স্টাফ রিপোর্টার
২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:০৬ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন সংস্করণ

যজ্ঞ ও হোমে ‘স্বাহা’ উচ্চারণের তাৎপর্য: গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য

Significance of Swaha in yajna: হিন্দু ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যজ্ঞ ও হোম একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই অনুষ্ঠানের সময় প্রতিটি আহুতি দেওয়ার সময় ‘স্বাহা’ শব্দটি উচ্চারণ করা হয়। কিন্তু কেন এই শব্দটি এত গুরুত্বপূর্ণ? আসুন জেনে নেওয়া যাক এর পিছনের কারণ ও তাৎপর্য।

‘স্বাহা’ শব্দের অর্থ ও উৎপত্তি

‘স্বাহা’ শব্দটি সংস্কৃত ভাষা থেকে এসেছে। এর শাব্দিক অর্থ হল “সঠিকভাবে পৌঁছে দেওয়া”। এই শব্দটি দুটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত:

  • ‘সু’ – যার অর্থ ভালো বা উত্তম
  • ‘আহা’ – যার অর্থ বলা বা আহ্বান করা

সুতরাং ‘স্বাহা’র সম্মিলিত অর্থ দাঁড়ায় “উত্তমভাবে আহ্বান করা”।

The Mystery of AM-PM: এর রহস্য উন্মোচন, কিভাবে ঠিক হলো, সাথে আরও কিছু অজা

পৌরাণিক কাহিনী

হিন্দু পুরাণে ‘স্বাহা’ সম্পর্কে বেশ কয়েকটি কাহিনী পাওয়া যায়:

  1. একটি কাহিনী অনুযায়ী, স্বাহা ছিলেন দক্ষ প্রজাপতির কন্যা এবং অগ্নিদেবের পত্নী।
  2. অন্য একটি কাহিনীতে বলা হয়, স্বাহা ছিলেন প্রকৃতির এক শক্তি যার সাথে অগ্নিদেবের বিবাহ হয়েছিল দেবতাদের অনুরোধে।
  3. আরেকটি কাহিনী অনুসারে, একবার দেবতারা খাদ্যাভাবে কষ্ট পাচ্ছিলেন। তখন ব্রহ্মা স্বাহাকে অগ্নিদেবের সাথে বিবাহ করতে বলেন যাতে দেবতারা যজ্ঞের মাধ্যমে খাদ্য পেতে পারেন।

যজ্ঞে ‘স্বাহা’ উচ্চারণের গুরুত্ব

যজ্ঞে ‘স্বাহা’ উচ্চারণের পিছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে:

  1. দৈব আশীর্বাদ আহ্বান: ‘স্বাহা’ উচ্চারণ করা হয় দৈব আশীর্বাদ ও ইতিবাচক শক্তি আহ্বান করার জন্য।
  2. আহুতি সম্পূর্ণতা: বৈদিক ঐতিহ্যে বিশ্বাস করা হয় যে ‘স্বাহা’ না বলে কোনো আহুতি সম্পূর্ণ হয় না।
  3. অগ্নিদেবের স্বীকৃতি: বিশ্বাস করা হয় যে ‘স্বাহা’ উচ্চারণ না করলে অগ্নিদেব আহুতি গ্রহণ করেন না।
  4. দেবতাদের কাছে পৌঁছানো: ‘স্বাহা’ উচ্চারণের মাধ্যমে আহুতি দেবতাদের কাছে পৌঁছে যায় বলে মনে করা হয়।
  5. আধ্যাত্মিক শুদ্ধি: এটি যজ্ঞকর্তার মনকে শুদ্ধ করে এবং আধ্যাত্মিক উন্নতিতে সাহায্য করে।

‘স্বাহা’ উচ্চারণের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা

আধুনিক বিজ্ঞান ‘স্বাহা’ উচ্চারণের পিছনে কিছু যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিয়েছে:

