Hydration technologies in skincare: কোরিয়ানদের মতো কাঁচের মতো ত্বক পেতে কে না চায়? সৌন্দর্য এবং ত্বকের যত্নের জগতে কোরিয়ান প্রসাধনী বা K-Beauty এখন একটি পরিচিত নাম। শুধু এশিয়া নয়, পশ্চিমা দেশগুলোতেও কোরিয়ান প্রসাধনীর চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু এই রূপচর্চার রহস্যটা কী?K-Beauty শুধু একটি ট্রেন্ড নয়, এটি একটি দর্শন। কোরিয়ানরা মনে করেন, ত্বককে ভেতর থেকে সুন্দর রাখতে হয়। তাই তারা ত্বককে পরিষ্কার রাখা, ময়েশ্চারাইজ করা এবং সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা করার ওপর বেশি জোর দেন।
কোরিয়ান রূপচর্চার ইতিহাস
কোরিয়ান রূপচর্চার ইতিহাস বেশ পুরোনো। ১৯ শতকের শেষ দিকে কোরিয়ার মেকআপ এবং প্রসাধন সামগ্রীর জনপ্রিয়তা বাড়তে শুরু করে। তবে ১৯২০ সালের দিকে জাপানের প্রসাধন সামগ্রী কোরিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করে। ১৯৫০ সালে জাপানের সঙ্গে যুদ্ধের কারণে জাপানি প্রসাধনশিল্পের প্রসার বাধা পায়। ১৯৬১ সালের দিকে বিদেশি পণ্য কেনাবেচার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলে কোরিয়ার প্রসাধনী পণ্য জনপ্রিয় হতে শুরু করে।
কোরিয়ান থ্রিলার মুভির টপ ৫: নেটফ্লিক্স ও প্রাইমে দেখার জন্য সেরা ভয়ঙ্কর ছবি
কোরিয়ানদের কাঁচের মতো ত্বকের রহস্য
কোরিয়ানদের কাঁচের মতো ত্বকের রহস্য লুকিয়ে আছে তাদের জীবনযাপন এবং রূপচর্চার অভ্যাসের মধ্যে।
- ত্বকের যত্নে সচেতনতা: কোরিয়ানরা ত্বক নিয়ে খুবই সচেতন। তারা মনে করেন, ত্বককে ভালোবাসলে এবং এর যত্ন নিলে অনেক সমস্যা এমনিতেই দূর হয়ে যায়।
- প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার: কোরিয়ান রূপচর্চায় প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার বেশি। ক্যামেলিয়া ফুল, মুগডাল, চাল, অ্যালোভেরা, জিনসেং এবং আরও অনেক প্রাকৃতিক উপাদান তারা ব্যবহার করেন
- নিয়মিত রূপচর্চা: কোরিয়ান রূপচর্চায় সাধারণত ১০টি ধাপ অনুসরণ করা হয়। এই ধাপগুলো কয়েক মিনিটের মধ্যেই করা সম্ভব, তবে নিয়মিত করতে হয়।
- আর্দ্রতার গুরুত্ব: কোরিয়ানরা মনে করেন, ত্বকে আর্দ্রতা ধরে রাখা খুবই জরুরি। তাই তারা ত্বককে হাইড্রেটেড রাখার জন্য সবসময় চেষ্টা করেন ।
কোরিয়ান রূপচর্চার ১০টি ধাপ
কোরিয়ান রূপচর্চায় সাধারণত ১০টি ধাপ অনুসরণ করা হয়। নিচে এই ধাপগুলো আলোচনা করা হলো:
- তেল-ভিত্তিক ক্লিনজার: এই ক্লিনজার ত্বকের তেল এবং মেকআপ দূর করতে সাহায্য করে1।
- জল-ভিত্তিক ক্লিনজার: এটি ত্বকের ভেতরের ময়লা পরিষ্কার করে
- এক্সফোলিয়েটর: ত্বকের মৃত কোষ দূর করে ত্বককে মসৃণ করে।
- টোনার: ত্বকের pH-এর মাত্রা ঠিক রাখে এবং ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে ।
- এসেন্স: এটি ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে পুষ্টি যোগায়।
- সিরাম: ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন ব্রণ, দাগ এবং বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে ।
- মাস্ক: শিট মাস্ক ব্যবহার করে ত্বককে তাৎক্ষণিকভাবে হাইড্রেট করা যায়।
- চোখের ক্রিম: চোখের চারপাশের ত্বককে ময়েশ্চারাইজ এবং রক্ষা করে।
- ময়েশ্চারাইজার: এটি ত্বককে নরম এবং মসৃণ রাখে ।
- এসপিএফ: দিনের বেলায় সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করে।
এই ১০টি ধাপের মধ্যে কিছু ধাপ প্রতিদিন করা যায়, আবার কিছু ধাপ সপ্তাহে কয়েকবার করলেই যথেষ্ট।
কোরিয়ান প্রসাধনীর জনপ্রিয়তার কারণ
কোরিয়ান প্রসাধনীর জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। এর কিছু কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো:
- সাশ্রয়ী মূল্য: পশ্চিমা ব্র্যান্ডের তুলনায় কোরিয়ান প্রসাধনীর দাম সাধারণত কম হয়ে থাকে।
- কার্যকর উপাদান: কোরিয়ান প্রসাধনীতে ব্যবহৃত উপাদানগুলো ত্বকের জন্য খুবই উপকারী।
- নতুনত্ব: কোরিয়ান ব্র্যান্ডগুলো সবসময় নতুন নতুন পণ্য এবং উপাদান নিয়ে কাজ করে।
- প্যাকেজিং: কোরিয়ান প্রসাধনীর প্যাকেজিং খুবই আকর্ষণীয় হয়ে থাকে।
- K-Pop এবং K-Drama: কোরিয়ান পপ সংস্কৃতি এবং নাটকগুলোর কারণেও কোরিয়ান প্রসাধনী বিশ্বজুড়ে পরিচিতি লাভ করেছে.
