিধিনিষেধ শুধু গাড়িচালকদের জন্যই নয়, পথচারীদেরও মাথায় রাখতে হবে। যেসব জায়গায় জমায়েত বেশি হবে, সেখানে হাঁটার পথেও কিছু নিয়ন্ত্রণ থাকতে পারে। তবে পুলিশের দাবি, জরুরি প্রয়োজনে কাউকে আটকানো হবে না। শুধু পরিচয়পত্র দেখাতে হতে পারে। এছাড়া, যারা ব্যবসার জন্য পণ্য পরিবহন করেন, তাদের জন্য পরামর্শ হলো—এলপিজি, ফল-সবজি বা দুধ ছাড়া অন্য পণ্যের গাড়ি সকালে না চালানোই ভালো। বিকেলের পর থেকে এই নিয়ম শিথিল হবে।
সব মিলিয়ে, ইদের দিন কলকাতার রাস্তায় একটু ধৈর্য আর পরিকল্পনা নিয়ে চলতে হবে। পুলিশের এই ব্যবস্থা উৎসবের আনন্দকে বজায় রাখার পাশাপাশি শহরের শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য। তাই আগে থেকে রাস্তার তালিকা দেখে নিয়ে নিজের পথ ঠিক করে নিন। উৎসবের দিনে সবাই মিলে আনন্দ করতে গিয়ে যাতে কোনো অসুবিধা না হয়, সেটাই সবার কাম্য।