  1. ধ্বনি তরঙ্গের প্রভাব: ‘স্বাহা’ উচ্চারণের সময় যে ধ্বনি তরঙ্গ সৃষ্টি হয় তা পরিবেশে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
  2. মানসিক একাগ্রতা: এই শব্দ উচ্চারণ করার সময় মন একাগ্র হয় যা যজ্ঞের ফলাফল বৃদ্ধি করে।
  3. শ্বাস নিয়ন্ত্রণ: ‘স্বাহা’ উচ্চারণের সময় শ্বাস নিয়ন্ত্রিত হয় যা শরীরের জন্য উপকারী।
  4. হরমোন নিঃসরণ: এই ধরনের উচ্চারণ শরীরে ইতিবাচক হরমোন নিঃসরণে সাহায্য করে।

যজ্ঞে ‘স্বাহা’ উচ্চারণের পদ্ধতি

যজ্ঞে ‘স্বাহা’ উচ্চারণের একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে:

  1. প্রথমে মন্ত্র উচ্চারণ করতে হয়।
  2. তারপর আহুতি দেওয়ার সময় ‘স্বাহা’ বলতে হয়।
  3. ‘স্বাহা’ বলার সময় আহুতি অগ্নিতে অর্পণ করতে হয়।
  4. প্রতিটি আহুতির জন্য এই প্রক্রিয়া পুনরাবৃত্তি করতে হয়।

বিভিন্ন প্রকার যজ্ঞে ‘স্বাহা’র ব্যবহার

বিভিন্ন ধরনের যজ্ঞে ‘স্বাহা’র ব্যবহার ভিন্ন হতে পারে:

যজ্ঞের প্রকার ‘স্বাহা’ উচ্চারণের পদ্ধতি
অগ্নিহোত্র প্রতিটি আহুতিতে একবার
গায়ত্রী যজ্ঞ মন্ত্রের শেষে একবার
রুদ্র যজ্ঞ প্রতি ১০৮ আহুতিতে একবার
সোম যজ্ঞ বিশেষ মন্ত্রের সাথে তিনবার

‘স্বাহা’ উচ্চারণের সুফল

‘স্বাহা’ উচ্চারণের অনেক সুফল রয়েছে বলে বিশ্বাস করা হয়:

  1. মানসিক শান্তি লাভ
  2. নেতিবাচক শক্তি দূরীকরণ
  3. আধ্যাত্মিক উন্নতি
  4. মনোবাঞ্ছা পূরণ
  5. পরিবেশ শুদ্ধিকরণ
  6. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
  7. সামাজিক সম্প্রীতি বৃদ্ধি

‘স্বাহা’ উচ্চারণের সময় সতর্কতা

‘স্বাহা’ উচ্চারণের সময় কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন:

  1. শুদ্ধ উচ্চারণ: শব্দটি সঠিকভাবে উচ্চারণ করা জরুরি।
  2. মনোযোগ: উচ্চারণের সময় পূর্ণ মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।
  3. ভক্তিভাব: শুধু যান্ত্রিকভাবে নয়, ভক্তিভাবে উচ্চারণ করতে হবে।
  4. সময় নির্বাচন: শুভ মুহূর্তে যজ্ঞ ও ‘স্বাহা’ উচ্চারণ করা উচিত।
  5. পবিত্রতা: শারীরিক ও মানসিক পবিত্রতা বজায় রাখা প্রয়োজন।

    ব দিয়ে হিন্দু ছেলেদের আধুনিক নাম: একটি বিস্তৃত গাইড

‘স্বাহা’ সম্পর্কিত কিছু তথ্য

  1. ‘স্বাহা’ শব্দটি ঋগ্বেদে ৭২ বার উল্লেখ করা হয়েছে।
  2. হিন্দু ধর্মে ‘স্বাহা’কে অগ্নিদেবের শক্তি হিসেবে কল্পনা করা হয়।
  3. জৈন ধর্মেও যজ্ঞে ‘স্বাহা’ উচ্চারণ করা হয়।
  4. বৌদ্ধ ধর্মের কিছু শাখায় ‘স্বাহা’ মন্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
  5. আয়ুর্বেদে ‘স্বাহা’ উচ্চারণকে চিকিৎসার একটি পদ্ধতি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।