কেয়া কসমেটিকসের পতন
একটা সময় ছিল যখন কেয়া কসমেটিকস বাংলাদেশের বাজারে খুব জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু বর্তমানে এই ব্র্যান্ডের জনপ্রিয়তা কমে গেছে। এর কিছু কারণ হলো:
- বিজ্ঞাপনে দুর্বলতা: কেয়া কসমেটিকস এখন আর তেমন বিজ্ঞাপন দেয় না।
- অন্য ব্যবসায় মনোযোগ: কসমেটিকসের ব্যবসা থেকে সরে গিয়ে গার্মেন্টস ব্যবসায় মনোযোগ দেওয়ায় কেয়ার মূল ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
- ঋণ: বিভিন্ন কারণে কেয়া কসমেটিকস অনেক ঋণে জর্জরিত।
কোরিয়ান রূপচর্চার কিছু ঘরোয়া টিপস
কোরিয়ানদের মতো ত্বক পেতে কিছু ঘরোয়া উপায়ও অবলম্বন করা যেতে পারে:
- চালের জল: চাল ধোয়া জল দিয়ে মুখ ধুলে ত্বক উজ্জ্বল হয়।
- মধু এবং চিনি: মধু এবং চিনি মিশিয়ে স্ক্রাব তৈরি করে ব্যবহার করলে ত্বক মসৃণ হয়।
- অ্যালোভেরা এবং চিয়া সিড: এই দুটি উপাদান মিশিয়ে মাস্ক তৈরি করে লাগালে ত্বক নরম এবং উজ্জ্বল হয়।
- গ্রিন টি: গ্রিন টি স্ক্রাব এবং মাস্ক ব্যবহার করে ত্বকের মৃত কোষ দূর করা যায়।
কোরিয়ান রূপচর্চা বনাম জাপানি রূপচর্চা
রূপচর্চার জগতে কোরিয়ান এবং জাপানি প্রসাধনীর বেশ সুনাম রয়েছে। তবে এই দুই ধরনের রূপচর্চার মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে:
বৈশিষ্ট্য | কোরিয়ান রূপচর্চা | জাপানি রূপচর্চা |
---|---|---|
মনোযোগ | ত্বককে হাইড্রেটেড এবং উজ্জ্বল রাখা | ত্বককে পরিষ্কার এবং রক্ষা করা |
ধাপ | সাধারণত ১০টি বা তার বেশি ধাপ থাকে | সাধারণত কম ধাপ থাকে |
উপাদান | প্রাকৃতিক এবং উদ্ভাবনী উপাদান ব্যবহার করা হয় | ঐতিহ্যবাহী উপাদানের ওপর বেশি জোর দেওয়া হয় |
দর্শন | ত্বককে ভেতর থেকে সুন্দর করা | ত্বককে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচানো |
কোরিয়ান সৌন্দর্যের মান
কোরিয়ানদের মধ্যে ফর্সা ত্বক, ছোট মুখ, ভি আকৃতির চিবুক এবং বড় চোখের চাহিদা বেশি। তবে এই ধরনের সৌন্দর্য অনেক সময় চাপ সৃষ্টি করে, এবং #Escape the Corset আন্দোলনের মাধ্যমে এই ধরনের সৌন্দর্য্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা হচ্ছে।
ত্বক ফর্সা করার জাদুকরী ফল: বিজ্ঞান প্রমাণিত ১০টি skin whitening ফলের তালিকা
কোরিয়ান প্রসাধনীর ভবিষ্যৎ
কোরিয়ান প্রসাধনী বা কে-বিউটির ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল। বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাপানের মতো দেশেও কোরিয়ান প্রসাধনীর চাহিদা বাড়ছে।আশা করা যায়, K-Beauty ভবিষ্যতে আরও নতুন এবং উদ্ভাবনী পণ্য নিয়ে বিশ্ব বাজারে নিজেদের স্থান আরও দৃঢ় করবে।