The safest country in the world in 2025: বিশ্বে নিরাপত্তার প্রশ্নটি এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। পর্যটক থেকে শুরু করে বিনিয়োগকারী – সবাই জানতে চান কোন দেশগুলো সবচেয়ে নিরাপদ। ২০২৫ সালের সাম্প্রতিক Numbeo Safety Index এর তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীর সব চেয়ে নিরাপদ দেশের খেতাব পেয়েছে ইউরোপের ক্ষুদ্র রাষ্ট্র অ্যান্ডোরা। অন্যদিকে, এই তালিকায় ভারত রয়েছে ৬৬তম অবস্থানে, যা অবশ্যই আশাব্যঞ্জক।
এই ব্লগে আপনি জানতে পারবেন কেন অ্যান্ডোরা বিশ্বের শীর্ষে পৌঁছেছে, কোন কোন দেশ শীর্ষ দশে রয়েছে, এবং নিরাপত্তার মাপকাঠিতে ভারত কেমন করছে। বিশেষত, আপনি অবাক হবেন জেনে যে ভারত আমেরিকা ও ব্রিটেনের মতো উন্নত দেশগুলোর চেয়েও এগিয়ে রয়েছে!
অ্যান্ডোরা: পৃথিবীর সব চেয়ে নিরাপদ দেশের নতুন চ্যাম্পিয়ন
পিরেনিস পর্বতমালায় ফ্রান্স ও স্পেনের মাঝে অবস্থিত অ্যান্ডোরা এবার ৮৪.৭ পয়েন্ট নিয়ে বিশ্বের শীর্ষস্থান দখল করেছে। মাত্র ৮১,০০০ জনসংখ্যার এই ছোট্ট দেশটি তার ব্যতিক্রমী নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং অত্যন্ত কম অপরাধের হারের জন্য বিখ্যাত।
অ্যান্ডোরার সাফল্যের পেছনে রয়েছে কয়েকটি মূল কারণ:
- অত্যন্ত শক্তিশালী আইন প্রয়োগকারী ব্যবস্থা
- স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ
- উচ্চ জীবনযাত্রার মান
- কমিউনিটি-ভিত্তিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা
শীর্ষ পাঁচ নিরাপদ দেশের তালিকা
২০২৫ সালের Numbeo Safety Index অনুযায়ী পৃথিবীর সব চেয়ে নিরাপদ দেশগুলোর তালিকা দেখুন:
র্যাঙ্ক | দেশ | নিরাপত্তা স্কোর |
---|---|---|
১ম | অ্যান্ডোরা | ৮৪.৭ |
২য় | সংযুক্ত আরব আমিরাত | ৮৪.৫ |
৩য় | কাতার | ৮৪.২ |
৪র্থ | তাইওয়ান | ৮২.৯ |
৫ম | ওমান | ৮১.৭ |
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর উত্থান
চোখে পড়ার মতো বিষয় হলো মধ্যপ্রাচ্যের তিনটি দেশ – সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার এবং ওমান – শীর্ষ পাঁচে জায়গা করে নিয়েছে। এই দেশগুলো বিগত কয়েক বছরে তাদের নিরাপত্তা অবকাঠামো, শহুরে পরিকল্পনা এবং আইন প্রয়োগে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে।
এশিয়ার প্রতিনিধিত্ব
শীর্ষ দশে রয়েছে আরও কয়েকটি এশিয়ার দেশ:
- তাইওয়ান (৪র্থ স্থান)
- হংকং (৭ম স্থান, ৭৮.৫ স্কোর)
- সিঙ্গাপুর (৯ম স্থান, ৭৭.৪ স্কোর)
- জাপান (১০ম স্থান, ৭৭.১ স্কোর)
নিরাপত্তা সূচকে ভারতের অবস্থান এবং দক্ষিণ এশিয়ার চিত্র
পৃথিবীর সব চেয়ে নিরাপদ দেশের তালিকায় ভারত রয়েছে ৬৬তম স্থানে, যার নিরাপত্তা স্কোর ৫৫.৭। যদিও এই অবস্থান খুব বেশি উঁচুতে নয়, তবে এটি অবশ্যই একটি ইতিবাচক দিক যে ভারত কয়েকটি পশ্চিমা উন্নত দেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের তুলনামূলক অবস্থান
দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে দেখলে ভারতের অবস্থান:
- চীন: ১৫তম (৭৬.০ স্কোর)
- শ্রীলঙ্কা: ৫৯তম (৫৭.৯ স্কোর)
- পাকিস্তান: ৬৫তম (৫৬.৩ স্কোর)
- ভারত: ৬৬তম (৫৫.৭ স্কোর)
- বাংলাদেশ: ১২৬তম (৩৮.৪ স্কোর)
পশ্চিমা দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে ভারত
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো ভারত আমেরিকা এবং ব্রিটেনের মতো ঐতিহ্যগতভাবে নিরাপদ হিসেবে পরিচিত দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে রয়েছে:
- ভারত: ৬৬তম (৫৫.৭ স্কোর)
- ব্রিটেন: ৮৭তম (৫১.৭ স্কোর)
- আমেরিকা: ৮৯তম (৫০.৮ স্কোর)
এই ফলাফল ইঙ্গিত করে যে ভারতে শহুরে নিরাপত্তা, কমিউনিটি পুলিশিং এবং ডিজিটাল নজরদারি ব্যবস্থার উন্নতি ঘটছে।
নিরাপদ দেশগুলোর সাধারণ বৈশিষ্ট্য কী কী?