‘স্বাহা’ শব্দটি হিন্দু ধর্মীয় অনুষ্ঠানে একটি অপরিহার্য অংশ। এর মাধ্যমে যজ্ঞকর্তা দেবতাদের কাছে তার আকাঙ্ক্ষা পৌঁছে দেন এবং দৈবী আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন। এটি শুধু একটি ধর্মীয় রীতি নয়, বরং এর পিছনে রয়েছে গভীর আধ্যাত্মিক ও দার্শনিক তাৎপর্য। আধুনিক বিজ্ঞানও এর কিছু সুফল স্বীকার করেছে। তাই, যজ্ঞ ও হোমে ‘স্বাহা’ উচ্চারণ একটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ অনুশীলন যা হাজার বছর ধরে চলে আসছে এবং ভবিষ্যতেও চলতে থাকবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ধর্মের পথে গীতার আলো: জীবনবোধের অমৃত বাণী

ইলেকট্রিক গাড়ির চার্জ নিয়ে দুশ্চিন্তার দিন শেষ! ব্রিটিশ ফার্মের সঙ্গে হাত মেলাতে চলেছে CESC

রাজনীতির মাঠ থেকে ওটিটি পর্দায়: সিপিএম নেত্রী দীপ্সিতা ধর এখন ‘জিদ্দি গার্লস’-এর বিদ্রোহী চরিত্রে!

ভারতে খুচরা মুদ্রাস্ফীতি ৩.৬১ শতাংশে নেমেছে: সবজির দাম কমায় জনগণের স্বস্তি

রেশন কার্ডে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট যুক্ত করার প্রস্তাব: কেন্দ্রের পথে রাজ্যের সমর্থন!

আইপিএলের ছক্কার রাজা কে? টুর্নামেন্ট শুরুর আগে দেখে নিন শীর্ষ দশের তালিকা

মাহমুদউল্লাহর ক্রিকেট যাত্রার ইতি: আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিদায়ের ঘোষণা

অষ্টম বেতন কমিশন: সরকারি কর্মচারীদের জন্য সাত বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম ডিএ বৃদ্ধির সম্ভাবনা, হতাশার ছায়া!

ভারতের মাটিতে গোয়েন্দা বিশ্বের মহাজমায়েত: দোভালের নেতৃত্বে দিল্লিতে বৈঠক!

আলো কম? WhatsApp ভিডিও কলে যা করবেন, চমকে যাবেন!

১০

রবিবার থেকে চার জেলায় তাপপ্রবাহের দাপট, কবে মিলবে স্বস্তি

১১

বিশ্ব মঞ্চে ভারতের শিক্ষার জয়যাত্রা: বাংলার প্রতিষ্ঠান কোথায় দাঁড়িয়ে?

১২

ফেসবুক পোস্ট লুকান: নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে রাখার কৌশল!

১৩

চন্দননগরে ফরাসি শাসনমুক্তির ৭৫ বছর: হেরিটেজ রিসার্চ সেন্টারের যাত্রা শুরু

১৪

জিমেইলে ই-মেইল শিডিউল: গোপন ট্রিকটি জেনে নিন!

১৫

৫০ টি দোলের শুভেচ্ছা, প্রিয়জনের সাথে উৎসব আরো রঙিন হোক

১৬

স্মার্টফোন থেকে অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ সরাবেন যেভাবে

১৭

ওভার থিংকিং ধরা পরে যে সাতটি আচরণে

১৮

ইউনুসের ‘নতুন’ বাংলাদেশে ধর্ষণের ঊর্ধ্বগতি: রাজপথে প্রতিবাদের ঝড় ছাত্রদের

১৯

ভারতে ইন্টারনেট বিপ্লবের নতুন দিগন্ত: স্টারলিঙ্কের সঙ্গে এয়ারটেলের ঐতিহাসিক চুক্তি

২০
close