পৃথিবীর সব চেয়ে নিরাপদ দেশগুলোর মধ্যে কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়:
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা
- শক্তিশালী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান
- কার্যকর আইনি কাঠামো
- দুর্নীতির কম মাত্রা
সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নতি
- উচ্চ জিডিপি প্রতি ব্যক্তি
- কার্যকর সমাজকল্যাণ ব্যবস্থা
- উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা
- উন্নত স্বাস্থ্যসেবা
নিরাপত্তা অবকাঠামো
- কার্যকর পুলিশ ব্যবস্থা
- কঠোর অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন
- আধুনিক নজরদারি প্রযুক্তি
- শক্তিশালী সাইবার নিরাপত্তা
বিশ্বের সবচেয়ে অনিরাপদ দেশগুলো
অন্যদিকে, ২০২৫ সালের তালিকায় সবচেয়ে অনিরাপদ দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- ভেনেজুয়েলা (১৯.৩ স্কোর)
- পাপুয়া নিউ গিনি (১৯.৭ স্কোর)
- হাইতি (২১.১ স্কোর)
- আফগানিস্তান (২৪.৯ স্কোর)
- দক্ষিণ আফ্রিকা (২৫.৩ স্কোর)
ভারতের নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা
পৃথিবীর সব চেয়ে নিরাপদ দেশের তালিকায় ভারতের অবস্থান আরও উন্নতি করার বেশ কয়েকটি সুযোগ রয়েছে:
ডিজিটাল উদ্যোগ
- স্মার্ট সিটি প্রকল্প
- ডিজিটাল ইন্ডিয়া উদ্যোগ
- আধুনিক নজরদারি ব্যবস্থা
আইন প্রয়োগ
- পুলিশ সংস্কার
- দ্রুত বিচার ব্যবস্থা
- কমিউনিটি পুলিশিং
সামাজিক উন্নয়ন
- শিক্ষার হার বৃদ্ধি
- দারিদ্র্য বিমোচন
- মহিলা নিরাপত্তা
Numbeo Safety Index কীভাবে কাজ করে?
Numbeo Safety Index একটি বৈশ্বিক ডাটাবেস যা ব্যবহারকারীদের প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি হয়। এই সূচকে বিবেচনা করা হয়:
- অপরাধের অনুভূতি
- ব্যক্তিগত নিরাপত্তার উপলব্ধি
- সহিংস অপরাধের ভয়
- সম্পত্তি অপরাধের চিন্তা
- পুলিশের প্রতি আস্থা
২০২৫ সালের নিরাপত্তা সূচক আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয় – পৃথিবীর সব চেয়ে নিরাপদ দেশের তকমা পেতে শুধু অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি যথেষ্ট নয়, চাই সামাজিক সংহতি, কার্যকর আইন প্রয়োগ এবং জনগণের আস্থা। অ্যান্ডোরার মতো ছোট দেশের সাফল্য এবং ভারতের আমেরিকা-ব্রিটেনের চেয়ে এগিয়ে থাকা প্রমাণ করে যে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে।
ভারতের জন্য এই অবস্থান একটি ইতিবাচক সংকেত, যদিও আরও উন্নতির অবকাশ রয়েছে। আশা করা যায় যে, উন্নত প্রযুক্তি, কার্যকর আইন প্রয়োগ এবং সামাজিক সংহতির মাধ্যমে ভারত আগামী বছরগুলোতে এই তালিকায় আরও উপরে উঠে আসবে।এই বিষয়ে আপনার কী মতামত? মন্তব্যে জানান এবং এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন।